২০১৬ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ছিলেন রকিবুল হাসান। পরের দুটি মৌসুম কেটেছে মাঝারি। এবার রকিবুল আবারও দুর্দান্ত ফর্মে। লিগের প্রথম পর্ব শেষে রানের তালিকায় সবার ওপরে তিনিই। গত কয়েক বছরের হতাশা পেছনে ফেলে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন জহুরুল ইসলামও। আর বরাবরের মতোই বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় ফরহাদ রেজা এখন শীর্ষে।
Published : 11 Apr 2019, 09:55 PM
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্ব শেষে সেরা পারফরমারদের মধ্যে এগিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞরাই। তবে চমক হয়ে এসেছেন হাসান মুরাদ। এবারই লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষিক্ত বিকেএসপির ১৭ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার উইকেট শিকারে আছেন তিনে!
ব্যাটিংয়ে সেরা যারা
জহুরুল ও রকিবুলের ক্যারিয়ারের গল্পটি প্রায় একই। দুজনের বয়স কাছাকাছি। দুজনেই বেশ সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তবে প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় দুজনই দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে।
তারকায় ঠাসা আবাহনীর জাতীয় তারকাদের ব্যর্থতার মাঝে সবচেয়ে উজ্জ্বল জহুরুলই। লিগের প্রথম ম্যাচেই কবজিতে চোট ও পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করে সেঞ্চুরিতে জিতিয়েছেন দলকে। পরে আরও একটি ম্যাচে ওপেন করতে নেমে খেলেছেন শেষ ওভার পর্যন্ত। করেছেন সেঞ্চুরি।
লিগের শেষ দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ রান করেছেন জহুরুল। এই সুযোগে তাকে টপকে গেছেন রকিবুল। মোহামেডানের মিডল অর্ডারে ৩১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান এবার দারুণ ধারাবাহিক। অধিনায়ক হিসেবে লিগ শুরু করেছিলেন। নিজে ভালো করলেও দল ভালো করছিল না। তবে নেতৃত্ব না থাকলেও তার ফর্ম ছিল ঠিকই।
রানসংখ্যায় সবার ওপরে, তার চেয়েও চোখে পড়ার মতো ছিল রকিবুলের ব্যাটিংয়ের ধরন। এমনিতে রয়েসয়ে খেলেন বলে পরিচিতি থাকলেও এবার লিগ জুড়েই ছিলেন দারুণ আগ্রাসী। প্রথম পর্বে তার স্ট্রাইক রেট ৯৫.৪৪।
সেরা পাঁচে একমাত্র বিদেশি প্রতিনিধি প্রাইম ব্যাংকের ভারতীয় ব্যাটসম্যান অভিমন্যু ইশ্বরণ।
গত মৌসুমে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেকের বছরে ১২ ইনিংসে ৫৫৬ রান করেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম। ১৯ বছর বয়সী বাঁহাতি ওপেনার এবার ১১ ইনিংসে করে ফেলেছেন ৪৬৪ রান। আছেন শীষ পাঁচের ঠিক পরেই। দুটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ৪৬১ রান করলেও সেরা পাঁচে ঢুকতে পারেননি ফজলে মাহমুদ রাব্বি।
এছাড়াও শাইনপুকুরের ওপেনার সাব্বির হোসেন (৩৭৩ রান), উত্তরার ওপেনার দুই ওপেনার তানজিদ হাসান (৩৬৩ রান) ও আনিসুল ইসলাম ইমন (৩৪৪ রান) নজর কেড়েছেন।
৭৪৯ রান করে গত লিগের সর্বোচ্চ রান স্কোরার নাজমুল হোসেন শান্ত এবার ১১ ইনিংসে ৩০.৪৫ গড়ে করেছেন কেবল ৩৩৫। এক ম্যাচে ১২৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেললেও বাকি ১০ ইনিংস মিলিয়ে ইমরুল কায়েস করেছেন ১৩৬। হতাশ করেছেন সৌম্য সরকার, নাসির হোসেনরাও।
সেরা পাঁচ:
ব্যাটসম্যান | ইনিংস | অপরাজিত | রান | সর্বোচ্চ | গড় | স্ট্রাইক রেট | ১০০/৫০ |
রকিবুল হাসান (মোহামেডান) | ১১ | ২ | ৫৪৫ | ১০২ | ৬০.৫৫ | ৯৫.৪৪ | ১/৫ |
জহুরুল ইসলাম (আবাহনী) | ১০ | ২ | ৫৩১ | ১৩০ | ৬৬.৩৭ | ৭৬.৯৫ | ২/২ |
এনামুল হক (প্রাইম ব্যাংক) | ১১ | ১ | ৫১১ | ১০২ | ৫১.১০ | ৮৩.৮৬ | ৩/১ |
সাইফ হাসান (প্রাইম দোলেশ্বর) | ১১ | ২ | ৫০৬ | ১৩২* | ৫৬.২২ | ৭৭.৬০ | ২/২ |
অভিমন্যু ইশ্বরণ (প্রাইম ব্যাংক) | ৭ | ০ | ৪৯৬ | ১৩৩ | ৭০.৮৫ | ৯৩.৪০ | ১/৩ |
বোলিংয়ের সেরা যারা:
গত লিগে ১৬ মাচে ২৯ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন ফরহাদ রেজা। এবার ১১ ম্যাচেই হয়ে গেছে ২৭ উইকেট।
উইকেট শিকারে দুইয়ে থাকা বোলারটির নাম খুব পরিচিতি নয় দেশের ক্রিকেটে। তবে তার পারফরম্যান্স খুব বিস্ময়করও নয়। গত লিগে আবির্ভাবেই ১৪ ম্যাচে ২৭ উইকেট নিয়েছিলেন রবিউল হক। ১৯ বছর বয়সী পেসার এবারও ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ২২ উইকেট।
বিকেএসপির হাসান মুরাদকে বলা যায় সত্যিকার অর্থেই এবারের আসরের নতুন তারা। এই টুর্নামেন্টের আগে প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতেও দারুণ বোলিং করেছেন। এই লিগে ছিল আরও বড় সব প্রতিপক্ষ, বড় সব ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে খেলা। বাঁহাতি স্পিনার নিজেকে মেলে ধরেছেন আরও বেশি। উইকেট নিয়েছেন নিয়মিত। ওভারপ্রতি রান দিয়েছে মাত্র সাড়ে তিন করে। নিশ্চিতভাবেই ভবিষ্যতের জন্য দারুণ সম্ভাবনাময় একজন।
ঘরোয়া ক্রিকেটের পরীক্ষিত স্পিনাররাও অবশ্য খুব পিছিয়ে নেই। শীর্ষ পাঁচের বাইরে থাকলেও অফ স্পিনার সোহাগ গাজী ও বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি নিয়েছেন ১৬ উইকেট। আরেক বাঁহাতি স্পিনার নাবিল সামাদ ১৫টি। বোলিং অ্যাকশন শুধরে শেষ দিকে ফিরে মাত্র ৪ ম্যাচেই ১৪ উইকেট নিয়েছেন অফ স্পিনার সঞ্জিত সাহা।
সেরা পাঁচ:
বোলার | ওভার | মেডেন | উইকেট | সেরা | গড় | ওভারপ্রতি রান | ৪/৫ |
ফরহাদ রেজা (প্রাইম দোলেশ্বর) | ৯৪.৪ | ৪ | ২৭ | ৫/৪০ | ১৬.৫৯ | ৪.৭৩ | ২/১ |
রবিউল হক (খেলাঘর) | ১০৪.২ | ৫ | ২২ | ৫/৪১ | ২২.৭২ | ৪.৭৯ | ০/২ |
হাসান মুরাদ (বিকেএসপি) | ১০৪.০ | ৭ | ২০ | ৪/৩০ | ১৯.০৫ | ৩.৬৬ | ১/০ |
দেলোয়ার হোসেন (শাইনপুকুর) | ৬০.৪ | ৩ | ১৯ | ৫/৪৬ | ১৪.৮৯ | ৪.৬৬ | ০/১ |
কামরুল ইসলাম রাব্বি (গাজী গ্রুপ) | ৯২.৫ | ৪ | ১৭ | ৫/২৪ | ২৮.২৩ | ৫.১৭ | ০/১ |
এবং অলরাউন্ডার
সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকার কথা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নিশ্চিতভাবে জায়গা পেতে যাওয়া পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে নিয়ে। প্রস্তুতিটা ভালোই হয়েছে তরুণ অলরাউন্ডারের। আবাহনীর হয়ে ৮ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১২টি। ব্যাট হাতে ৭ ইনিংসে ফিফটি করেছেন তিনটি, দলের জয়ে বড় ভূমিকা ছিল প্রতিটিরই।
প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির টুর্নামেন্ট সেরা ফরহাদ রেজা এখানেও সফল দুই ভূমিকায়। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিই শুধু নন, ব্যাট হাতেও ছিলেন সফল। ফিফটি যদিও একটি, তবে শেষ দিকে ঝড়ো ও দারুণ কার্যকর ইনিংস খেলেছেন আরও কয়েকটি।
ব্যাটিংয়ে সেরা দশে থাকা মোসাদ্দেক বল হাতে নিয়েছেন ৭ উইকেট। সোহাগ গাজীর পারফরম্যান্সও উল্লেখ করার মতো। ১৬ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে সফল ছিলেন অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের চেয়ে। ৩১২ রান করেছেন ১৩৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে।
জাতীয় দলে জায়গা হারানো আরিফুল হক ৪৫.৮০ গড় ও ১০৪.০৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২২৯ রান। ৪৫.৫ ওভার বোলিং করেই উইকেট নিয়েছেন ১২টি।
ঘরোয়া ক্রিকেটের পরীক্ষিত অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান, মুক্তার আলি সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি। তবে নতুনদের মধ্যে উজ্জ্বল ছিলেন শাইনপুকুরের তরুণ অলরাউন্ডার সাব্বির হোসেন। ৩৭৩ রান করা ওপেনার উইকেট নিয়েছেন ১০টি।