ব্যাটে রান আসছে, আর কোনো কিছু নিয়ে ভাবার দরকার নেই। একসময় এমনটিই ছিল তামিম ইকবালের মানসিকতা। সময়ের সঙ্গে সেই ভাবনা বদলেছে। আরও পরে, যখন দেখেছেন ফিটনেস নিয়ে বিরাট কোহলির খাটুনি, নিজেকে দেখে তখন লজ্জা পেতেন তামিম। বাংলাদেশের ওপেনার পণ করেছিলেন, কোহলির পর্যায়ে যেতে না পারলেও পথটা অনুসরণ করবেন।
Published : 02 Jun 2020, 02:10 PM
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোতে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকারের সঙ্গে ভিডিও আলাপচারিতায় অকপটে নিজের উপলব্ধির কথা জানিয়েছেন তামিম।
দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে ফিটনেস নিয়ে আলোচনায় তামিম জানালেন, শারীরিক সামর্থ্য নিয়ে বাংলাদেশ দলের ধারণায় বদল এসেছে মাত্র কয়েক বছর আগে।
“ খেলায় ফিটনেসের গুরুত্বটা বুঝতে অনেক সময়ে লেগেছে আমাদের। গত তিন-চার বছরে হয়তো আমরা বুঝতে পারছি, যথেষ্ট ফিট থাকতে হবে, টিভিতে যেন ভালো দেখায়, বিশাল পেট নিয়ে যেন মাঠে নামতে না হয়।”
এই প্রসঙ্গেই তামিম ফিরে গেছেন ২০১০ সালে। যে বছর তিনি তুমুল ফর্মে ছিলেন, রান করেছেন দেশে ও দেশের বাইরে, পিঠেপিঠি দুর্দান্ত দুটি সেঞ্চুরি করেছেন ইংল্যান্ড সফরে। কিন্তু নিজেই জানালেন, ফিটনেস নিয়ে তার ধারণা ছিল বাজে।
“তখন আমার মানসিকতা ছিল এরকম যে, যতক্ষণ রান করছি, আমাকে কেমন দেখাচ্ছে, সেটা কোনো ব্যাপার নয়। খুব বাজে ধারণা ছিল আমার, এটা মেনে নিতে কোনো লজ্জা নেই। প্রথমত, আমার মনে হচ্ছিল, আমি প্রচুর রান করছি। আসলে তা নয়। দ্বিতীয়ত, আমাকে বাজে দেখাচ্ছিল।”
“এখন যদি আপনি ২০১৫ সালের আমাকে দেখেন, সেখান থেকে আমার ওজন ৯ কেজি কমেছে। ওই সময়টায় ফিটনেস নিয়ে অনেক খাটতে শুরু করেছি আমি। কৃতিত্ব দিতে হবে আমাদের ট্রেনারকেও।”
ফিটনেস ভালো থাকার সুফল এখন খুব ভালোভাবে টের পান বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
“ফিটনেস ভালো থাকার সুবিধা অনেক। ক্লান্তি অনুভব হয় কম। বলের কাছে দ্রুত যাওয়া যায়। মানসিকতা ইতিবাচক থাকে। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, নিজেকে নিয়ে ভালো অনুভূতি কাজ করে সবসময়।”
মাঞ্জরেকার তখন টেনে আনলেন কোহলির প্রসঙ্গ। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রচণ্ড গরমে ভীষণ চাপের মধ্যে ৫১ বলে অপরাজিত ৮২ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেছিলেন কোহলি। শুধু ক্রিকেট স্কিলেই নয়, শারীরিক সামর্থ্যের দিক থেকেও সেটি ছিল কঠিন এক পরীক্ষা। ইনিংসটির পরপরই মাঠে মাঞ্জরেকারকে কোহলি বলেছিলেন, “এই যে জিমনেসিয়ামে এত এত কাজ করি, সেটিই এখন ফল দিচ্ছে।”
তামিম তখন তাকে জানালেন, ফিটনেস নিয়ে বাংলাদেশ দলের ভাবনা পরিবর্তনে ভারতীয় দলের প্রভাব কতটা, কোহলি কীভাবে বদলে দিয়েছেন অন্যদের মানসিকতা।
“ সঞ্জয় ভাই, এটা আমাকে বলতেই হবে। ভারতীয় একজন ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলছি বলেই নয়, আমাকে এটা বলতেই হবে, ভারত যেহেতু আমাদের প্রতিবেশী দেশ, আমরা অনেক কিছুই অনুসরণ করি। ভারতীয় দল যখন ফিটনেসের দিক থেকে বদলাতে শুরু করল, সেটিই বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে।”
“আমার এটা বলতে কোনো লজ্জাই নেই যে, আমার মনে হয় প্রকাশ করা উচিত, ২-৩ বছর আগে যখন আমি বিরাট কোহলিকে দেখেছি জিমে কাজ করতে, রানিং ও অন্য সবকিছু, নিজেকে নিয়ে লজ্জা লাগত আমার। সত্যিই নিজেকে নিয়ে লজ্জা লাগত। মনে হতো, ‘এই ছেলেটি, সম্ভবত আমার বয়সীই, এই ধরনের কাজ করছে, এত ট্রেনিং করছে ও সাফল্য পাচ্ছে, আমি হয়তো তার অর্ধেকও করছি না। তার পর্যায়ে যেতে না পারি, অন্তত তার পথ তো অনুসরণ করার চেষ্টা করতে পারি। হয়তো তার ৫০ ভাগ, ৩০-৪০ বা ৬০ ভাগ, যেটাই হোক… (হতে পারব)।”
এখন শুধু কোহলিই নন, বাংলাদেশ দলেও ফিটনেসের দিক থেকে অনুকরণীয় একজনকে খুঁজে পান তামিম।
“ আমাদের দলেও দারুণ একজন উদাহরণ আছে, মুশফিকুর রহিম। আমি তার ক্রিকেটীয় দিকে যাব না, ফিটনেসের দিক থেকে সে নিজেকে যেভাবে সামলায়, সেটা বলছি। সে এমন একজন, যাকে অনুসরণ করা যায়। হ্যাঁ, বিরাট কোহলি অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। মুশফিকও বাংলাদেশ দলে অনেক তরুণ ক্রিকেটারের আদর্শ হতে পারে।”