৪২৮ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২০ রানে হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তিনটি শেষে ক্যারিবিয়ানরা এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে।
বারবাডোজে বুধবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ ওভারে তোলে ৫ উইকেটে ২২৪ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে তাদের সর্বোচ্চ এটিই।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে সুযোগ না পাওয়া পাওয়েল একাদশে ফিরে চারে নেমে খেলেন ১০ ছক্কায় ৫৩ বলে ১০৭ রানের ইনিংস।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিয়ান ২৮ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। তবে ওপেনারদের বাইরে তিনিই প্রথম। ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস করেছেন দুটি করে সেঞ্চুরি, সবকটিই ওপেনিংয়ে।
তৃতীয় উইকেটে নিকোলাস পুরানকে নিয়ে ১২২ রানের জুটি গড়েন পাওয়েল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে যা রেকর্ড। পুরান খেলেন ৫ ছক্কায় ৪৩ বলে ৭০ রানের ইনিংস।
ইংল্যান্ডও জবাব দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবার দুইশ রানের ইনিংস গড়ে। তবে জিততে পারেনি শেষ পর্যন্ত। থমকে যায় ২০৪ রানে।
ওপেনিংয়ে টম ব্যান্টন ৬ ছক্কায় খেলেন ৩৯ বলে ৭৩ রানের ইনিংস। অভিষিক্ত ফিল সল্ট ছয়ে নেমে ৫ ছক্কায় করেন ২৪ বলে ৫৭। তবে আরও বড় ইনিংস বা বড় কোনো জুটি হয়নি দলের ইনিংসে। তাই বিশাল রান তাড়া করে জয় ধরা দেয়নি।
দুই দল মিলিয়ে ৩১ ছক্কা হয়েছে ম্যাচে। এই সংস্করণে এক ম্যাচে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৩২ ছক্কার রেকর্ড আছে দুটি ম্যাচে।
কেনসিংটন ওভালে ইংল্যান্ড এই ম্যাচে মাঠে নামে ৫ পরিবর্তন নিয়ে। অভিষেক হয় জর্জ গার্টন, ফিল সল্ট ও হ্যারি ব্রুকের। চোট, অসুস্থতা আর বাদ দেওয়া মিলিয়েই এতগুলো বদল। ম্যাচের আগে গা গরমের সময় অস্বস্তি অনুভব করায় ছিটকে যান ইংল্যান্ড অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান। দলকে নেতৃত্ব দেন মইন আলি। টস জিতে ক্যারিবিয়ানদের ব্যাটিংয়ে পাঠান এই অলরাউন্ডার।
উইকেটে হালকা ঘাসের ছোঁয়া ছিল। তাতে ব্যাটসম্যানদের জন্য আরও সহায়ক হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ড যদিও সাফল্য পায় দ্বিতীয় ওভারেই। ব্র্যান্ডন কিং দুটি বাউন্ডারি মারলেও তাকে বোল্ড করে দেন অভিষিক্ত পেসার জর্জ গার্টন।
তবে তিনে নেমেই পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন পুরান। গার্টনকেই তিন বলে দুই ছক্কা এক চার মারেন তিনি, টাইমল মিলসকেও ধাক্কা দেন চার-ছক্কার।
আরেকপ্রান্তে ওপেনার শেই হোপ স্ট্রাইকই পাচ্ছিলেন না। ষষ্ঠ ওভারে তিনি আউট হন ৬ বলে ৪ রান করে।
পাওয়েল উইকেটে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বলেই শুরু করেন ছক্কা মেরে। এরপর পুরানের সঙ্গে মিলে তুলাধুনা করে ছাড়েন ইংলিশ বোলারদের। বাউন্ডারি আসতে থাকে প্রতি ওভারেই। লিয়াম লিভিংস্টোনের এক ওভার থেকে আসে ২৬ রান।
৩৪ বলে ফিফটি করেন পুরান, ৩১ বলে পাওয়েল। পরে দুজনের ব্যাটের ধার বাড়ে আরও।
৬৭ বলে ১২২ রানের জুটি শেষ হয় সপ্তদশ ওভারে। পুরানকে থামান আদিল রশিদ। সতীর্থ বোলারদের দুর্দশার দিনে এই লেগ স্পিনার দারুণ বোলিং করেন।
পাওয়েলকে থামানো যায়নি তখনও। ৫১ বলে তিনি পূরণ করেন শতরান। শেষ পর্যন্ত আউট হন তিনি শেষের আগের ওভারে। তার ১০ ছক্কার ইনিংসে চার মোটে ৪টি।
পাওয়েলের সঙ্গে রেকর্ড জুটির পথে দারুণ খেলেন নিকোলাস পুরান। ছবি: উইন্ডিজ ক্রিকেট।
আগের ম্যাচে খরুচে বোলিং করা দুই ইংলিশ পেসার সাকিব মাহমুদ ও ক্রিস জর্ডান এই ম্যাচে ছিলেন না। তাদের বদলে সুযোগ পাওয়া গার্টন ও মিলস ছিলেন আরও খরুচে। অভিষেকে ৪ ওভারে ৫৭ রান দেন গার্টন, অভিজ্ঞ মিলসের ৪ ওভারে আসে ৫২।
রান তাড়ায় ইংল্যান্ডের অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন আপ চতুর্থ ওভারে হারায় অভিজ্ঞ জেসন রয়কে। দুই ছক্কায় ১৯ রান করে বিদায় নেন তিনি।
তিনে নেমে জেমস ভিন্স আউট একটি করে চার-ছক্কা মেরেই, অধিনায়ক মইন রানই করতে পারেননি। আগ্রাসী লিভিংস্টোন পারেননি জ্বলে উঠতে।
তার পরও ইংল্যান্ড রানের গতি ধরে রাখতে পারে ব্যান্টনের সৌজন্যে। দারুণ সব শট খেলে দলকে লড়াইয়ে রাখেন এই ওপেনার।
তবে পোলার্ডকে একটি ছক্কা মারার পরের বলেই স্লোয়ারে আউট হয়ে থামে তার ৬ ছক্কার ইনিংস।
ছয়ে নেমে সল্ট এরপর চেষ্টা করে যান তার মতো। অভিষেক রাঙান তিনি ২২ বলে ফিফটি করে। কিন্তু আরেক অভিষিক্ত হ্যারি ব্রুক ১৩ বলে করতে পারেন কেবল ১০। লোয়ার অর্ডারে পারেননি কেউ সল্টকে সঙ্গ দিতে।
শেষ ওভারেও খানিকটা নাটকীয় ছড়ায় শুরুতে। ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৩৮ রান। রোমারিও শেফার্ড প্রথম বলটি করেন ওয়াইড, বাইসহ রান আসে দুই। পরের দুই বলে দুটি ছক্কা মেরে দেন সল্ট।
অভাবনীয় কিছুর সম্ভাবনা তখন কিছুটা হলেও জেগে ওঠে। তবে তৃতীয় বলেই বোল্ড হয়ে যান সল্ট। ইংল্যান্ডের সম্ভাবনারও তখন মৃত্যু।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ২২৪/৫ (কিং ১০, হোপ ৪, পুরান ৭০, পাওয়েল ১০৭, শেফার্ড ১১, অ্যালেন ০, পোলার্ড ৯*; টপলি ৪-০-৩০-১, গার্টন ৪-০-৫৭-১, মিলস ৪-০-৫২-১, লিভিংস্টোন ৩-০-৪২-১, রশিদ ৪-০-২৫-১, মইন ১-০-১৪-০)।
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ২০৪/৯ (রয় ১৯, ব্যান্টন ৭৩, ভিন্স ১৬, মইন ০, লিভিংস্টোন ১১, সল্ট ৫৭, ব্রুক ১০, গার্টন ২, রশিদ ১, মিলস ১*, টপলি ২*; কটরেল ৪-০-২৮-১, হোল্ডার ৪-০-৪১-১, শেফার্ড ৪-০-৫৯-৩, আকিল ৩-০-৩৬-১, পোলার্ড ৪-০-৩১-২, পাওয়েল ১-০-৯-০)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৫ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজের তিনটি শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: রভম্যান পাওয়েল।