ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে আবাহনী লিমিটেডের জয় ১ উইকেটে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার গাজী গ্রুপ অলআউট হয় ১৩০ রানে। এই পুঁজিতেই দারুণ জমে ওঠে ম্যাচ। শেষ ওভারে আবাহনীর প্রয়োজন পড়ে ৯ রানের, উইকেট বাকি তখন ২টি।
গাজীর বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের করা ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন তানজিম হাসান সাকিব। পরের বলে স্লগ সুইপে বাউন্ডারি মেরে দেন মেহেদি হাসান রানা। তৃতীয় বলে দুই রানের চেষ্টায় রান আউট মেহেদি। উইকেটে যান শেষ ব্যাটসম্যান আরাফাত সানি।
ওভারের চতুর্থ বলে সানি নেন সিঙ্গেল। দুই বলে যখন প্রয়োজন দুই, তানজিমের ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে বল যায় এক্সট্রা কাভারের দিকে। দুই রান নিয়ে জয়ের আনন্দে উড়াল দেন তানজিম ও সানি।
গাজী গ্রুপ দায় দিতে পারে নিজেদেরই। ১৯তম ওভারের শেষ বলে মুকিদুল ইসলামের বলে ড্রাইভ করেন মেহেদি রানা। লং অফ থেকে ডান দিকে ছুটে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল ছেড়ে দেন মেহেদি হাসান। হওয়ার কথা দুই, হয়ে যায় চার। বাড়তি সেই দুই রান পরে হয়ে ওঠে মহামূল্য।
ওই মুকিদুল আরও আগেই দলকে যেমন হতাশায় ডোবান, তেমনি আশাও জাগিয়ে তোলেন। শেষ ৪ ওভারে আবাহনীর প্রয়োজন ছিল ৪৮ রান, ম্যাচে গাজী গ্রুপই এগিয়ে। মুকিদুল তখন করে বসেন ফুল টস, যেটি ছক্কায় ওড়ান নাজমুল হোসেন শান্ত। ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মারেন আফিফ হোসেন। ওয়াইড হয় দুটি। সব মিলিয়ে ওই ওভার থেকে আসে ২২ রান!
পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহকেও যখন মাথার ওপর দিয়ে ছক্কায় ভাসান শান্ত, ম্যাচ তখন আবাহনীর নিয়ন্ত্রণে। ওই ওভারেই আবার বদলে যায় চিত্র। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন আফিফ (১৮ বলে ১৪)। পরের বলেই পয়েন্টে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
সমীকরণ দাঁড়ায় এরপর দুই ওভারে ১৮ রান। এই ওভারে মুকিদুল আবার দেন তিনটি ওয়াইড। তবে শান্তকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়েও দেন তরুণ এই পেসারই। ৪৯ বলে ৫৮ করে শান্ত বোল্ড হন ক্রস ব্যাটে খেলে।
এরপর মেহেদির ওই ফিল্ডিং মিস আর শেষ ওভারের নাটকীয়তা।
ম্যাচের সেরা নাজমুল হোসেন শান্ত।
১০ ওভার পর্যন্ত উইকেট ছিল ওই দুটিই। তবে রানও ছিল কেবল ৫৯। পরে মুকিদুল এক ওভারেই ফেরান মুশফিকুর রহিম ও মোসাদ্দেক হোসেনকে। বাঁহাতি মোহাম্মদ নাঈম শেখকে যখন অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড করলেন মেহেদি হাসান, ত্রয়োদশ ওভারে আবাহনীর রান ৫ উইকেটে ৬৪।
এরপর শান্তর ব্যাটেই জিইয়ে থাকে আবাহনীর আশা। শেষ পর্যন্ত তিনি না টিকলেও দল ছুঁয়ে ফেলে লক্ষ্য।
ম্যাচের প্রথম ভাগও গাজী গ্রুপের জন্য ছিল হতাশার। ওপেনিংয়ে ঝড় তুলতে পারেননি মেহেদি হাসান। দারুণ কিছু শট খেলে বড় কিছুর আশা জাগিয়ে আবার নিরাশ করেন সৌম্য সরকার (দুটি করে চার-ছক্কায় ২৪ বলে ৩০)।
থিতু হয়ে আউট হন জাকির হাসানও (২৫ বলে ২৭)। মিডল অর্ডারে ব্যর্থ ইয়াসির আলি চৌধুরি (১৭ বরে ১২) ও মাহমুদউল্লাহরা (১৭ বলে ১৬)।
টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থবার চার উইকেট নেওয়ার পাশপাশি সাইফ উদ্দিন করেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং (৪/১৮)।
সাতে নেমে মুমিনুল হকের ১২ বলে ২৫ রানের ইনিংস গাজী গ্রুপকে এনে দেয় লড়ার মতো পুঁজি। তাতে লড়াই হলো তুমুল। কিন্তু আবাহনীকে ঠেকানো গেল না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গাজী গ্রুপ: ১৯.১ ওভারে ১৩০ (মেহেদি ৩, সৌম্য ৩০, জাকির ২৭, ইয়াসির ১২, মাহমুদউল্লাহ ১৬, আরিফুল ০, মুমিনুল ২৫, আকবর ০, মুকিদুল ২, নাসুম ৩, তারেক ০*; সাইফ উদ্দিন ৪-০-১৮-৪, আরাফাত সানি ৪-০-২২-০, মোসাদ্দেক ৪-০-২৭-১, তানজিম ২.১-০-১৩-২, আফিফ ১-০-৮-০, মেহেদি রানা ৪-০-৩২-৩)।
আবাহনী: ১৯.৫ ওভারে ১৩১/৯ (লিটন ২২, মুনিম ০, শান্ত ৫৮, মুশফিক ১২, মোসাদ্দেক ০, নাইম ২, আফিফ ১৪, সাইফ উদ্দিন ০, তানজিম ৪*, মেহেদি রানা ৯, আরাফাত সানি ১*; মেহেদি ৪-০-২২-২, নাসুম ৩.৫-০-২৫-১, তারেক ৩-০-১৮-০, আরিফুল ১-০-৭-০, মুকিদুল ৪-০-৩৮-৩, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-১৯-২)।
ফল: আবাহনী লিমিটেড ১ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত।