টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ বলে বিবেচিত অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের রান ১০ বলে শূন্য। এরপর অধিনায়কের বিদায় প্রথম বলেই রিভার্স সুইপ খেলে। এই দুটি কেবল উদাহরণ। মোহাম্মদ নাঈম শেখ ছাড়া ঢাকার বাকি ব্যাটসম্যানদেরও একই দশা। বোলিংয়ে তাদেরকে গুঁড়িয়ে ব্যাটিংয়েও উড়িয়ে দিল চট্টগ্রাম।
Published : 26 Nov 2020, 07:28 PM
৯ উইকেটের জয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ শুরু করল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। টুর্নামেন্টের ফেভারিট দলগুলির একটি বেক্সিমকো ঢাকা হেরে গেল প্রথম দুই ম্যাচই।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ঢাকার ইনিংস ৮৮ রানেই শেষ করে দেয় চট্টগ্রাম।
ঢাকার ইনিংসের প্রায় অর্ধেক রান আসে নাঈম শেখের ব্যাট থেকে। ২৩ বলে করেন তিনি ৪০। দলের বাকি সব ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত রান ৩৯। বাকি ৯ রান অতিরিক্ত।
ছোট্ট রান তাড়ায় সৌম্য সরকার ও লিটন দাসের উদ্বোধনী জুটিই চট্টগ্রামকে নিয়ে যায় জয়ের কাছে। কেবল লিটনের উইকেট হারিয়ে জিতে যায় তারা ১০.৫ ওভারে।
৩৩ বলে ৩৪ রানে আউট হন লিটন। সৌম্য অপরাজিত থেকে যান ২৯ বলে ৪৪ রানে।
টস জিতে বোলিং নেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই এগোয় চট্টগ্রামের পরিকল্পনামতো। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শুরু হয় তাদের দাপট। বল হাতে মোসাদ্দেক হোসেন, নাহিদুল ইসলামরাও দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গ। শুরুতে খরুচে হলেও মুস্তাফিজুর রহমান ও তাইজুল ইসলাম পরে ঘুরে দাঁড়িয়ে শিকার ধরেন দুটি করে।
শুরুতে ছন্দ পেতে একটুও সময় নেননি শরিফুল। ম্যাচের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন বিপজ্জনক তানজিদ হাসান তামিমকে।
ওই ওভারে কোনো রানই দেননি শরিফুল। টুর্নামেন্টের চতুর্থ ম্যাচে এসে প্রথম মেডেন নিতে পারলেন কোনো বোলার।
তিনে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে ব্যর্থ সাব্বির রহমান। অনেক দিন ধরেই নিজেকে হারিয়ে খোঁজা ব্যাটসম্যান ব্যাটে-বলে করতেই ধুঁকছিলেন। শরিফুলের বলেই ফেরেন তিনি ১০ বলে শূন্য করে।
শট নির্বাচনে আরও চমকে দেন মুশফিকুর রহিম। দলের অমন নড়বড়ে শুরুর পর উইকেটে গিয়ে প্রথম বলেই অফ স্পিনার নাহিদুল ইসলামকে রিভার্স সুইপ খেলেন ঢাকা অধিনায়ক, গ্লাভসে লেগে বল যায় স্লিপের হাতে।
এক পাশে যখন ব্যাটসম্যানদের এই দুরবস্থা, আরেক পাশে নাঈম শেখ তখন পুরো ভিন্ন রূপে। পায়ের কাজ নিয়ে আগের দুর্বলতার জায়গায় বেশ উন্নতি করেছেন বলে মনে হয়েছে। খেলেছেন চোখধাঁধানো কয়েকটি ড্রাইভ। মুস্তাফিজকে পরপর দুই বলে মেরেছেন চার-ছক্কা। নতুন অ্যাকশনে বল করতে আসা বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলকে প্রথম দুই বলেই উড়িয়েছেন ছক্কায়।
আকবর আলিও ততক্ষণে বেশ ভালো শুরু করেছেন। দুজনের জুটি জমে উঠতে শুরু করেছে। তখনই আবার চিত্র বদলে দেন মোসাদ্দেক হোসেন। এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন তিনি এই দুজনকেই।
দায় বেশি অবশ্যই দুই ব্যাটসম্যানেরই। উইকেট সোজা বল কাট করতে গিয়ে বোল্ড আকবর (১৩ বলে ১৫)। জোরের ওপর করা ডেলিভারি সামনে না খেলে পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে পায়ে লেগে বোল্ড নাঈম।
পরের ব্যাটসম্যানরাও আর পারেননি তেমন কিছু। ঢাকা তাই পারেনি একশর কাছে যেতেও। ৫ ব্যাটসম্যানের নামের পাশে শূন্য রান।
চট্টগ্রামের ৬ বোলারের সবাই পেয়েছেন উইকেটের দেখা। অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনের বোলিং পরিবর্তন ও মাঠ সাজানোও ছিল বেশ নজরকাড়া।
৮৮ রানের পুঁজিতে লড়াই করা কঠিন। সৌম্য ও লিটন সেই সুযোগও দেননি ঢাকাকে। ৯.৪ ওভারে ৭৯ রানের জুটি গড়েন দুজন।
জয়ের কাছে গিয়ে লিটন বোল্ড হন নাসুম আহমেদের নিচু হওয়া বলে। সৌম্য ফেরেন দলের জয় নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বেক্সিমকো ঢাকা: ১৬.২ ওভারে ৮৮ (তানজিদ ২, নাঈম ৪০, সাব্বির ০, মুশফিক ০, আকবর ১৫, শাহাদাত ২, আবু হায়দার ০, মুক্তার ১২, নাসুম ৮, রুবেল ০, মেহেদি রানা ০*; নাহিদুল ৩-০-১৩-১, শরিফুল ৩-১-১০-২, মুস্তাফিজ ৩.১-১-১৩-২, মোসাদ্দেক ২-০-৯-২, তাইজুল ৪-০-৩২-২, সৌম্য ১-০-২-১)।
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: ১০.৫ ওভারে ৯০/১ (লিটন ৩৪, সৌম্য ৪৪*, মুমিনুল ৮*; রুবেল ৩-০-২৩-০, মেহেদি ৩-০-৩০-০, আবু হায়দার ২-০-১৫-০ মুক্তার ১-০-১০-০, নাসুম ১-০-৫-১, শাহাদাত ০.৫-০-৭-০)।
ফল: গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন