অধিনায়ক তামিমের চাওয়া, দলীয় সংস্কৃতির উন্নতি

ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি গড়ে না ওঠার হাহাকার। পেশাদারীত্বের ঘাটতিতে আক্ষেপ। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২০ বছর পরও এসবকে সঙ্গী করেই এগিয়ে চলছে দেশের ক্রিকেট। সমস্যাগুলো সামগ্রিক, তবে দায়িত্বের জায়গা থেকে নিজের কাজটুকু করে যেতে চান তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক দেখতে চান ক্রিকেটারদের মাঠের বাইরের সংস্কৃতি ও পেশাদারীত্বের উন্নতি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2020, 03:56 PM
Updated : 14 March 2020, 04:44 PM

মাশরাফি বিন মুর্তজা নেতৃত্ব ছাড়ার পর কদিন আগে তামিমকে দেওয়া হয়েছে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব। অধিনায়ক হওয়ার পর শনিবারই প্রথম সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান। জানালেন তার ভাবনা, দর্শন, লক্ষ্য-চাওয়া, সবকিছু নিয়ে বিস্তারিত।

মাঠের ভেতরে তামিম অধিনায়ক হিসেবে হতে চান আগ্রাসী। তবে সেখানে চাইলেও সবসময় সবকিছু পক্ষে আসবে না। কিন্তু মাঠের বাইরের সবকিছু তো নিজেদের হাতেই। তামিম এখানেই চান উন্নতি।

“আমার মনে হয়, অন দা ফিল্ড পারফরম্যান্স বা অনেক কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, যেমন ‘টিম কালচার।’ মাঠের বাইরে আমরা কতটা পেশাদার। আমার মনে হয়, এখানে কতটা উন্নতি করতে পারি, সেটিই হবে আমার প্রথম কাজ।”

তামিম খুব ভালো করেই জানেন, খুব দ্রুত এসব জায়গায় উন্নতি সম্ভব নয়। তবে প্রক্রিয়াটা তিনি শুরু করতে চান, যেন একসময় ফল মেলে।

“ওখানে সব কাজ আমরা ঠিকঠাক শুরু করতে পারলে, জরুরি নয় যে এখনই ফলাফল দেখা যাবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে অবশ্যই ফল দেখতে পাবেন। আমরা যদি মাঠের বাইরের কাজ ঠিকমতো করি, আরও বেশি ডিসিপ্লিনড হই, আরও পরিশ্রম করি, প্র্যাকটিসে ভুল কমাতে পারি, তাহলে সেই কষ্টের ফল একসময় মিলবে।”

“আমি যখন ভাবি যে, এই দলটিকে সামনে এগিয়ে নেব, সবার আগে মাথায় আসে যে অফ দা ফিল্ড আগে সবকিছু ঠিক করতে হবে। অবশ্যই আমরা বড় কোনো সমস্যায় নেই। আমি মনে করি, আমরা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম ডিসিপ্লিনড দল। তবে আরও ভালো হতে পারি। এসব ঠিক করতে পারলে মাঠের খেলায় সেসবের প্রভাব পড়বেই।”

বাংলাদেশ ক্রিকেটের যা বাস্তবতা, মাঠের বাইরেই অধিনায়কের কাজ থাকে বেশি। সদ্য সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা যেমন অনেকের ব্যক্তিগত, পারিবারিক থেকে শুরু করে ক্রিকেটীয়, সব সমস্যায় চেষ্টা করেছেন দলের সবার পাশে থাকতে। বিশেষ করে, জুনিয়র ও নবীন ক্রিকেটারদের অনেক সময়ই আগলে রাখতে হয় অধিনায়ককে।

তবে শুধু অধিনায়কের দিকে না তাকিয়ে তামিম দায়িত্ব নিতে বললেন দলের সবাইকে।

“শুধু জুনিয়র নয়, সিনিয়রদেরও উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে। লিটনের কথাই বলি। ৬ মাস আগেও সে যেভাবে চিন্তা করতো, এখন অন্যরকম করে। শুধু পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে বলেই বলছি না। ৬ মাস আগে যেভাবে ভাবত, এখন ওর সঙ্গে কথা বললে অনেক পার্থক্য দেখছি। সেটির প্রতিফলনই মাঠে পড়ছে।”

“এখন যারা তরুণ খেলোয়াড় আছে, তাদের ক্রিকেটের প্রতি অনেক ইতিবাচক চিন্তা আছে, তারা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। এই উন্নতির দরকার আছে। যত তাড়াতাড়ি আমরা এগুলো আরও ভালোর কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারব, দলের উন্নতি আরও ভালো হবে।”

এই ছোট জায়গাগুলিতে উন্নতিই আপাতত অধিনায়ক তামিমের লক্ষ্য। মাশরাফির নেতৃত্বে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অভাবনীয় সাফল্যের পাশাপাশি আইসিসি ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে ছয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। এখনও পর্যন্ত যা বাংলাদেশের সেরা র‍্যাঙ্কিং। নতুন অধিনায়কের কাছে দেশের ক্রিকেটের প্রত্যাশা থাকবে, দলকে আরও ওপরে নিয়ে যাওয়া।

তবে তামিম এখনই কোনো আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখাতে চান না। বরং ছোট ছোট পদক্ষেপে এগোতে চান বড় কিছুর পথে।

“আমি যদি বলি আমি সেরা তিন দলের একটি হতে চাই, সেটি অনেক লম্বা প্রক্রিয়া। আমি স্রেফ বলার জন্য কিছু বলতে চাই না। এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ছোট ছোট জিনিসগুলো কিভাবে আমরা ঠিক করতে পারি। ট্রেনিং কিভাবে আরও ভালো করতে পারি, দল হিসেবে কিভাবে খেলতে পারি। আমি অন্য কাউকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি, তার সাহায্যে আমি কিভাবে উন্নতি করতে পারি।”

“এইসব বিষয় নিয়ে আমি কাজ শুরু করতে চাই। দীর্ঘ প্রক্রিয়া চিন্তা না করে ছোটখাটো বিষয়গুলো ঠিক করলে, সবকিছু অটোমেটিক্যালি ভালো হতে থাকবে।”