বিদায় বেলায় টিম সাউদিকে প্রশংসার জোয়ারে ভাসালেন কিংবদন্তি স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, কেন উইলিয়ামসন, টম ল্যাথামরা।
Published : 17 Dec 2024, 02:03 PM
কেন উইলিয়ামসনের আবির্ভাবের পর একজন প্রতিদ্বন্দ্বী এসেছে। এমনিতে নিউ জিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে স্যার রিচার্ড হ্যাডলি একরকম স্বীকৃতই। তার মতো একজন কিংবদন্তি যখন কাউকে বলেন ‘সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন’, সেটি তো বিশেষ কিছুই। বিদায় বেলায় এমন সম্মানই পেলেন টিম সাউদি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন সাউদি। হ্যামিল্টন টেস্টে জয় দিয়ে মঙ্গলবার শেষ হলো এই আঙিনায় তার প্রায় ১৭ বছরের ভ্রমণের।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ রাঙানোর কয়েক দিন পরই ২০০৮ সালের মার্চে টেস্ট অভিষেক তার। টেস্ট অভিষেকেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে শিকার করেন ৫ উইকেট। পরে ব্যাট হাতে দশ নম্বরে নেমে উপহার দেন ৯ ছক্কায় ৪০ বলে ৭৭ রানের ইনিংস। পরের প্রায় দেড় যুগে এটিই ছিল সাউদির নিয়মিত চিত্র। প্রচুর উইকেট নিয়েছেন, লোয়ার অর্ডারে নেমে ছক্কা মজেছেন।
সব মিলিয়ে ১০৭ টেস্টে ৩৯১ উইকেট নিয়ে শেষ হলো তার ক্যারিয়ার। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে তার চেয়ে বেশি টেস্ট উইকেট কেবল স্যার হ্যাডলির ৩৪১টি। রান করেছেন ২ হাজার ২৪৫, যেখানে ছক্কা ৯৮টি। টেস্ট ইতিহাসে তার চেয়ে বেশি ছক্কা মারতে পেরেছেন আর মোটে তিনজন। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে নিউজিল্যান্ডের প্রথমবার শীর্ষে ওঠা, প্রথম আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দলের স্মরণীয় শিরোপায় তার ছিল উল্লেখযোগ্য অবদান।
শেষ সিরিজটি ৩৮৫ উইকেট নিয়ে শুরু করেছিলেন সাউদি। চারশ উইকেটের হাতছানি থাকলেও হলো না। বিদায় বেলায় তার প্রশংসার পাশাপাশি সেই আক্ষেপটুকুর কথা বললেন কিংবদন্তি হ্যাডলি।
“টিম সত্যিকারের এক চ্যাম্পিয়ন, গ্রেট ক্রিকেটার ও অসাধারণ এক মানুষ। তার স্কিল-সেট ছিল দারুণ প্রশংসনীয়। তার সাফল্যের বৈশিষ্ট্য সেই ধ্রুপদি আউট সুইঙ্গার, আড়াআড়ি সিমের অফ-কাটার।”
“সবচেয়ে মানানসই হতো, যদি ৪০০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছতে পারত টিম। আমার মতে, এটি তার প্রাপ্য ছিল।”
বিদায়ী টেস্ট শেষে সাউদির হাতে নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের পক্ষ থেকে স্মারক তুলে দেন হ্যাডলি।
সাউদির ক্যারিয়ারের প্রায় পুরো সময়টায় তাকে কাছ থেকে দেখেছেন কেন উইলিয়ামসন। অসংখ্য স্মরণীয় লড়াইয়ের সঙ্গী দুজন। মাঠের ভেতরে-বাইরে কাটিয়েছেন সময়। উইলিয়ামসনের নেতৃত্বেই সাউদি পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি উইকেট (১৫৭টি)। নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের কতটা জুড়ে ছিলেন সাউদি, তা তুলে ধরলেন উইলিয়ামসন।
“খেলাটার অসাধারণ এক সেবক সে এবং বছরের পর বছর ধরে আমাদের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ এক ক্রিকেটার। শুধু মাঠেই নয়, মাঠের সব অর্জন তো সবাই দেখছেই। তবে তার নেতৃত্ব ও টেস্ট ক্যারিয়ারজুড়ে যেভাবে সে নিজেকে উপস্থাপন করেছে, সব মিলিয়েই সে দারুণ। এই কারণেই আমাদের দল এত লম্বা সময় ধরে শক্ত অবস্থানে আছে। এর সবটুকু জুড়ে আছে সে।”
সাউদির ক্ষেত্রে নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের সবাই যে কথাটি বারবারই বলে থাকেন, তিনি অসাধারণ এক ‘টিম ম্যান’, দলের জন্য মাঠের ভেতরে-বাইরে জেকে উজাড় করে দেন সবটুকু। বিদায় বেলায়ও সেই কথা বললেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম।
“উইকেট, রান, ছক্কা… সবকিছুই কথা বলে তার হয়ে। তবে সবকিছুর ওপরে মানুষ হিসেবে তিনি যেমন… দারুণ এক টিম ম্যান, মাঠে যার গুণাবলীর অভাব আমরা অনুভব করব। খেলাটার গ্রেট একজনকে হারাচ্ছি আমরা। তবে আমি নিশ্চিত, তার অপেক্ষায় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তা যেটা হোক, তাকে অভিনন্দন জানাতে চাই।”
আবেগাপ্লুত সাউদি বললেন, এখন থেকে সমর্থক হিসেবে অনুসরণ করবেন দলকে।
“এই ছেলেরা আমার ভ্রমণকে দারুণ উপভোগ করে তুলেছিল। এবার ভক্ত হিসেবে তাদের খেলা দেখার অপেক্ষায় আছি। সবার জন্য শুভ কামনা।”