ম্যাচটি বাংলাদেশের সিরিজে টিকে থাকার লড়াই। তবে মুশফিকুর রহিমের কাছে আরেকটু বেশি কিছু। অপেক্ষায় তার দারুণ এক মাইলফলক। ক্যারিয়ারের গৌরবদীপ্ত পথচলায় মুশফিক পা রাখতে চলেছেন ২০০ ওয়ানডের সীমানায়।
Published : 15 Feb 2019, 12:41 PM
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শনিবার ক্রাইস্টচার্চে মাঠে নামলেই মুশফিক খেলবেন ক্যারিয়ারের ২০০তম ওয়ানডে। বাংলাদেশের মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই অর্জনের স্বাদ পাবেন দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।
এখনও পর্যন্ত এই কৃতিত্ব একমাত্র মাশরাফি বিন মুর্তজার। বাংলাদেশ অধিনায়ক তার ২০৩ ওয়ানডের ২০১টি খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে, দুটি এশিয়া একাদশের হয়ে।
২০০৫ সালে ১৭ বছর বয়সে লর্ডসে টেস্ট অভিষেক দিয়ে শুরু মুশফিকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। ওয়ানডে খেলার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও এক বছরের বেশি। ২০০৬ সালের ৬ অগাস্ট হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয় ওয়ানডেতে। একই ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু সাকিব আল হাসানেরও।
অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের স্রেফ ব্যাটসম্যান হিসেবেই। তখনও উইকেটের পেছনে দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা কিপার খালেদ মাসুদ। তবে চার মাস পর যখন দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামেন দেশের মাটিতে, তখনই থেকেই পেয়ে যান কিপিং গ্লাভস।
প্রথম দুই ওয়ানডেতে ব্যাটিং পাননি। তৃতীয় ওয়ানডেতে প্রথমবার ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেন ১৯ বলে অপরাজিত ১৮ রান। ষষ্ঠ ইনিংসে করেন প্রথম ফিফটি। ২০০৭ বিশ্বকাপে খালেদ মাসুদকে বাইরে রেখে মুশফিককেই নেওয়া হয় কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে স্মরণীয় সেই জয়ে খেলেন অপরাজিত ৫৬ রানের ইনিংস। এরপর খালেদ মাসুদকে নিয়ে প্রশ্ন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায়।
ওই ইনিংসের পরও অবশ্য তার পথচলা খুব মসৃণ ছিল না। ব্যাট হাতে টানা ব্যর্থতায় ২০০৮ সালে জায়গা হারান ওয়ানডে দলে। তার বদলে দলে এসে ধীমান ঘোষও খুব সুবিধা করতে পারেননি। মুশফিক ফিরে পান জায়গা। কিন্তু থেকে যান ব্যর্থতার বৃত্তেই। তাই আবারও বাদ পড়তে হয় দল থেকে। সেই বছরই অস্ট্রেলিয়া সফরে আবার দলে ফেরেন ধীমান।
অস্ট্রেলিয়াতে তিন ওয়ানডে খেলে ধীমান খুব ভালো করতে পারেননি। পরে যোগ দেন বিতর্কিত ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল)। এরপর মুশফিকের ওপরই আস্থা রাখে দল। সময়ে সেটির প্রতিদানও মেলে।
২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সেই ইনিংসের পর টানা ৩৯ ইনিংসে কোনো ফিফটি ছিল না মুশফিকের। এই সময়টায় ব্যাট করেছেন তিন থেকে আট, সব পজিশনেই। টানা ইনিংসে শূন্য রানে আউটের তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে। অবশেষে খরা কাটে ২০০৯ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের শেষটিতে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ওপেন করতে নেমে খেলেন ৯৮ রানের ইনিংস।
এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের ইনিংসে করেছেন আরও একটি ফিফটি। ক্রমে হয়ে উঠেছেন দলের ব্যাটিংয়ের ভরসা। দেশের অন্যতম সেরা তারকা। ব্যাটিংটা দারুণ বলে উইকেটের পেছনেও তিনি বরাবরই ছিলেন প্রথম পছন্দ।
এখন তার ওয়ানডে রান ৫ হাজার ৩৫১, বাংলাদেশের যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। সেঞ্চুরিতেও তিনি দেশের তৃতীয়, ৬টি। দেশের ইতিহাসের সেরা ইনিংসগুলোর বেশ কটি এসেছে তার ব্যাট থেকে। অনেক স্মরণীয় জয়ে রেখেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান।
দীর্ঘ পথচলায় কিপিংয়ের রেকর্ডেও নিজেকে নিয়ে গেছেন সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে। ১৮৬ ইনিংসে কিপিং করে ২০৬টি ডিসমিসাল তার। খালেদ মাসুদের ১২৬ ডিসমিসাল পড়ে গেছে অনেক পেছনে। ১৫টি ডিসমিসালও নেই বাংলাদেশের আর কারও।
২০১১ সালে পেয়েছিলেন নেতৃত্বও। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৩৭টি ওয়ানডেতে টস করেছেন বাংলাদেশের হয়ে। ২০১২ সালে পূর্ণ শক্তির ওযেস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়, ২০১৩ সালে নিউ জিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার সাফল্য এসেছিল তার নেতৃত্বে।
মুশফিকের পর ২০০ ওয়ানডে খেলার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকবেন সাকিব। চোটের কারণে এই সফরে না থাকা অলরাউন্ডার খেলেছেন ১৯৫ ওয়ানডে, তামিম ইকবাল খেলেছেন ১৮৭টি।