বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা; সকালের বৃষ্টি ততক্ষণে থেমে গেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যদিও অনুশীলনে নামেননি তখনও। তবে নেমে গেছেন চন্দিকা হাথুরুসিংহে। শ্রীলঙ্কান কিউরেটর গামিনি সিলভাকে নিয়ে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কান কোচ চলে গেলেন উইকেটে। কোচ অনেকক্ষণ ধরে দেখে নিলেন উইকেট, ম্যাচের আগে সবচেয়ে বেশি আগ্রহের কেন্দ্রে যেটি!
Published : 27 Oct 2016, 05:09 PM
কেমন হবে মিরপুরের ২২ গজ? চট্টগ্রাম টেস্টের পর মুশফিকুর রহিম বলেছিলেন, ক্যারিয়ারে প্রথমবার চাওয়া অনুযায়ী উইকেট পেয়েছিলেন। তুমুল প্রশংসিত হয়েছেন মাঠের কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু। ১৫ মাস পর খেলতে নেমেও বাংলাদেশ যে জয়ের কাছে যেতে পারল, সেটিতে বড় ভূমিকা ছিল প্রত্যাশামতো উইকেট পাওয়া। মিরপুরের উইকেট নিয়ে তাই কৌতুহল বেড়েছে আরও বেশি।
এমনিতে চট্টগ্রামের মতো একই রকম উইকেট মিরপুরে তৈরি করা কঠিন। মাটির ধরনই যে আলাদা! জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট বাদামী মাটির। কিন্তু মিরপুরের উইকেট শুরু থেকেই কালো মাটির। সময়ের সঙ্গে সেটা খানিকটা বদলেছে। তবে এখনও খানিকটা কালচে। উইকেট যতোই মন্থর ও টার্নিং থাকুক, মিরপুরের উইকেটে পেসাররা একটু বাউন্স পায় সব সময়ই।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকের কণ্ঠেও উঠে এল উইকেটের এই বাস্তবতা।
“ঢাকার উইকেট অবশ্যই আলাদা হবে। এখানে উইকেটের মাটি অন্যরকম। জানি না কেমন আচরণ করবে। তবে যেমনই করুক, সুবিধা পেলে আমরা আশা করব, আমাদের স্পিনাররা সেটা কাজে লাগাতে পারবে।”
বাস্তবতাগুলো মেনেই চেষ্টা করা হয়েছে, মিরপুরের উইকেটকে যতটা সম্ভব চট্টগ্রামের রূপ দেওয়ার। রাখা হয়েছে শুষ্ক। তবে উইকেট ও কন্ডিশনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে ম্যাচের আগের দিনের বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড় কায়ান্টের প্রভাবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে টানা বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টি থেমে যায়। বৃষ্টি দেখে প্রথমে অনুশীলন বাতিল করলেও পরে অবস্থার উন্নতি দেখে অনুশীলনে আসে বাংলাদেশ। দুপুরের দিকে ছিল প্রচণ্ড রোদ ও গরম। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায় আকাশ। বিকেল ৪টায় আবার নামে মুষলধারে বৃষ্টি। পুরো মাঠ ঢেকে দেওয়া হয় কাভারে।
বুধবার বিকেলে উইকেট দেখে খুশিই ছিলেন মুশফিক। কিন্তু বৃষ্টির পর ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উইকেটের সম্ভাব্য আচরণ। বাংলাদেশ অধিনায়ক সেটি স্বীকারও করছেন। তবে জানাচ্ছেন, বৃষ্টিতেও খুব বেশি বদলাবে না পরিকল্পনা।
“পরিকল্পনার বদল একটু হলেও হবে। তবে আমি তো সকালে দেখে ভেবেছি টানা এক-দুই দিন বৃষ্টি হবে। এখন মাঠে এসে দেখি প্রচণ্ড গরম। যদিও আমার তো মনে হয় না খুব বেশি প্রভাব ফেলবে। আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল, সেদিক থেকে একটু হলেও হয়ত নড়চড় হতে পারে।”
“হয়ত রোদ থাকলে উইকেটের ড্রাই আপ ভিন্ন হতে পারত। কিন্তু গতকালও উইকেটে দেখে আমরা খুশি ছিলাম। প্রায় প্রস্তুত উইকেট। খুব বেশি কাজ করার নেই ওখানে। হালকা ময়েশ্চার থাকলে পেসারদের পাশাপাশি স্পিনারদেরও সাহায্য করবে। বল স্পিন ধরবে, গ্রিপ করবে।”
মুশফিকের ধারণা, উইকেটের আচরণ যেটাই হোক, তা দ্বিধায় ফেলবে ইংলিশদের।
“আশা করি, এই উইকেট নিয়ে কোনো ক্লু ইংল্যান্ড পাবে না। আমরা চেষ্টা করব ঘরের মাঠের পরিচিত উইকেটে খেলার সুবিধা কাজে লাগাতে।”
তবে উইকেট নিয়ে এত আলোচনার মাঝে আসল কাজটি ভুলে যাচ্ছেন না মুশফিক। মনে করিয়ে দিয়েছেন, উইকেট যেমনই হোক, ভালো খেলার বিকল্প নেই।
“উইকেটের চেয়েও বেশি নির্ভর করে আপনি কতটা ভালো করতে পারছেন। উইকেট যেমনই হোক, ভালো জায়গায় বল না করলে বা বল সিলেকশন ভালো না হলে, ভালো করা কঠিন। উইকেট এখানে চট্টগ্রামের মতো যদি না হয়, কিংবা আরও ভালোও হয়, চেষ্টা করব দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার। চট্টগামেও যেটা হয়েছে, এখানেও প্রথম ইনিংসটা গুরুত্বপূর্ণ হবে।”
দিন শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটিই। উইকেট যেমনই হোক, সেটির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়া এবং কাজে লাগানো।