Published : 05 May 2025, 10:13 PM
গরমের মধ্যে সাভারের আশুলিয়া অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এতে বাসিন্দারা যেমন ভোগান্তিতে পড়েছেন, তেমনি শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।
কবিরপুর এলাকার তোহা টেক্সটাইল লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক শামীম সাখাওয়াত সোমবার বিকালে বলেন, “এখন লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আজ চারবার বিদ্যুৎ গেছে। যখন যায় তখন এক থেকে দেড় ঘণ্টা থাকে না। গতকাল রোববার পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল।”
প্রায় একই ধরনের কথা বললেন কাঁচপুর এলাকার নিডেল স্পিচ কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেন।
তিনি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মোবাইল ফোনে বলেন, “আমাদের কারখানায় দৈনিক পাঁচ থেকে ছয়বার বিদ্যুৎ যায়। এক থেকে দেড় ঘণ্টা থাকে না। কখনও কখনও আবার দুই ঘণ্টাও থাকে না। এই যেমন এখন আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি, তখন কারখানায় কোনো বিদ্যুৎ নেই।”
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গরম বাড়তে থাকার মধ্যে গত কয়েকদিন থেকে সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় বিদ্যুতের যাওয়া-আসা শুরু হয়েছে। দিনের মত রাতেও বিদ্যুৎ থাকছে না অনেক সময়।
ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) কারখানাগুলোতে পল্লী বিদ্যুৎ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর কারণেই অন্যান্য জায়গায় লোডশেডিং করা হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
বেশ কয়েক বছর ধরে ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট। তবে ২৯ এপ্রিল থেকে এ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বিদ্যুৎ দিতে পারছে না রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার কারখানাগুলোতে।
বকেয়া জটিলতায় তিতাস গ্যাস ইউনাইটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় তাদের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে ডিইপিজেডের ৯০ কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে পল্লী বিদ্যুৎ।
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক আখতারুজ্জামান লস্কর বলেন, ডিইপিজেডকে ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে কিছু গ্রাহকের লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
”আমাদের যে ঘাটতি রয়েছে তা বরাদ্দ চেয়েছি। মূল গ্রিড থেকে ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।”
আশুলিয়ার সংবাদকর্মী অপু খন্দকার বলেন, “লোডশেডিংয়ের কারণে অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, ফ্রিজে মাছ-মাংস রাখা যাচ্ছে না। ভয়াবহ লোডশেডিং। কখনও কখনও দিনে-রাতে মিলে সাত-আটবারও যায়।”
তিনি বলেন, ২৯ এপ্রিলের পর থেকে এমনটি হচ্ছে।
ডিইপিজেডের ভেতরের দুটি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে চায়নি। তারা বলেন, বেপজা কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো দেখে। তারাই এ ব্যাপারে বলতে পারবে।
এ ব্যাপারে বেপজার নির্বাহী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “বকেয়া সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকল্প হিসেবে আরইবি (পল্লী বিদ্যুৎ) থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়।”
রোব ও সোমবার তাদের সব কারখানায় উৎপাদন চালু থাকার কথা বলেন শরিফুল।
বিদ্যুতের ঘাটতি বা লোডশেডিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না, কয়েকদিন চলার পর বুঝতে পারব। আমাদের যতটুকু বিদ্যুতের চাহিদা ততটুকু আরইবি দিচ্ছে। পিক আওয়ারে আমাদের ৪৫ মেগাওয়াট দরকার আমরা তাই পাচ্ছি।”
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক আখতারুজ্জামান লস্কর বলেন, “ডিইপিজেডে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। আমরা দুই দফায় ৮০ এমভিএ (মেগা ভোল্ট অ্যাম্পিয়ার) বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছি। তাই ডিইপিজেডের সব কারখানা এখন চলমান রয়েছে।”
আরও বেশি লোডের জন্য নতুন একটি ট্রান্সফরমার লাগানোর কাজ চলমান থাকার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “ডিইপিজেডের চাহিদা ছিল ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আমরা এর পুরোটাই সরবরাহ করেছি।”
বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের বিষয়ে ২৯ এপ্রিল ডিইপিজেডে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মমতাজ হাসান বলেছিলেন, “সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেপজা ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন।”