এক দিনেই দেখা গেল অনেক রঙ। টেস্ট ক্রিকেট রোমাঞ্চ ছড়াল তার নানা রূপ দেখিয়ে। তবে দিন শেষে উজ্জ্বল বাংলাদেশই। শুরুতে ধুঁকতে থাকা দলকে বাঁচিয়ে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারেও নতুন দম দিলেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ বেলায় জিম্বাবুয়ের প্রতিরোধ ভাঙল স্পিনাররা। জয়ের মঞ্চ তৈরি করল বাংলাদেশ। অপেক্ষা এখন শেষ দিনে সেই মঞ্চে পা রাখার।
Published : 14 Nov 2018, 05:13 PM
ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত সেঞ্চুরিতে মিরপুর টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ২২৪ রান নিয়ে। জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্য ৪৪৩। বুধবার চতুর্থ দিন শেষ করেছে তারা ২ উইকেটে ৭৬ রান নিয়ে।
মিরপুর টেস্ট জিতে সমতায় সিরিজ শেষ করতে শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৮ উইকেট। জিম্বাবুয়ের চাই আরও ৩৬৭ রান। তবে তাদের লক্ষ্য থাকবে দিন কাটিয়ে দেওয়া। ড্র করতে পারলেও তো সিরিজ জয়।
কৌতুহলের রেশ নিয়ে শুরু হয়েছিল চতুর্থ দিন। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার প্রতিপক্ষকে ফলো অন করাবে বাংলাদেশ? অপেক্ষা দীর্ঘায়িত করে দল নামল ব্যাটিংয়ে। উইকেট পড়তে থাকল টপাটপ। সঙ্গে প্রশ্নদের ওড়াউড়ি, সিদ্ধান্ত কি তবে আত্মঘাতী? সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের শট নির্বাচন আত্মঘাতী ছিল নিশ্চিতভাবেই। কাইল জার্ভিসের অনেক বাইরের বলে ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ দিলেন ইমরুল কায়েস। এ নিয়ে টানা ২০ ইনিংস কাটালেন ফিফটিবিহীন। এক বল পরই জার্ভিসের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড লিটন।
প্রথম ইনিংসের দুই ত্রাতা এবার রণেভঙ্গ দিলেন অল্পতেই। দুজনই শিকার ডোনাল্ড টিরিপানোর। বেরিয়ে যাওয়া বলে জোর করে ব্যাট চালিয়ে দিলেন মুমিনুল হক। অফ স্টাম্পের বাইরের বল হাওয়ায় ভাসিয়ে পুল করে ক্যাচ দিলেন মুশফিকুর রহিম।
প্রথম ইনিংসের ২১৮ রানের লিড ছিল বড় ভরসা হয়ে, এর পরও ২৫ রানে ৪ উইকেট হারানো মানে শঙ্কার স্রোত বয়ে যাওয়া। চোটের কারণে টেন্ডাই চাটারার বোলিং করতে না পারা বড় স্বস্তি হয়ে আসে বাংলাদেশের জন্য।
এরপরও জার্ভিস ও টিরিপানো যেভাবে বল করছিলেন, বিপদ ছিলই বাংলাদেশের। মোহাম্মদ মিঠুন তখন অভিষেকে জোড়া শূন্যের শঙ্কায়। মাহমুদউল্লাহর টেস্ট ক্যারিয়ার বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ। চাপে থাকা দুই ব্যাটসম্যানকে দ্রুত ফেরাতে পারলে ম্যাচেও চমক জাগিয়ে ফিরতে পারত জিম্বাবুয়ে।
কিন্তু মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ এই সময়কেই বেছে নিলেন নিজেদের মেলে ধরতে। মিঠুনের শুরুটা যদিও ছিল নড়বড়ে। ব্যাট চালাচ্ছিলেন ওয়ানডের ঘরানায়। তবে সৌভাগ্যবশত টিকে যান। মাহমুদউল্লাহ শুরু থেকেই ছিলেন বেশ আত্মবিশ্বাসী।
খানিকটা সময় কাটানোর পর দুজনের ব্যাটেই রান এসেছে সাবলীলভাবে। অভিষেক ইনিংসে শূন্যের পর বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিফটি করেছেন মিঠুন। পরে আউট হয়েছেন দলের প্রয়োজনে দ্রুত রান বাড়াতে গিয়ে। সিকান্দার রাজাকে বিশাল এক ছক্কা মারার পরের বলে আরেকটি চেষ্টায় আউট হয়েছেন ৬৭ রানে।
পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মিঠুনের ১১৮ রানের জুটিতে দল পেয়ে গেছে বড় লিড। এরপর ছিল জিম্বাবুয়েকে রানের ভারে আরও পিষ্ট করার চেষ্টা। আর মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরির অপেক্ষা।
আরিফুল হক না পারলেও মাহমুদউল্লাহকে দারুণ সঙ্গ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বারবার প্রান্ত বদলে অধিনায়ককে সুযোগ করে দেন রান বাড়ানোর। চা-বিরতির আগে শেষ বলে দুটি রান নিয়ে মাহমুদউল্লাহ স্পর্শ করেন বহু কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরি। আসে ইনিংস ছাড়ার ঘোষণাও।
প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির ৮ বছর ৯ মাস ও ৩৫ টেস্ট পর পেলেন আরেকটি টেস্ট সেঞ্চুরি। দুই দিক থেকেই বাংলাদেশের অপেক্ষার রেকর্ড।
শেষ সেশনের পুরোটা আর শেষ দিনের তিন সেশন, বোলারদের জন্য যথেষ্ট সময়ই দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ব্রায়ান চারির উদ্বোধনী জুটি দারুণ খেলে অস্বস্তিতে ফেলে দেয় বাংলাদেশকে। ২৩ ওভার খেলে গড়েন ৬৮ রানের জুটি।
অবশেষে মিরাজের এনে দেওয়া উইকেটে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে দল। ফিরিয়ে দেন মাসাকাদজাকে। খানিকপর দারুণ খেলতে থাকা ব্রায়ান চারিকে ৪৩ রানে ফেরান তাইজুল। আলোকস্বল্পতায় ৬ ওভার আগে দিনের খেলা শেষ হলেও দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেওয়ার স্বস্তিতে মাঠে ছাড়ে বাংলাদেশ।
সেই স্বস্তিকেই ম্যাচ জয়ের তৃপ্তিতে রূপ দেওয়ার অপেক্ষা শেষ দিনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫২২/৭ (ডি.)
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ৩০৪
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৫৪ ওভারে ২২৪/৬ (ডি.) (লিটন ৬, ইমরুল ৩, মুমিনুল ১, মিঠুন ৬৭, মুশফিক ৭, মাহমুদউল্লাহ ১০১*, আরিফুল ৫, মিরাজ ২৭*; জার্ভিস ১১-২-২৭-২, টিরিপানো ১১-১-৩১-২, উইলিয়ামস ১৬-২-৬৯-১, রাজা ৭-০-৩৯-১, মাভুটা ৯-০-৫২-০)।
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস:(লক্ষ্য ৪৪৩) ৩০ ওভারে ৭৬/২ (মাসাকাদজা ২৫, চারি ৪৩, টেইলর ৪*, উইলিয়ামস ২*; মুস্তাফিজ ৩-১-২-০, তাইজুল ১৩-২-৩৪-১, খালেদ ৪-১-১৫-০, মিরাজ ৭-২-১৬-১, আরিফুল ৩-১-৭-০)।