আইসিসি প্লেয়ার অব দা মান্থ
Published : 05 May 2025, 04:49 PM
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সিরিজ সেরার পুরস্কার জয়ী মেহেদী হাসান মিরাজের সামনে আরেকটি স্বীকৃতি অর্জনের হাতছানি। প্রথমবারের মতো আইসিসি প্লেয়ার অব দা মান্থের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছেন তিনি। এপ্রিল মাসের সেরার লড়াইয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী জিম্বাবুয়ের ব্লেসিং মুজারাবানি ও নিউ জিল্যান্ডের বেন সিয়ার্স।
গত মাসের সেরার লড়াইয়ে মনোনয়ন পাওয়া পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারদের নাম সোমবার প্রকাশ করে আইসিসি। মেয়েদের সংক্ষিপ্ত তালিকার তিন জন হলেন- ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেইলি ম্যাথিউস, স্কটল্যান্ডের ক্যাথরিন ব্রাইস ও পাকিস্তানের ফাতিমা সানা।
মেহেদী হাসান মিরাজ
সিলেটে প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে হারলেও রেকর্ড গড়া বোলিং করেন মিরাজ। প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংসে শেষের ৫ উইকেট একাই নেন তিনি। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে আঘাত হানেন টপ অর্ডারে, চমৎকার বোলিংয়ে সেবারও তার শিকার ৫ উইকেট।
তৃতীয়বার এক টেস্টে অন্তত ১০ উইকেট পান অভিজ্ঞ অফ স্পিনার। দেশের আর কারও নেই এই কীর্তি। বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচে দুবার করে ১০ উইকেট নিতে পেরেছেন দুই বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম।
চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংস ও ১০৬ রানের জয়ের নায়ক মিরাজ। ১০৪ রানের ইনিংস খেলে দলকে লিড এনে দেন তিনি। পরে প্রতিপক্ষের দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৫ উইকেট। দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্সে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নেওয়া বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার তিনি। তার আগে এই কীর্তি ছিল সাকিব আল হাসান (দুই বার) ও সোহাগ গাজীর। আর একই সিরিজে এক ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার ও এক ইনিংসে সেঞ্চুরি করা টেস্ট ইতিহাসের সপ্তম ক্রিকেটার তিনি।
ব্লেসিং মুজারাবানি
চার বছর পর দেশের বাইরে জিম্বাবুয়ের টেস্ট জয়ে বড় অবদান রাখেন মুজারাবানি। সিলেটে প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেওয়া পেসার দ্বিতীয়ভাগে ধরেন ৬ শিকার। ওই ম্যাচে সেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতে।
সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে অবশ্য তেমন কিছু করতে পারেননি মুজারাবানি। বল হাতে একমাত্র ইনিংসে ওভারপ্রতি প্রায় সোয়া তিন করে দেন ৮৩ রান। উইকেট নিতে পারেন কেবল একটি।
বেন সিয়ার্স
পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পুরস্কার হিসেবে মাস সেরার লড়াইয়ে জায়গা পেয়েছেন সিয়ার্স। তিন ম্যাচের ওই সিরিজে শেষ দুই ওয়ানডে খেলে ৯.৩০ গড় ও ওভারপ্রতি ৫.০৭ রান দিয়ে ১০ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার।
হ্যামিল্টনে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫৯ রান খরচায় ৫ শিকার ধরেন সিয়ার্স। ম্যাচটি ৮৪ রানে জেতে কিউইরা। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে শেষ ম্যাচে ৩৪ রান দিয়ে আবারও পাঁচ উইকেট তিনি। ম্যাচটি ৪৩ রানে জিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে নিউ জিল্যান্ড।
দুই ম্যাচ ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হওয়া সিয়ার্স রেকর্ডের পাতায়ও নাম লেখান। নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে টানা দুই ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন তিনি।
হেইলি ম্যাথিউস
উইমেন’স বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ব্যাট ও বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্সে মাস সেরার লড়াইয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ম্যাথিউস। ১১৬.৫০ স্ট্রাইক রেট ও ৬০ গড়ে ২৪০ রান করেছেন তিনি। আর অফ স্পিনে নিয়েছেন ১৫.৮৪ গড়ে ১৩ উইকেট।
আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ম্যাথিউস এবং বল হাতে ৫৬ রান দিয়ে ধরেন ৪ শিকার। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও ৪ উইকেট নেন তিনি।
শেষ ম্যাচে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ১০.১ ওভারে ১৬৭ রান তাড়ায় ২৯ বলে ৭০ রানের খুনে ইনিংস খেলেন ম্যাথিউস। ম্যাচটি জিতলেও রান রেটের সামান্য ব্যবধানে বিশ্বকাপের টিকেট পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুইয়ে থেকে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ।
ফাতিমা সানা
বাছাইয়ে সব ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের টিকেট পায় পাকিস্তান, আর দলটির এই সাফল্যে বড় অবদান রাখেন ফাতিমা সানা। পেস বোলিংয়ে আসরে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১২ উইকেট নেন তিনি, ওভারপ্রতি ৩.৯৭ রান দিয়ে।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩ রান খরচায় ৪ শিকার ধরেন পাকিস্তান অধিনায়ক। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও থাইল্যান্ডের বিপক্ষে নেন তিনটি করে উইকেট। বাংলাদেশ ম্যাচে তার প্রাপ্তি দুটি।
ব্যাট হাতে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৬২ রানের ইনিংস খেলেন ফাতিমা সানা। বাকি চার ইনিংসের একটিতে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি তার। অন্য তিনটিতে অবশ্য একবারও করতে পারেননি ২০ রান।
ক্যাথরিন ব্রাইস
বিশ্বকাপের বাছাইয়ে স্কটল্যান্ডকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ব্রাইস। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯১ রানের ইনিংসের পর থাইল্যান্ডের বিপক্ষে করেন ৬০ রান। আসরে নিজেদের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে উপহার দেন ১৩১ রানের অপরাজিত ইনিংস।
সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টে ৫ ম্যাচে ৭৩.২৫ গড়ে ২৯৩ রান করেন ব্রাইস, যা আসরে সর্বোচ্চ।
পেস বোলিংয়েও দারুণ অবদান রাখেন ব্রাইস। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটিসহ আসরে মোট ৬ উইকেট নেন তিনি।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বাছাইপর্বের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ব্রাইস।
মেয়েদের মাস সেরার সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পাওয়া তিনজনই আছেন উইমেন’স বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের সেরা একাদশে।
আইসিসির ভোটিং একাডেমি ও ক্রিকেট সমর্থকদের যৌথ ভোটে নির্বাচন করা হয় মাসের সেরা দুই ক্রিকেটার। ভোটিং একাডেমিতে আছেন জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক, সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকাররা। তারা ভোট দেন ই-মেইলে, আইসিসির নিবন্ধিত সমর্থকদের ভোট দিতে হয় আইসিসির ওয়েবসাইটে।
সেরার রায়ে ভোটিং একাডেমির ভোট বিবেচনায় নেওয়া হয় শতকরা ৯০ ভাগ, সমর্থকদের ভোট বাকি ১০ ভাগ।