নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবালের নাম ঘোষণা করার সময় কোনো সময়সীমা বলেননি বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। নিজের ছাপ রাখতে লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব চান বাঁহাতি ওপেনার। তার মতে, দীর্ঘ সময় নেতৃত্বে থাকলে ব্যবধান গড়ে দেওয়া সম্ভব হয়।
Published : 14 Mar 2020, 05:44 PM
‘সিরিজ বাই সিরিজ’ অধিনায়ক নির্বাচন করা বিসিবির জন্য নতুন কিছু নয়। এক-দুই-তিন সিরিজের জন্য দায়িত্ব পেলে একজন অধিনায়কের জন্য পরিকল্পনা করা, একটা দল গড়ে তোলার কাজটা অনেক কঠিন হয়ে যায়। তামিম মনে করেন, সব অধিনায়ককেই যেন লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।
“ক্যাপ্টেন্সির ব্যাপারটা একটা সম্মিলিত প্রক্রিয়া। অধিনায়কত্ব নেওয়ার পেছনে আমার একটা কারণ ছিল। আমি চাচ্ছিলাম লম্বা সময়ের জন্য। লম্বা সময় পেলে দলে আপনি একটা ব্যবধান গড়তে পারেন।”
“আর দল হিসেবে যেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বা আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, ২০১৫ সালে যখন আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জিতি তখন মাশরাফি ভাইয়ের অধীনে আমাদের যে গ্রুপটা ছিল সেটার মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মালো যে ‘না, ঠিক আছে। আমরা হারাতে জানি’।”
এই বিশ্বাস দ্রুত দলের মধ্যে দেখতে চান তামিম। কাজটা সহজ নয়। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান নিষেধাজ্ঞার জন্য মাঠের বাইরে আছেন। নিশ্চিতভাবেই আগামী বিশ্বকাপে খেলবেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা। সামনে খুব বেশি ওয়ানডে নেই-ও। সব মিলিয়ে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ নতুন অধিনায়কের সামনে। তামিম আত্মবিশ্বাসী, বড় দলের বিপক্ষে একটা জয় পাল্টে দেবে বাংলাদেশকে।
“আর এখন আমাদের যে গ্রুপটা আছে, এখানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন খেলোয়াড় নেই। চার-পাঁচ জনের ফর্মের ওঠা-নামা আছে। নতুন চার-পাঁচ জন খেলোয়াড় এসেছে দলে।”
“আমার মনে হয়, ওয়ানডে দল হিসেবে আমাদের একটা বড় ম্যাচ জেতা খুব জরুরি। তা এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে যে আমরা আবার জিনিসগুলো ভালো করতে পারি। এটাই আমাদের টার্গেট থাকবে। যত দ্রুত আমরা একটা বড় ম্যাচ জিততে পারি, যা দলের জন্য ভালো হবে।”
খারাপ সময় থেকে কীভাবে বের হয়ে আসতে হয়, ভালো করেই জানা আছে তামিমের। বাইরের চাপটা যদি ঠিকঠাক সামলাতে পারেন, হয়ে উঠতে পারেন ভালো অধিনায়ক। বাইরের চাপ সামলানো নিয়ে কী ভাবছেন ওয়ানডেতে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান?
“সত্যি বলতে আমি খুব অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন না…একটু সময় দিতে হবে আমাকে যে কোনো কিছুর জন্য।”
“খুব স্বাভাবিক একটা কথা যে, ক্যাপ্টেন্সি কেউ নিলে তার ব্যাটিং পারফরম্যান্স খারাপ হয়ে যায়, এটা-ওটা হয়ে যায়। আমি নিজেও জানি না আজ থেকে ছয় মাস বা একবছর পর কীভাবে আমি পারফরম্যান্স করব। আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়। আপনাদেরও একটু ধৈর্য্য রাখতে হবে। আমাদের দর্শক যারা আছেন তাদেরও একটু ধৈর্য ধরতে হবে।”
সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব পরে। আগে প্রক্রিয়া ঠিক রাখা। নেতৃত্বে নতুন হলেও এ নিয়ে তামিমের চিন্তা-ভাবনা স্বচ্ছ। সবার আগে তার কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে দলের স্বার্থ। আগের অধিনায়ক অনেক উঁচু তারে বেঁধে গেছেন মানদণ্ড। নিজের দল নিয়ে তামিম স্পর্শ করতে চান মাশরাফিকে।
“আমার এটাই কাজ থাকবে যে টিমের বেস্ট ইন্টারেস্টের জন্য যা যা দরকার, আমি তাই করার চেষ্টা করব। আমি সফল হবো কি হবো না, এটা জানি না। কিন্তু আমি চেষ্টা করব সবকিছু সঠিক করার। যেকোনো কিছু এক সিরিজ, পাঁচ-ছয় ম্যাচ দিয়ে বিচার করা কঠিন। বিশেষ করে, ক্যাপ্টেন্সি একেবারে ভিন্ন একটা ব্যাপার।”
“আর আমি এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে নিচ্ছি যে…তিনি এতো বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার অধীনে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। সোজাসুজি ওনার পর্যায়ে চলে যেতে পারলে ভালো। আর যদি যেতে না পারি আমাকে আপনাদের কিছু সময় দিতে হবে।”
লক্ষ্য অবশ্যই ২০২৩ বিশ্বকাপ। ওই টুর্নামেন্টের এখনও অনেক বাকি। এই মুহূর্তে সে সব নিয়ে ভাবছেন না তামিম। এগোতে চান ধাপে ধাপে। শুরু করতে চান, প্রক্রিয়া ঠিক রাখার মধ্য দিয়ে।
“সত্যি কথা, আমি ওরকম কিছু চিন্তা করিনি। ভালো ব্যাপার যে, লম্বা সময় বোর্ড দিয়েছে। আমি আমার সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করে দেখব। সম্ভব সবকিছুই করব যেন বাংলাদেশের ক্রিকেট সঠিক পথে এগিয়ে যায়। দল ভালো করলে, আমি ভালো করলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবা শুরু করব। এই মুহূর্তে আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, কিছু ব্যাপার ঠিকঠাক করা। পাকিস্তানে যদি যাই, আগে সেটির দিকে নজর দেওয়া।”