Published : 05 May 2025, 11:49 PM
ম্যাচ শেষে জেমস রু বললেন, ‘অবশ্যই বলব, আমার সেরা ইনিংস এটি।’ চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ায় প্রবল চাপের মুখে ব্যাটিংয়ে নেমে, যেভাবে সেঞ্চুরি করে দলের জয়ে অবদান রাখলেন, ইনিংসটি তার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকারই কথা। এই ইনিংস ইতিহাসের একটি পাতায়ও জায়গা করে দিল তরুণ ইংলিশ কিপার-ব্যাটসম্যানকে।
কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ ‘ডিভিশন ওয়ান’-এর ম্যাচে সোমবার এসেক্সের বিপক্ষে সমারসেটের জয়ের নায়ক রু। ৩২১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ছয় নম্বরে যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তিনি, ৭১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল তার দল, খানিক পর স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৭৮।
ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে ১৮ চারে ১৮৯ বলে ১১৬ রানের ইনিংস খেলে যখন ফেরেন রু, জয় থেকে তখন কেবল ৯ রান দূরে সমারসেট। শেষ পর্যন্ত তারা জয় পায় ৩ উইকেটে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৫ ম্যাচে ২১ বছর বয়সী রুর দশম সেঞ্চুরি এটি। ডেনিস কম্পটনের ৮৬ বছর পর সবচেয়ে কম বয়সী ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০টি সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন তিনি।
রুর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ২০২১ সালে, চেস্টার-লি-স্ট্রিটে কাউন্টি সিলেক্ট একাদশের হয়ে সফরকারী ভারতীয় দলের বিপক্ষে ‘টুর’ ম্যাচ দিয়ে। অভিষেকে একমাত্র ইনিংসে ২ রানের বেশি করতে পারেননি।
তবে চতুর্থ ম্যাচেই পেয়ে যান প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ, ২০২২ সালে এসেক্সের বিপক্ষে করেন অপরাজিত ১০১। ওই মৌসুমে আর কোনো সেঞ্চুরি করতে পারেননি তিনি।
রু রানের বন্যা বইয়ে দেন পরের ২০২৩ মৌসুমে। ১৪ ম্যাচে ৫৭.১৫ গড়ে পাঁচ সেঞ্চুরিতে এক হাজার ৮৬ রান করে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ করেন তিনি। যার মধ্যে ছিল ২২১ রানের ইনিংসও, যা তার ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। সেবার ‘ডিভিশন ওয়ান’-এ আর কোনো ব্যাটসম্যান এত সেঞ্চুরি করতে পারেননি।
পরের মৌসুমে অবশ্য খুব বেশি ভালো তিনি করতে পারেননি, ১৪ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিতে ৭২৬ রান করেন ৩৬.৩০ গড়ে।
এবারের কাউন্টি মৌসুমের প্রথম রাউন্ডেই রু ১৫২ রানের ইনিংস খেলেন উস্টারশায়ারের বিপক্ষে। ওই ম্যাচেই ৩৭১ রানের ইনিংস খেলেন টম ব্যান্টন, সমারসেটের সুদীর্ঘ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরের রেকর্ড সেটি। পঞ্চম উইকেটে ব্যান্টন ও জেমস রু মিলে গড়েন ৩৭১ রানের জুটি।
দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ৮০ রানের ইনিংস খেলেন রু। পরের পাঁচ ইনিংসে অবশ্য ভালো করতে পারেননি, টানা চার ইনিংসে আউট হন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। এর মধ্যে এসেক্সের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে থামেন স্রেফ ৯ রানে। পরের ইনিংসেই ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরিতে তিনি নাম লেখালেন রেকর্ড বইয়ে।
টন্টনে এই ম্যাচে তৃতীয় দিন শেষে রু অপরাজিত ছিলেন ৬৫ রানে। সোমবার চতুর্থ দিন পা রাখেন কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরিতে।
ষষ্ঠ উইকেটে অধিনায়ক লুইস গ্রেগরির (৫৭) সঙ্গে ১০১ রানের পর সপ্তম উইকেটে ক্রেইগ ওভারটনের (৫৩*) সঙ্গে ১৩৩ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের দুয়ারে নিয়ে যান তিনি। তার বিদায়ের পর বাকিটা সারেন ইংল্যান্ডের হয়ে আট টেস্ট খেলা ওভারটন।
আসরে পাঁচ ম্যাচে সমারসেটের প্রথম জয় এটি। ম্যাচ শেষে রুর কণ্ঠে ফুটে উঠল উচ্ছ্বাস।
“অবশ্যই বলব, আমার সেরা ইনিংস এটি। আমি সবসময় বলেছি যে, রান তাড়ায় বড় স্কোর করতে চাই এবং আজ তাই হয়েছে।”
“আগের দিন লুইস গ্রেগরি ও আজ ক্রেইগ ওভারটন দুর্দান্ত খেলেছে। লুইস দুর্ভাগ্যবশত আউট হয়েছিল, তবে ক্রেইগের শেষ পর্যন্ত থাকাটা ছিল অসাধারণ। কঠিন কয়েকটি সপ্তাহ কাটানোর পর আমাদের জন্য সত্যিই বড় একটা জয়।”
ইংলিশ গ্রেট ডেনিস কম্পটন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৯৩৯ সালে তার দশম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন ২০ বছর ৩৫৩ দিন বয়সে। রুর বয়স এ দিন ২১ বছর ১১৪ দিন।