আগের ম্যাচেই শেষ ওভারে ১৫ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি রংপুর রাইডার্স। এবার চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। আবার তালগোল পাকাতে বসেছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। তবে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে এবার দলকে দারুণ জয় এনে দিয়েছেন থিসারা পেরেরা।
Published : 25 Nov 2017, 09:16 PM
তাসকিনের শেষ ওভারে প্রথম দুই বল থেকে এক ছক্কায় থিসারা নেন ৮ রান। পরের দুই বলে দুটি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে রংপুর। পঞ্চম বলে ঝুঁকি নিয়ে দুই রান করে আবার স্ট্রাইকে থাকেন থিসারা।
তাসকিনের ওয়াইড বলে কমে একটি রান। জয়ের জন্য শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রান। ডিপ মিড উইকেট দিয়ে দারুণ এক ছক্কায় দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন থিসারা। রংপুর পেয়ে যায় চলতি আসরে সবচেয়ে বড় লক্ষ্য তাড়া করে জয়।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ উইকেটে জিতেছে রংপুর। ৮ ম্যাচে চতুর্থ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে দলটি উঠে এসেছে চার নম্বরে। অন্য দিকে, সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে চিটাগং আছে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতেই।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারে ছক্কা হাঁকান ক্রিস গেইল। পরের ওভারে আল আমিন জুনিয়রকে উড়ান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ওই দুই ছক্কা ছাড়া রানের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছিল দুই বিস্ফোরক ওপেনারকে।
তাসিকন আহমেদের দ্বিতীয় ওভারে ম্যাককালাম তুলে নেন চার আর গেইল হাঁকান ছক্কা। শুভাশিস রায়ের জায়গায় দলে আল আমিন জুনিয়র হানেন প্রথম আঘাত। বোল্ড করেন ম্যাককালামকে।
মন্থর রানের চাকায় গতি আনতে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন মাশরাফি। পরিকল্পনায় সফল রংপুর অধিনায়ক। মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলে চার দিয়ে রানের খাতা খোলা ডানহাতি ব্যাটসম্যান এলোমেলো করে দেন চিটাগংয়ের বোলিং।
আল আমিনকে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে ফেলেন গ্যালারির দ্বিতীয় তলায়। স্টিয়ান ফন সিলকে মাশরাফি উড়ান লং অফ দিয়ে। এর মাঝে সৌম্য সরকারের ওভারে দুটি চারে তুলে নেন ১৩ রান।
লং অফ দিয়ে সানজামুল ইসলামকে ছক্কায় স্বাগত জানিয়েছিলেন মাশরাফি। ফিরেন সেই সানজামুলকেই এগিয়ে এসে উড়ানোর চেষ্টায় বোল্ড হয়ে। পরের ওভারে তানবীর হায়দারের বলে সীমানায় লুক রনকিকে ক্যাচ দেন গেইল। ২৫ বলে তিনটি ছক্কা ও একটি চারে ফিরেন ৩৩ রান করে।
চলতি আসরের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রবি বোপারা ফিরেন দুই অঙ্কে গিয়েই। সৌম্যকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ মিডউইকেটে। সেই ওভারের শেষ তিন বলে দুটি চারে ১০ রান তুলে নেন মোহাম্মদ মিঠুন।
২৯ বলে চারটি চারে ৪৪ রান করা এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান বোল্ড করে রংপুরের জন্য সমীকরণ কঠিন করে ফিলেন লুইস রিস।
সেখান থেকে প্রায় একার চেষ্টায় রোমাঞ্চকর উত্তেজনার ম্যাচে দলকে জয় এনে দেন থিসারা। ১৪ বলে তিনটি ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ২৮ রানে।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত লুক রনকি ও এনামুল হককে হারায় চিটাগং। একটি করে ছক্কা-চার হাঁকিয়ে রান আউট হয়ে ফিরে যান অধিনায়ক রনকি। বোলিংয়ে চতুর্থ ওভারে এনামুলকে বিদায় করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
আরও একবার ভালো শুরু নষ্ট করে ফিরেন সৌম্য সরকার। এ পর্যন্ত খেলা সাত ইনিংসের তিনটিতে যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। চারবার আউট হন ত্রিশের ঘরে। এবার ২৬ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে ৩০ করে বোল্ড হন অফ স্পিনার নাহিদুল ইসলামের বলে।
৪০ বলে ৪টি ছক্কা আর তিনটি চারে ৬৮ রান করা ফন সিলকে বিদায় করেন থিসারা পেরেরা। আগের ম্যাচে ৯৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলা রাজা ফিরেন ২২ রান করে। শেষে ১৬ বলে ২৫ রানে দলের সংগ্রহ ১৭০ ছাড়ান নাজিবুল্লাহ।
দলকে জেতানোর জন্য তাদের এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না। মাশরাফি আর থিসারার দুটি ঝড়ো ইনিংসে দারুণ এক জয় তুলে নেয় রংপুর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৭৬/৭ (রনকি ১১, সৌম্য ৩০, এনামুল ৭, ফন সিল ৬৮, রাজা ২২, নাজিবুল্লাহ ২৫, রিস ১, তানবীর ৩*, আল আমিন জুনিয়র ১*; সোহাগ ০/৩৫, মালিঙ্গা ১/৩৭, মাশরাফি ১/২৪, নাহিদুল ১/৪, রুবেল ১/৩৯, থিসারা ১/৩৫)
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৮০/৭ (ম্যাককালাম ১৫, গেইল ৩৩, মাশরাফি ৪২, মিঠুন ৪৪, বোপারা ১১, থিসারা ২৮*, নাহিদুল ০, শাহরিয়ার ০, মালিঙ্গা ০*; রাজা ০/৭, আল আমিন জুনিয়র ১/২৯, তাসকিন ১/৩৮, ফন সিল ০/৩০, সানজামুল ১/২৩, তানবীর ১/১৪, রিস ১/১৩)
ফল: রংপুর রাইডার্স ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মাশরাফি বিন মুর্তজা