চোট নিয়ে যখন লম্বা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া, ভারতীয় ক্রিকেট হাহাকার উঠত প্রায়ই। কার্যকর একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার যে দলের জন্য মহামূল্য এক সম্পদ! ফিট পান্ডিয়া সেটিই বুঝিয়ে দিলেন আরেকবার। তার রেকর্ড গড়া অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ইংল্যান্ডকে হারাল ভারত।
Published : 08 Jul 2022, 12:14 PM
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ঠাসা সূচিতে এখন শ্বাস নেওয়ার সুযোগই যেন কম। এজবাস্টন টেস্ট শেষ হওয়ার দুই দিন পরই যেমন শুরু হয়ে গেল টি-টোয়েন্টি সিরিজ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে উড়িয়ে এগিয়ে গেল ভারত।
সাউথ্যাম্পটনে বৃহস্পতিবার ২০ ওভারে ভারত তোলে ১৯৮ রান। ইংলিশরা রান তাড়ার শুরু থেকেই পথ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত যেতে পারে ১৪৬ পর্যন্ত।
ব্যাটিংয়ে ৫ নম্বরে নেমে পান্ডিয়া খেলেন ৩৩ বলে ৫১ রানের ইনিংস। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ৬২ ম্যাচের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার প্রথম ফিফটি এটি।
পরে তিনি বল হাতে ৩৩ রানে নেন ৪ উইকেট। একই টি-টোয়েন্টিতে ফিফটি ও ৪ উইকেটের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স প্রথমবার দেখাতে পারলেন ভারতের কেউ। এর আগে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিফটির সঙ্গে ৩ উইকেট ছিল যুবরাজ সিংয়ের।
এই জয়ে দারুণ এক মাইলফলকও ধরা দেয় রোহিত শর্মার। অধিনায়ক হিসেবে টানা সবচেয়ে বেশি ১৩ টি-টোয়েন্টি জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়েন ভারতীয় অধিনায়ক।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের দাপটের শুরু অধিনায়কের ব্যাটেই। শুরু থেকেই এ দিন ইংলিশ বোলারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। তৃতীয় ওভারের মধ্যেই ৫টি বাউন্ডারি আদায় করে নেন রোহিত শর্মা।
তৃতীয় ওভারেই অবশ্য মইন আলির আর্ম বলে রোহিত ফেরেন ১৪ বলে ২৪ করে। আরেক ওপেনার ইশান কিষান ছন্দ পাননি একটুও। ১০ বলে ৮ করে তিনিও ফেরেন মইনের বলে।
তবে ভারতের মানসিকতা বুঝিয়ে দেন পরের ব্যাটসম্যানরা। তিনে নেমে দিপক হুডা শুরু থেকেই ঝড়ো ব্যাটিং করতে থাকেন। একই পথ বেছে নেন সূর্যকুমার যাদব। ১০ ওভার হওয়ার আগেই ভারতের রান পেরিয়ে যায় একশ।
এই দুজনকেই ফিরিয়ে রানের রাশ একটু টেনে ধরার চেষ্টা করেন ক্রিস জর্ডান। ১৭ বলে ৩৩ করে ফেরেন হুডা, ১৯ বলে ৩৯ সূর্যকুমার।
সেখান থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন পান্ডিয়া। দ্রুততায় তুলতে থাকেন রান। ৫ ওভারে ৪৫ রানের জুটি গড়েন তিনি আকসার প্যাটেলের সঙ্গে।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য টিকতে পারেননি পান্ডিয়া। আউট হন ৩৩ বলে ৫১ রান করে। আকসার করেন ১২ বলে ১৭।
শেষ ওভারে দিনেশ কার্তিকের দুই বাউন্ডারিতে ভারতের রান যায় দুইশর কাছাকাছি।
সতীর্থ বোলারদের মার খাওয়ার দিনে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন জর্ডান। গতি, বাউন্স আর স্লোয়ার মিলিয়ে ৪ ওভারে স্রেফ ২৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন এই পেসার।
আগে নানা সময়ে নেতৃত্ব দিলেও নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে জস বাটলারের প্রথম ম্যাচ ছিল এটি। কিন্তু তাকে শূন্য রানেই ফিরতে হয় ভুবনেশ্বর কুমারের অসাধারণ এক ইনসুইঙ্গারে।
টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের নেতৃত্বে ৭ ম্যাচেই ৪টি ‘ডাক’ হয়ে গেল বাটলারের।
তিনে নেমে দাভিদ মালান ছেষ্টা করেন পাল্টা আক্রমণের। কিন্তু তাকে ও বিপজ্জনক লিয়াম লিভিংস্টোনকে এক ওভারেই ফেরান পান্ডিয়া।
জেসন রয় তখনও ছিলেন টিকে, তবে নিজের ছায়া হয়ে। শেষ পর্যন্ত ১৬ বলে ৪ রান করে তিনিও পান্ডিয়ার শিকার।
৩৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড। হ্যারি ব্রুক ও মইন আলি এরপর চেষ্টা করেন ম্যাচ জমিয়ে তোলার। ৬ ওভারে ৬১ রানের জুটি গড়েন দুজন।
তবে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। দুজনকে এক ওভারেই আউট করে ইংল্যান্ডের সম্ভাবনা শেষ করে দেন যুজবেন্দ্র চেহেল। ২৩ বলে ২৮ করেন ব্রুক, ২০ বলে ৩৬ মইন।
এরপর জর্ডানের ১৭ বলে অপরাজিত ২৬ রানের ইনিংসে দেড়শর কাছে যেতে পারে ইংল্যান্ড। তার পরও তাদের হারতে হয় বিশাল ব্যবধানেই।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ শনিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৯৮/৮ (রোহিত ২৪, ইশান্ত ৮, হুডা ৩৩, সূর্যকুমার ৩৯, পান্ডিয়া ৫১, আকসার ১৭, কার্তিক ১১, হার্শাল ৩, ভুবনেশ্বর ১*, আর্শদিপ ২*; কারান ২-০-১৮-০, টপলি ৪-০-৩৪-১, মইন ২-০-২৬-২, মিলস ৩-০-৩৫-১, পার্কিনসন ৪-০-৪৪-১, জর্ডান ৪-০-২৩-২, লিভিংস্টোন ১-০-১৫-০)।
ইংল্যান্ড: ১৯.৩ ওভারে ১৪৮ (রয় ৪, বাটলার ০, মালান ২১, লিভিংস্টোন ০, ব্রুক ২৮, মইন ৩৬, কারান ৪, জর্ডান ২৬*, মিলস ৭, টপলি ৯, পার্কিনসন ০; ভুবনেশ্বর ৩-০-১০-১, আর্শদিপ ৩.৩-১-১৮-২, পান্ডিয়া ৪-০-৩৩-৪, হার্শাল ৩-০-২৪-১, চেহেল ৪-০-৩২-২, আকসার ২-০-২৩-০)।
ফল: ভারত ৫০ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ভারত ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: হার্দিক পান্ডিয়া।