"বাংলাদেশের ইতিহাসের উপজেলায় এতকম ভোট কখনো পড়ে নাই"।
Published : 10 May 2024, 03:25 PM
বাংলাদেশের ইতিহাসে উপজেলা নির্বাচনে এত কম ভোট অতীতে কখনো পড়েনি মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ভোটার উপস্থিতি প্রমাণ করেছে সরকারের সাথে জনগণ নেই।
আগামীতে গরম কমে আসলে সরকারবিরোধীরা আরো বড় আকারে রাস্তায় নামবে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীতে এক অবস্থান কর্মসূচিতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “মানুষ সরকারকে আগেও ভোট দেয়নি, এখনো দেয় না। এই যে উপজেলা নির্বাচন (প্রথম ধাপ) হয়ে গেল দেখলেন তো… বাংলাদেশের ইতিহাসের উপজেলায় এত কম ভোট কখনো পড়ে নাই…এটা ভোটের সরকারি হিসাব, পত্র-পত্রিকায় লিখছে।
“প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা (সংসদে) করলেন, কোনো কিছু তোয়াক্কা করি না, জনগণ আমার সঙ্গে আছে। জনগণ মানে কি? ওবায়দুল কাদের আপনার সাথে আছে…. কেউ আছে আপনার সাথে? আপনার দলের লোকও আপনার সাথে নাই। যদি থাকত তাহলে ৭ জানুয়ারি ভোট দিতে যেত, উপজেলা নির্বাচনে তারা ভোট দিতে যেত।”
ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয় বুধবার। পরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, নির্বাচনে ভোট পড়েছে গড়ে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। ইভিমে ভোটের হার ৩১.৩১ শতাংশ, ব্যালটে ৩৭.২২ শতাংশ।
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ে মান্না বলেন, “জিনিসের দাম যে সরকার কমাতে পারে না, বিদ্যুতের দাম কমাতে পারে না, বৈদেশিক ঋণের পরিমান এখন একশ বিলিয়ন ডলারের বেশি…ওই ঋণের টাকা শোক করবার জন্যে আবার বিশেষভাবে অর্থনৈতিক কাউন্সিলের বৈঠক বসায়। আসলে সরকার কি আছে?
“আমি বলছি, তিন মাস বিদেশ থেকে আমদানি করবার টাকা নেই সরকারের কাছে। মে মাস পার করবে? রিজার্ভ বাড়াতে পারবে? বিদেশ থেকে প্রবাসীরা টাকা পাচ্ছে আমাদের দেশে সেটা পাঠালেও সরকারের কাছে যাচ্ছে না। আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির আর কোনো সুযোগ নাই্, বিদেশিরা যদি আমাদের ডলার দেয় কেবলমাত্র এই দেশ বাঁচতে পারে, নইলে এদেশ বাঁচতে পারবে না।”
বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল এবং রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলনে’র উদ্যোগে এই অবস্থান কর্মসূচি হয়।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে মান্না বলেন, “যারা মনে করেন, বিরোধী দল দুর্বল হয়েছে, সরকার আরও শক্তিশালী হয়েছে, তাদেরকে অর্থনৈতিক চিত্র দেখার জন্য বলি। বিরোধী দল দুর্বল হয়নি, আমরা আমাদের দলেই আছি।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতির ভাষ্য, মানুষ যখন সরকারের দুর্বলতা বুঝবে, তখন রাজপথে সবাই নেমে আসবে।
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তারা (সরকার) ভোট কেড়ে নিয়েছে, জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, আপনার মাথায় ঋণের বোঝা বাড়িয়ে দিয়েছে। জনগণের কোনো কিছু করতে পারবে না। এই সরকারের হটাতে হবে, ওদের সাথে কোনো আপস নাই। গরম একটু একটু করে কমছে, গরম যত কমবে আমরা আরো বড় আকারে রাস্তায় আসবো এরকম চিন্তা করছি… দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়?”
অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “সরকার আইনের দোহাই দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার পথ রুদ্ধ করে রেখেছে। মাননীয় আইনমন্ত্রীকে বলব তাকে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা নিন। নইলে আপনাদের এই প্রতিহিংসার জবাব জনগণই একদিন দেবে।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “হঠাৎ করে রেলের ভাড়া বাড়ানো হল, কারো কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করা লাগল না, হঠাৎ করে দেখবেন তেলের দাম, পেট্রোলের দাম, অকটেনের দাম বাড়ানো হল, হঠাৎ করে দেখবেন গ্যাসের দাম বাড়ানো হল। আগে গণশুণানি হতো এনার্জি রেগুলেটারি কমিশনে, আমরা যেতাম বিএনপির পক্ষ থেকে, আজকে সেই গণশুণানির ব্যবস্থাটাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।”
আলালের অভিযোগ, “যখন যেটা মন চায় তখন তারা সেটা করে করে। এই নির্লজ্জ বেহায়া নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন দেখার জন্য রাশিয়া যায় যেখানে নির্বাচনের ‘ন’ বলতে কিছু নাই। এই কমিশন যখন যেটা মন চায় তারা সেটা বলে। এদেরকে রুখে দিতে হবে।”
সংগঠনের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মাওলানা শাহ নেছারুল হক, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।