অ্যারন জোন্স ও জর্জ মানজির ওই কৌতূহল জাগানিয়া পাঁচ ওভারের ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না সিলেট স্ট্রাইকার্সে তাদের সতীর্থ জাকের আলিও।
Published : 13 Jan 2025, 07:12 PM
জাকের আলি অকপটেই বললেন, “হ্যাঁ, আউট অব রিচ হয়ে গেছে…।” মানে, তিনি যখন ক্রিজে যান, লক্ষ্য তখন প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে ২০৪ রানের লক্ষ্য তো হরহামেশাই টপকে যেতে দেখা যায়। এবারের বিপিএলে রানের জোয়ারও বইছে। তার পরও কেন ওই লক্ষ্য নাগালের বাইরে?
যারা খেলা দেখেছেন, তাদের কারণটা বোঝার কথা। খেলা না দেখে থাকলে অনলাইনে ‘বল বাই বল’ স্কোরে চোখ রাখলেও উপলব্ধি করার কথা। জাকের ক্রিজে যান একাদশ ওভারে। আগের পাঁচ ওভারে যা হয়েছে, তাতেই লক্ষ্যটা চলে যায় নাগালের বাইরে।
বিপিএলে সোমবার সিলেটে চিটাগং কিংসের বিপক্ষে সিলেট স্ট্রাইকার্সের লক্ষ্য ছিল ২০৪। রান তাড়ায় পল স্টার্লিং আউট হন ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই। আরেক ওপেনার রনি তালুকদার ফেরেন ৯ বলে ৭ রান করে।
তিনে নামা জাকির হাসানের সৌজন্যে পাওয়ার প্লেতে তবু ৪৬ রান তুলতে পারে সিলেট। ১৯ বলে ২৫ করে আউট হন জাকির।
সপ্তম থেকে একাদশ, এই সময়টার ব্যাটিং ঘিরেই যত কৌতূহল, প্রশ্ন, বিস্ময়। আগ্রাসী দুই ব্যাটসম্যান অ্যারন জোন্স ও জর্জ মানজি তখন ছিলেন ক্রিজে। টুর্নামেন্টে আগের ম্যাচগুলোয় ক্যামিও ইনিংসও খেলেছেন জোন্স। কিন্তু চরম অবাক করে দিয়ে নিস্তরঙ্গ হয়ে রইল দুজনের ব্যাট।
ওই পাঁচ ওভারে বাউন্ডারি ছিল মোটে একটি। অনিয়মিত স্পিনার শামীম হোসেনের বলে যে চারটি মারেন জোন্স। এছাড়া ওই সময়টায় তিন রান বা দুই রান আসেনি একটিও। ১৩টি ডেলিভারি থেকে কোনো রান নিতে পারেননি দুই ব্যাটসম্যান।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল সেটিই। রান নেওয়ার বা বড় শট খেলার চেষ্টা খুব একটা দেখা যায়নি দুজনের কারও মধ্যেই।
তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ‘সতর্কতায় ইনিংস গড়ার’ যুক্তি থাকতে পারে এখানে। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এসব ধ্যানধারণা অতীত হয়ে গেছে অনেক দিন আগেই। বিশেষ করে, এত ছোট সীমানায় এমন ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে দুইশর বেশি রান তাড়ায় সাবধানী ব্যাটিংয়ের যৌক্তিকতাই তেমন একটা থাকতে পারে না। কিংবা সেই সাবধানী ব্যাটিংয়ের মানে ওভারপ্রতি চার করে রান বা পাঁচ ওভারের মধ্যে কেবল একটি বাউন্ডারি হতে পারে না।
জোন্স ও মানজির ব্যাটিংকে তাই বাঁকা চোখে দেখার কারণ আছে যথেষ্টই।
জোন্স একাদশ ওভারে আউট হয়ে গেছেন ১৮ বলে ১৫ রান করে। ওই ওভার শেষে মানজির রান ছিল ১৯ বলে ১১।
সেই মানজি পরে ঠিকই নিজের আসল চেহারা দেখান। আউট হওয়ার আগের ১৪ বলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান করেন ৩৯ রান।
এরপর জাকের আলি ২৩ বলে ৪৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তার পরও ম্যাচে তেমন কোনো উত্তেজনা জাগেনি। সিলেট ম্যাচ হেরে যায় ৩০ রানে।
জাকের যখন ক্রিজে যান, ৯.৩ ওভারে সিলেটের লাগে তখন ১৪১ রান। অসম্ভরের কাছাকাছি একরকম। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেও সেটিই বললেন।
“হ্যাঁ, একটু আউট অব রিচ হয়ে গেছে। তখন তো প্রায় ১৫-তে চলে গেছে (ওভারপ্রতি প্রয়োজনীয় রান) । আসলে টপ অর্ডার থেকে আরেকটু দ্রুত খেলতে পারলে হয়তো ভালো হতো। প্রতিদিন তো টপ অর্ডাররা ভালো করছে, একটা দিন হয়তো তারা পারেনি।”
কিন্তু মূল সমস্যাটা তো টপ অর্ডারের ছিল না! চারে নামা জর্জ মানজি ও পাঁচে নামা অ্যারন জোন্স মূলত পেছন পানে টেনে ধরেন দলকে।
এখানে একমত জাকেরও।
“সেটাই… আমি আসতে আসতে মিনহাজ ভাইয়ের সঙ্গে (সিলেট স্ট্রাইকার্সের মিডিয় ম্যানেজার) কথা বলছিলাম যে, ওদের মাইন্ডে কী চলছিল, ওরাই জানে। আমরা ওটাই বলছিলাম, আলোচনা করছিলাম যে ওখানে একটু ঘাটতি হয়ে গেছে। ওই জায়গায়টায় যদি ১০-১৫ রান বেশি আসতো, তাহলে প্রায় চলেই আসছিল (নাগালে)।”
ক্রিকেট খেলাটা এমন যে, অনেক কিছুকেই ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু জোন্স ও মানজি যা করলেন, কোনো ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যায় এটিকে ফুটিতে তোলা কঠিন।