জাতীয় দলে ছন্দ হারানো ফারজানা হক ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম দিনেই খেললেন ম্যাচ জেতানো ইনিংস, ঝড়ো শতকে আসর শুরু করলেন জেসিয়া আক্তার।
Published : 17 May 2024, 06:24 PM
নতুন মৌসুমে জেসিয়া আক্তার ফিরলেন সেই আগের রূপেই। গত আসরে অসাধারণ পারফর্ম করা ব্যাটার এবারও জ্বলে উঠলেন প্রথম ম্যাচেই। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারতীয় ওপেনার উপহার দিলেন ঝড়ো এক সেঞ্চুরি। পরে সাবেকুন নাহারের দুর্দান্ত বাঁহাতি স্পিনে তারা লিগ শুরু করল বড় জয়ে।
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন উইমেন’স ক্রিকেট লিগের উদ্বোধনী দিনে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান ফারজানা হকও। শেষ পর্যন্ত তিন অঙ্ক ছুঁতে না পারলেও ৯৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে রূপালী ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদকে জেতান অভিজ্ঞ ওপেনার। দিনের আরেক ম্যাচে মেহেরুন নেসার বাঁহাতি স্পিনে অনায়াস জয় পায় কলাবাগান ক্রীড়া চক্র।
জেসিয়ার সেঞ্চুরি, সাবেকুনের ৫ উইকেট
বিকেএসপির ১ নম্বর মাঠে জাবিদ আহসান ক্রিকেট ক্লাবকে ২৫৪ রানে হারায় মোহামেডান। ৩০৫ রানের পুঁজি নিয়ে প্রতিপক্ষকে ৫১ রানে গুটিয়ে দেয় গতবারের রানার্স-আপরা।
গত লিগে মোহামেডানের হয়ে দুটি বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করা জেসিয়া এবার প্রথম ম্যাচে খেলেন ৬৯ বলে ১০২ রানের ইনিংস। ১৬ চারের সঙ্গে ৩ ছক্কায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন কাশ্মীরের ৩৫ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
জাতীয় দলের বাঁহাতি ওপেনার মুর্শিদা খাতুনের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ১৪০ রান যোগ করেন জেসিয়া। ৪৫ বলে ৩৭ রান করে ফেরেন মুর্শিদা।
তিন নম্বরে নেমে ৪৬ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে এখনও নিজের সামর্থ্য প্রমাণের অপেক্ষায় থাকা সোবহানা মোস্তারি। অনেক দিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা অভিজ্ঞ রোমানা আহমেদের ব্যাট থেকে আসে ৪১ রান।
পরে সাবেকুনের বাঁহাতি স্পিনের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি জাবিদ আহসান ক্রিকেট ক্লাব। ৩ ওভারে মাত্র ৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন সাবেকুন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুন ১৪ রানে নেন ২ উইকেট।
ফারজানার অপরাজিত ৯৪, লতার ৫৯
গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সেঞ্চুরির পর থেকে ঠিক আপন চেহারায় ছিলেন না ফারজানা হক। ছন্দে ফেরার অভিযানে লিগের প্রথম ম্যাচেই তিনি খেললেন ৯৪ রানের ইনিংস। জাতীয় দলে জায়গা ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে থাকা লতা মন্ডল করলেন ৫৯ রান।
দুজনের অপরাজিত ফিফটিতে বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপিকে ৮ উইকেটে হারায় রূপালী ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদ। ২১২ রানের লক্ষ্য ২১ বল আগেই ছুঁয়ে ফেলে লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারানো আনসার ও ভিডিপির ইনিংস এগিয়ে নেন সুলতানা খাতুন। জাতীয় দলের অফ স্পিনার ব্যাট হাতে নিজের সামর্থ্য দেখিয়ে সাত নম্বরে নেমে ৮৮ বলে অপরাজিত ৭৬ রান। তার লড়িয়ে ব্যাটিংয়ে দুইশ ছাড়াতে পারে দল। হতাশ করেন শারমিন আক্তার (০), ফাহিমা খাতুন (৩), রিতু মনিরা (৪)।
তরুণ পেসার পূজা চক্রবর্তী নেন ৩ উইকেট। জাতীয় দলের লেগ স্পিনার রাবেয়া খাতুনের শিকার ২টি। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে খেলে প্রায় ৬ বছর পর দেশের ক্রিকেটে ফেরা অফ স্পিনার জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা ৭ ওভারে ৩৫ রান খরচায় উইকেটশূন্য থাকেন।
রান তাড়ায় তৃতীয় উইকেটে ১১৮ রানের জুটি গড়েন ফারজানা ও লতা। পেশির টানে ৩৭তম ওভারে মাঠ ছেড়ে যান ৮৫ বলের ইনিংসে ৬টি চার মারা লতা।
এরপর বাকি কাজ শেষ করেন ফারজানা ও নিগার সুলতানা। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ১২৩ বলে ৯৪ রানের ইনিংসটি সাজান ফারজানা। ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৭ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন নিগার।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ফারজানা।
মেহেরুনের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে কলাবাগানের জয়
ফাতেমা তুজ জোহরার ফিফটির পর আর কেউ তেমন কিছু করতে পারলেন না। দশ নম্বরে নেমে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রকে দুইশর কাছাকাছি নিয়ে গেলেন মেহেরুন নেসা। পরে বাঁহাতি স্পিনে সিটি ক্লাবকে আটকে রেখে তিনি দারুণ জয় এনে দিলেন দলকে।
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে কলাবাগানের জয় ৬৫ রানে। ১৮৯ রানের লক্ষ্যে ১২৩ রানে গুটিয়ে যায় সিটি ক্লাব।
ব্যাটিংয়ে ২৭ বলে ২৫ রান করা মেহেরুন পরে বল হাতে নেন ৩১ রানে ৪ উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও ওঠে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই বাঁহাতি স্পিনারের হাতে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা কলাবাগানকে ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার ফাতেমা ও বিথি পারভিন। দুজন মিলে গড়েন ৬৪ রানের জুটি। ৩১ রান করে ফেরেন বিথি। ফাতেমা খেলেন ৭০ বলে ৫২ রানের ইনিংস।
পরে আর কেউই ত্রিশ ছুঁতে পারেননি।
বাঁহাতি স্পিনার ফেরদৌসি নেন ৩০ রানে ৪ উইকেট। মিষ্টি রানির শিকার ৩টি।
পরে রান তাড়ায় সিটি ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন ওপেনার মিষ্টি রানি। মিশু খানের ব্যাট থেকে আসে ৩২ রান। আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি।