হ্যামিল্টন টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই জয়ের পথ তৈরি করে ফেলেছে নিউ জিল্যান্ড।
Published : 15 Dec 2024, 02:07 PM
সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। এখন টিম সাউদির বিদায়ী ম্যাচ রঙিন করে তুলতে পারাই বড় লক্ষ্য। সাউদি নিজে এখনও পর্যন্ত রাঙাতে পারেননি। তবে তার সতীর্থরা সেই আয়োজন অনেকটাই সেরে নিয়েছে। মিচেল স্যান্টনারের দারুণ কার্যকর এক ইনিংসের পর পেসারদের দাপুটে বোলিং, বল হাতেও স্যান্টনারের জ্বলে ওঠা আর মাইলফলকের দিনে কেন উইলিয়ামসনের অপরাজিত ফিফটি- সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দিনেই জয়ের পথ তৈরি করে ফেলেছে নিউ জিল্যান্ড।
হ্যামিল্টন টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৪০ রানে এগিয়ে নিউ জিল্যান্ড। উইকেট বাকি এখনও সাতটি। এই মাঠে ২৬৭ রানের বেশি তাড়ায় জয়ের রেকর্ড নেই।
আগের দিন শেষ সেশনেই ইংলিশ বোলারদের যথেষ্ট যন্ত্রণা দিয়েছিলেন স্যান্টনার। দ্বিতীয় দিন সকালেও সেখান থেকেই শুরু করেন তিনি। শেষ জুটিতে উইল ও’রোককে নিয়ে এ দিন আরও ৩২ রান যোগ করেন এই অলরাউন্ডার।
৫০ রানে দিন শুরু করা স্যান্টনার আউট হন ৭৪ রানে। নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ৩৪৭ রানে।
শেষ উইকেট নিয়ে একাদশে ফেরার টেস্টে চার উইকেট শিকার করেন ম্যাথু পটস।
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৪৩ রানেই।
ম্যাট হেনরি নেন চার উইকেট। তবে নিউ জিল্যান্ডের সেরা বোলার ছিলেন তিন উইকেট নেওয়া উইল ও’রোক। ৯০ মাইল গতিতে বোলিং করার পাশাপাশি মুভমেন্ট ও বাড়তি বাউন্সে ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারে ছোবল দেন তিনি। পরে তিনটি উইকেট নেন স্যান্টনার।
নিউ জিল্যান্ড রোববার দিন শেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৩৬ রান নিয়ে। ফিফটি করে আউট হন উইল ইয়াং, তবে পঞ্চাশ ছুঁয়ে অপরাজিত রয়ে যান উইলিয়ামসন।
এই ইনিংসের পথে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দেশের মাঠে ৫ হাজার রান পূর্ণ করেন তিনি।
সকালে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস হওয়ার পর ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নেমে যথারীতি আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে শুরু করে। দ্বিতীয় ওভারেই টিম সাউদিকে চারটি চার জারেন জ্যাক ক্রলি। তবে কিউই-বিভীষিকা থেকে এ দিনও বের হতে পারেননি এই ওপেনার। ১৪ বলে ৩১ রান করে ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি ম্যাট হেনরিকে।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০ ইনিংস খেলে তার গড় ১০.৭০। দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি ১৩বারই।
ওই ওভারে ক্রলির সঙ্গী বেন ডাকেটকেও এলবিডব্লিউ করে দেন হেনরি।
জ্যাকব বেথেল ও জো রুট সেই জোড়া ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে সম্ভাবনাময় জুটি ৪৪ রানে থামান ও’রোক। বেথেল বিদায় নেন ১২ রানে।
পরের বলেই আউট হয়ে যান দুর্দান্ত ফর্মে থাকা হ্যারি ব্রুক। আগের দুই টেস্টে দুই সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানের বিদায় এবার প্রথম বলেই।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে আট ইনিংস খেলে তিনটি সেঞ্চুরি ও তিনটি ফিফটি ব্রুকের। বাকি দুই ইনিংসে আউট হয়েছেন শূন্যতে। গত বছর রান আউট হয়েছিলেন বল না খেলেই, এবার পেলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ‘গোল্ডেন ডাক।’ তার ক্যারিয়ারে শূন্য এই দুটিই।
টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান ব্রুককে ফেরানোর পরের ওভারে দুই নম্বর ব্যাটসম্যান জো রুটকেও (৩২) বিদায় করে ও’রোক।
৮২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে ইংল্যান্ড। ইনিংসের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটি তারা পায় এরপরই। ৫২ রান যোগ করেন অলিভার পোপ ও বেন স্টোকস।
দুজনকেই নিজের টানা দুই ওভারে ফেরান স্যান্টনার। ইংলিশদের লেজও গুটিয়ে যায় দ্রুতই। তাদের শেষ ৫ উইকেট পড়ে ৯ রানের মধ্যে।
বিশাল লিড পাওয়া কিউইরা তা আরও বাড়িয়ে নেয় দ্বিতীয় ইনিংসে। অধিনায়ক টম ল্যাথাম ১৯ রানে আউট হলেও দ্বিতীয় উইকেটে ৮৯ রানের জুটি গড়েন উইল ইয়াং ও কেন উইলিয়ামসন।
কিছুদিন আগে ভারত সফরে মিডল অর্ডারে খেলে ম্যান অব দা সিরিজ হওয়া ইয়াং এবার ওপেনার হিসেবে একাদশে ফিরে করেন ৮৫ বলে ৬০ রান। সাবলীল ব্যাটিংয়ে উইলিয়ামসন অপরাজিত রয়ে যান ৫৮ বলে ৫০ রানে।
দেশের মাঠে ৫ হাজার রান করে নিউ জিল্যান্ডের হয়ে ইতিহাসও গড়েন তিনি। দেশের মাঠে ৪ হাজার রানও নেই তার দেশের আর কারও।
টেস্ট ইতিহাসে দেশের মাঠে ৫ হাজার রান করা ১৮তম ব্যাটসম্যান তিনি। তবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো গড় তারই (৬৬.২৬)।
নাইটওয়াচম্যান ও’রোক টিকতে না পারলেও রাচিন রাভিন্দ্রাকে নিয়ে দিন শেষ করেন উইলিয়ামসন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৪৭
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৫.৪ ওভারে ১৪৩ (ক্রলি ২১, ডাকেট ১১, বেথেল ১২, রুট ৩২, ব্রুক ০, পোপ ২৪, স্টোকস ২৭, অ্যাটকিনসন ৪, কার্স ১, পটস ১, বাশির ১*; হেনরি ১৩.১-৪-৪৮-৪, সাউদি ১১-২-৪৬-০, ও’রোক ৮-০-৩৩-৩, স্যান্টনার ৩-১-৭-৩)।
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৩২ ওভারে ১৩৬/৩ (ল্যাথাম ১৯, ইয়াং ৬০, উইলিয়ামসন ৫০*, ও’রোক ০, রাভিন্দ্রা ২*; পটস ৬-২-৩৩-০, অ্যাটকিনসন ৫-২-১০-১, কার্স ৬-১-২১-০, স্টোকস ১০-১-৪৫-২, বাশির ৫-১-২২-০)।