ভয় ছিল প্রবল। সামর্থ্য নিয়ে ছিল সংশয়। শঙ্কার মেঘ জমা করেছিল ইতিহাসও। তবে শেষ দিনে বাংলাদেশ দল দাঁড় করাল বিশ্বাসের দুর্ভেদ্য দেয়াল, যে দেয়ালে চিড় ধরাতে পারেনি কোনো কিছুই। মুমিনুল হকের মতে, বিশ্বাসের মন্ত্রেই বাংলাদেশ দূরে ঠেলেছে নেতিবাচকতার ভাইরাস। একই সুর মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠেও।
Published : 04 Feb 2018, 07:22 PM
চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিন শুরুর সময় ইনিংস পরাজয় এড়াতেই বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১১৯ রান। আগের দিনই হারাতে হয়েছিল ৩ উইকেট। দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম শেষ দিনে কেবলই দর্শক।
পরিস্থিতির প্রবল চাপের সময়টায় অতীত থেকে নেওয়ার মত প্রেরণাও খুব বেশি ছিল না। শেষ দিনে হারের মুখে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় লড়াই করে টেস্ট ড্র করার নজির আগে খুব বেশি দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার জয়ের দিকেই পাল্লা ছিল হেলে।
সেই বাংলাদেশই এবার শেষ দিনে দারুণ খেলে ড্র করল টেস্ট। প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ম্যাচ বাঁচানোর নায়ক মুমিনুল হক। শেষ দিনে দুর্দান্ত জুটিতে অন্যতম নায়ক লিটন দাস। চতুর্থ উইকেটে দুজন ১৮০ রানের জুটি গড়েছেন ৩০৬ বলে।
মুমিনুল ও লিটনের ব্যাটে যে প্রতিজ্ঞা দেখা গেছে, সেটিতে ফুটে উঠেছে দলের চাওয়ারই প্রকাশ। ম্যাচ শেষে মুমিনুল জানালেন, বিশ্বাসের বর্ম গায়ে চাপিয়ে শঙ্কাগুলোকে কাছে ঘেষতে দেননি তারা।
“এই পরিস্থিতিতে আমরা আগেও অনেকবার পড়েছিলাম। এসব সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো মানসিকভাবে শক্ত থাকা। নিজের মাঝে বিশ্বাস রাখা। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে টিমবয় পর্যন্ত, এমনকি আপনারা সাংবাদিক ও পুরো দেশের মানুষ, সবারই মনে হয় বিশ্বাস ছিল। কিছু শক্তভাবে বিশ্বাস করলে সেটি ধরা দেবেই।”
“রিয়াদ ভাইয়ের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা হয়েছিল। আমরা কথা বলেছি এটা নিয়ে। কারও মধ্যে যেন কোনো সংশয় থাকে না যে আমরা ম্যাচ বাঁচাতে পারব না। একজনের মধ্যে সংশয় দেখা দিলেও সেটি ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়বে। আমরা সবাই কথা বলেছি যেন এই সংশয় না থাকে। আমরা যেন বিশ্বাস করি। আমরা সবাই বিশ্বাস করেছি, খেলা শেষ করে সুন্দরভাবে হাসি মুখে মাঠ ছাড়ব।”
শেষ দিনের শঙ্কার ভূত তাড়াতে বিশ্বাসের মন্ত্রের কথা বললেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও।
“পরিকল্পনা ছিল এমন যে, আমাদের মধ্যে যেন ওই বিশ্বাস থাকে যে আমরা বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করছি এবং ওইভাবেই যেন নিজেদের মেলে ধরি। আমাদের কথা হয়েছিল ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে থাকা। গতকাল আমরা যে অবস্থায় ছিলাম, হারের আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছিল। এজন্যই আমাদের মধ্যে বিশ্বাস থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, প্রয়োজন ছিল নিজেদের দায়িত্ব মনে রেখে ব্যাটিং করা।”
ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মূল কৃতিত্ব দিলেন শেষ দিনের দুই নায়ককেই।
“উইকেট আজও খুব ভালো ছিল। নিজেদের স্কিলে আমাদের বিশ্বাস ছিল। শুধু একটা জুটির দরকার ছিল। যেটা মুমিনুল ও লিটন করেছে। কষ্ট করে করে ব্যাটিং করেছে। তাদের কষ্টের ফল আমরা সবাই পেয়েছি। সুতরাং মূল কৃতিত্বটা তাদেরই দিতে হবে।”
“ওরা আজ খুব ভালো ইনিংস খেলেছে। ওদের ইনিংস খুবই লড়াকু ছিল। খুব ভালো লেগেছে। ওদের পারফরম্যান্সে আমি খুবই খুশি।”