টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া ও ছুঁড়ে ফেলা নিয়ে ঋদ্ধিমান সাহার অভিযোগ ও চলমান বিতর্কে মুখ খুললেন রাহুল দাবিড়। ভারতের কোচ বললেন, এই কিপার-ব্যাটসম্যানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ও পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা রাখতেই তাকে অবসরের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। ৩৭ বছর বয়সী ঋদ্ধিমানকে বিবেচনার বাইরে রাখার প্রেক্ষাপটও তুলে ধরলেন তিনি।
Published : 21 Feb 2022, 12:37 PM
এমনিতে বেশ শান্ত ও ধীরস্থির স্বভাবের বলে পরিচিত হলেও ভারতের টেস্ট স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ার পর সংবাদমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান ঋদ্ধিমান। স্বয়ং বোর্ড প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলি পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়ার পরও দলে জায়গা হারানোয় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে কোচ দ্রাবিড় তাকে অবসর নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
এসব নিয়েই ভারতীয় ক্রিকেটে চলছে তোলপাড়। সেই ঢেউ স্পর্শ করে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। সিরিজ শেষে দ্রাবিড় সরাসরিই উত্তর দিলেন অভিযোগ নিয়ে।
তার সুদীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বিতর্কের ছাপ তেমন একটা পড়েনি। এবার ঋদ্ধিমানের সূত্রে বিতর্কে নাম জড়ালেও তাতে বিব্রত হননি বলেই জানালেন দ্রাবিড়।
“আমি মোটেও আহত হইনি। ঋদ্ধিমান সাহার প্রতি ও ভারতীয় ক্রিকেটে তার অবদান এবং অর্জনের প্রতি আমার গভীরতম শ্রদ্ধা আছে। তার সঙ্গে আমার আলোচনাটাও হয়েছিল সেই জায়গা থেকে, তার প্রতি সম্মান থেকেই। সততা ও স্বচ্ছতা তার প্রাপ্য। আমি চাইনি সে মিডিয়ার মাধ্যমে এসব (বাদ পড়া) জানতে পারুক।”
“আমি আহত হইনি, কারণ আমি আশা করি না যে ছেলেরা আমার সব বার্তায় খুশি হবে, সব কথায় একমত হবে। এভাবে এসব কাজ করে না। যখন কারও সঙ্গে জটিল আলোচনা হয়, কখনও কখনও ক্রিকেটারদের সঙ্গে এই ধরনের আলোচনা করতে হয়, তখন সবসময় আশা করি না যে তারা সবসময় আমার সঙ্গে একমত হবে বা আমাকে পছন্দ করবে। তার মানে এই নয় যে আমি এসব এড়িয়ে যাব এবং আলোচনা করব না।”
তিনি কোচ হওয়ার পর অধিনায়ক রোহিত শর্মার সঙ্গে মিলে দলে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার সংস্কৃতি চালু করেছেন বলেও জানালেন কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যান।
“এই ধরনের আলোচনা ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত চলতে থাকে। প্রতিটি একাদশ বাছাইয়ের সময়, এমনকি এখনও, যারা একাদশে জায়গা পাচ্ছে না, তাদের সঙ্গে আমি বা রোহিত কথা বলি। তারা কেন খেলছে না, সেটি নিয়ে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে তৈরি থাকি এবং বাছাই করা একাদশ খেলানোর কারণ বর্ণনা করি।”
“আমি তাই মোটেও আহত হইনি। ক্রিকেটাররা কখনও কখনও আহত হবে, ওদের খারাপ লাগবে, এটা স্বাভাবিক। আমি স্রেফ মনে করি, ওদের প্রতি সম্মানের জায়গা থেকেই আমার দলের স্বচ্ছতা ও সততা প্রাপ্য, আমি সেই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
৩৭ বছর বয়সী ঋদ্ধিমানের জায়গায় দ্বিতীয় কিপার হিসেবে স্কোয়াডে নেওয়া হয়েছে ২৮ বছর বয়সী কিপার শ্রিকার ভারতকে। এই বছর ভারতের টেস্ট কম থাকায় ভবিষ্যতে তাকিয়েই ঋদ্ধিমানকে বিবেচনার বাইরে রাখা হয়েছে, ব্যাখ্যা করলেন দ্রাবিড়।
“এই বছর আমাদের কেবল তিনটি টেস্ট ম্যাচ আছে (আসলে পাঁচটি) এবং রিশাভ পান্ত আমাদের এক নম্বর উইকেটকিপার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমরা তাই অপেক্ষাকৃত তরুণ আরেকজন কিপারকে গড়ে তুলতে চাই। ব্যস, ব্যাপার এটিই। তার মানে হয় নেই যে ঋদ্ধির প্রতি আমার ভাবনা বদলে গেছে বা তার অবদানের প্রতি সম্মান কমে গেছে।”
বাদ পড়ার পর ক্রিকেটারদের খারাপ লাগার ব্যাপারটিও বুঝতে পারেন দ্রাবিড়। কোচের বাস্তবতাও ক্রিকেটাররা একদিন অনুধাবন করতে পারবেন বলে আশা তার।
“যেমনটি বলেছি, আমার জন্য সবচেয়ে সহজ ব্যাপার হলো এসব আলোচনায় না যাওয়া, ছেলেদের সঙ্গে কথা না বলা। তবে আমি তেমন নই বা তেমন কাজ করব না। আমি আশা করি না যে তারা এসব পছন্দ করবে। তবে এটুকু আশা করি যে, একটা পর্যায়ে ওরা এসব অনুভব করবে এবং এটাকে সম্মান করবে যে আমি অন্তত ওদের মুখোমুখি হয়েছি এবং ওদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলেছি।”