সাইফ ও দুই সাব্বিরের সেঞ্চুরি

তিন সেঞ্চুরির দিনে আক্ষেপে পুড়েছেন ফজলে মাহমুদ ও প্রান্তিক নওরোজ নাবিল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2023, 01:03 PM
Updated : 18 March 2023, 01:03 PM

ইনিংস শুরু করতে নেমে চমৎকার এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন সাইফ হাসান। পরে বল হাতেও নিজেকে মেলে ধরলেন তিনি। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে নবাগত অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে উড়িয়ে দিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। 

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তৃতীয় দিন শনিবার শতকের দেখা আরও পেয়েছেন লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের সাব্বির রহমান ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাব্বির হোসেন। অল্পের জন্য তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পাননি শেখ জামালের ফজলে মাহমুদ ও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের প্রান্তিক নওরোজ নাবিল। 

সাইফের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে শেখ জামালের জয় 

বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ৭ ছক্কা ও ৬ চারে ১০৮ রানের ইনিংস খেলেন সাইফ। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ২ ছক্কা ও ৯ চারে ৭৮ রানে থামেন সৈকত আলি। ফজলে মাহমুদের ব্যাট থেকে আসে ৪ ছক্কা ও ৬ চারে ৮০ রান। 

তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের নৈপুণ্যে ৩১৭ রানের পুঁজি গড়ে শিরোপাধারী শেখ জামাল। পরে অগ্রণী ব্যাংককে ১১৪ রানে গুটিয়ে ২০৩ রানের বড় জয় তুলে নেয় তারা।

দারুণ বোলিংয়ে স্রেফ ১৮ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেওয়া সাইফ ছাড়া ম্যাচ সেরা আর কে! দুটি করে শিকার শফিকুল ইসলাম ও পারভেজ রাসুলির। 

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শেখ জামালকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন সাইফ ও সৈকত। তাদের ১২৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ২৭তম ওভারে আরাফাত সানির বলে সৈকত ক্যাচ তুলে দিলে। 

ফজলে মাহমুদের সঙ্গে ৮৯ রানে জুটি গড়েন সাইফ। ১০৪ বলে অষ্টম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরি করা সাইফকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন আবু হায়দার রনি। সেঞ্চুরির পথে থাকা ফজলে মাহমুদও এলবিডব্লিউ হন এই পেসারের বলে। 

রান তাড়ায় নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় অগ্রনী ব্যাংক। টপ অর্ডারের কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। মিডল অর্ডারের কেউ ধরতে পারেননি দলের হাল। 

দলটির হয়ে ২৫ রানও ছুঁতে পারেননি কেউ। দুই অঙ্ক স্পর্শ করা তিন জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪ রান ইলিয়াস সানি ও জাহিদ জাভেদের। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান আজিম কাজি এদিন ফেরেন স্রেফ ১৫ রান করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩১৭/৫ (সাইফ ১০৮, সৈকত ৭৮, ফজলে মাহমুদ ৮০, নুরুল ১৫, জিয়াউর ১, পারভেজ ১৭*, তাইবুর ১০*; সানি ৯-০-৩৭-১, আবু হায়দার ১০-০-৬৫-৩, এনামুল ১০-০-৭৯-০, ইলিয়াস ৮-০-৪২-০, জাহিদ ৯-০-৪৯-১, শরিফুল্লাহ ৪-০-৪৫-০)

অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৩১.৪ ওভারে ১১৪ (আজমির ৬, সাদমান ৪, শামসুল ৩, ইলিয়াস ২৪, মার্শাল ৭, আজিম ১৫, শরিফুল্লাহ ০, জাহিদ ২৪*, আবু হায়দার ৬, এনামুল ৮, সানি ৮; রবিউল ১০-১-৩৫-১, শফিকুল ৪-১-১৪-২, পারভেজ ১০-১-৪১-২, সাইফ ৫.৪-০-১৮-৩, আরিফ ২-১-৫-১)

ফল: শেখ জামাল ২০৩ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: সাইফ হাসান

সাব্বিরের অপরাজিত শতকে রূপগঞ্জের জয় 

আবদুল্লাহ আল মামুনের ফিফটি ও বাকিদের টুকটাক অবদানে লড়ার মতো পুঁজি গড়ে সিটি ক্লাব। কিন্তু তাদের বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি সাব্বির রহমান। রান তাড়ায় চমৎকার ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি করে জয় নিয়ে ফেরেন লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের এই ব্যাটসম্যান। 

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিটি ক্লাবকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে রূপগঞ্জ। প্রতিপক্ষের ২৪৮ রান তারা টপকে যায় ৫২ বল বাকি থাকতে।

১৮ চারে ১০৭ বলে ১১০ রানের ইনিংস খেলে রূপগঞ্জের জয়ের নায়ক সাব্বির। অবদান কম নয় অধিনায়ক ইরফান শুক্কুরেরও, ২ ছক্কা ও ৮ চারে ৭৪ রান করেন তিনি। 

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিটি ক্লাবের ব্যাটসম্যানরা ভালো শুরু পেলেও খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। তাদের প্রথম ৮ ব্যাটসম্যানই যান দুই অঙ্কে। কিন্তু ফিফটি পান কেবল একজন। 

এক ছক্কা ও চারটি চারে ৫১ রান করেন লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মামুন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭ রান আসে তিন জনের ব্যাট থেকে। 

রান তাড়ায় দ্রুত মুনিম শাহরিয়ারকে হারায় রূপগঞ্জ। সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে পথে রাখেন সাব্বির ও পারভেজ হোসেন ইমন। ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৩৯ রান করে বিদায় নেন পারভেজ। 

এরপর দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন সাব্বির ও ইরফান। তাদের ১৫৭ রানের জুটিতে জয়ের দুয়ারে পৌঁছে যায় রূপগঞ্জ। কাজ শেষ করে ফিরতে পারেননি ইরফান, ২ ছক্কা ও ৮ চারে ৭৪ রান করেন তিনি। 

চিরাগ জানিকে নিয়ে বাকিটা সারেন ৯৭ বলে পঞ্চম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরি করা সাব্বির। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিটি ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৪৮ (জয়রাজ ১৭, তৌফিক খান ২৭, মামুন ৫১, সাইফুল ২৪, আসিফ আহমেদ ৩১, রাফসান ২৩, রবিউল ২৭, রায়ান ২৭, ইফ্রান ৮, আসিফ হাসান ০, তৌফিক আহমেদ ০*; চিরাগ ১০-২-৩৮-০, আল-আমিন ৮-০-৫৯-২, নাঈম জুনি. ১০-০-৩৩-৩, সোহাগ ১০-০-৪৭-১, মুক্তার ৭-১-৩৩-০, রুয়েন ৫-০-২৯-১)

লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৪১.২ ওভারে ২৫২/৩ (মুনিম ৫, পারভেজ ৩৯, সাব্বির ১১০*, ইরফান ৭৪, চিরাগ ১৫*; তৌফিক আহমেদ ৮-০-৭০-০, রবিউল ৭-১-২৩-০, ইফরান ৭-০-৪০-০, আসিফ হাসান ৮-১-৪৫-১, আসিফ আহমেদ ৬-০-৩৩-১, রায়ান ৩.২-১-১৫-০, রাফসান ১-০-৮-০, জয়রাজ ১-০-১৬-০)

ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: সাব্বির রহমান

বিফলে গেল সাব্বির হোসেনের শতক 

সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে পারেননি প্রান্তিক নাবিল। তবে ব্যাট হাতে বাকিদের অবদানে আড়াইশ ছাড়ানো জুটি গড়ে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। লক্ষ্য তাড়ায় দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে একাই টানেন সাব্বির হোসেন। সতীর্থদের ব্যর্থতায় যদিও দিন শেষে হারের হতাশা ভর করে তার মনে। 

নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব উসমান আলি স্টেডিয়ামে ব্রাদার্সকে ৫৮ রানে হারায় প্রাইম ব্যাংক। ২৬৮ রানের পুঁজি নিয়ে প্রতিপক্ষকে তারা গুটিয়ে দেয় ২১০ রানে।

প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ২ ছক্কা ও চারটি চারে ৮৩ রান করেন নাবিল। শাহাদাত হোসেন দিপুর ব্যাট থেকে আসে ৬ চারে ৪৩ রান। 

ব্রাদার্সকে জয়ের আশা দেখানো সাব্বির তিনে নেমে করেন ১২৫ রান। তার ১১৮ বলের ইনিংসটি সাজানো ৮ ছক্কা ও ৯ চারে। বোলিংয়েও আলো ছড়িয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। দল হারলেও তাই ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতে। 

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা প্রাইম ব্যাংককে দারুণ শুরু এনে দেন নাবিল ও শাহাদাত। দুজনে গড়েন ৮৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। এরপর তেমন কোনো বড় জুটি পায়নি দলটি। 

দুই ওপেনার ছাড়া দলটির আরও ৭ ব্যাটসম্যান স্পর্শ করেন দুই অঙ্ক। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ ছুঁতে পারেননি ৩০ রান।

লক্ষ্য তাড়ায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় ব্রাদার্স। তারা দুইশ পার করে মূলত সাব্বিরের ইনিংসে ভর করে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন তিনি ১০৫ বলে। 

দুটি করে ছক্কা-চারে ৪০ রান করেন আনিসুল। দুই অঙ্কে যেতে পারেন আর কেবল দুইজন। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মিজানুর রহমান এদিন ফেরেন ৪ রান করে। ২ রানে শেষ ৪ উইকেট হারায় ব্রাদার্স।

প্রাইম ব্যাংকের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন দুই পেসার রেজাউর রহমান রাজা ও রুবেল হোসেন। রেজাউর নেন ৪ উইকেট, রুবেলের প্রাপ্তি ৩টি। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৬৮/৮ (নাবিল ৮৩, শাহাদাত ৪৩, মিঠুন ১৬, নাসির ১১, আদিল ১৩, আল-আমিন ২০, কাপালী ২৮, তাইজুল ১৬*, রাজা ২, আলিস ১৭*; গালিব ১০-০-৫৫-১, আনিসুল ৩-০-২৬-০, সঞ্জিত ১০-০-৪৭-১, সজিব ১০-০-৩৫-১, রাহাতুল ৭-০-৫০-১, সাব্বির ১০-০-৪৯-৩)

ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪০.১ ওভারে ২১০ (মিজানুর ৪, তানজিদ ১৪, সাব্বির ১২৫, মাইশুকুর ০, আনিসুল ৪০, জাহিদুজ্জামান ৩, নাদিফ ০, রাহাতুল ১৩, সঞ্জিত ১, সজিব ১, গালিব ০*; রুবেল ৫-০-৩৪-৩, নাসির ১০-১-৩৮-১, রাজা ৭.১-১-৩৭-৪, তাইজুল ৭-০-৩৬-০, আলিস ৪-০-১৮-০, আদিল ৩-০-১৯-০, কাপালী ৪-০-২৬-২)

ফল: প্রাইম ব্যাংক ৫৮ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: সাব্বির হোসেন