পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ
ওয়ান্ডারার্সে সিরিজের শেষ ম্যাচও জিতে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করল পাকিস্তান।
Published : 23 Dec 2024, 11:09 AM
ওয়ানডে ক্রিকেটে অসাধারণ পথচলায় আরেকটি শতকের স্বাদ পেলেন সাইম আইয়ুব। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানরাও পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেললে তিনশ ছাড়ান স্কোর দাঁড় করাল পাকিস্তান। পরে সুফিয়ান মুকিমের স্পিনের জবাব দিতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। দারুণ জয়ে ইতিহাস গড়ে বছর শেষ করল পাকিস্তান।
প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ আগেই নিজেদের করে নিয়েছিল পাকিস্তান। ওয়ান্ডারার্সে শেষ ওয়ানডেও জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদেরই মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করল তারা। ঘরের মাঠে এই প্রথম কোনো ওয়ানডে সিরিজে সব ম্যাচ হারল প্রোটিয়ারা।
বৃষ্টিতে ৪৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ৩৬ রানে। সাইমের সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩০৮ রান করে সফরকারীরা। পরে হাইনরিখ ক্লসেনের ঝড়ে কিছুটা আশা জাগালেও ৫ ওভার বাকি থাকতেই ২৭১ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
তিন ম্যাচের মধ্যে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন সাইম। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। সিরিজে দুই সেঞ্চুরিতে ২৩৫ রান করে সিরিজ সেরার স্বীকৃতিও পান বাঁহাতি ওপেনার।
টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে দারুণ শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ওভারেই ফেরেন আব্দুল্লাহ শাফিক। আগের দুই ম্যাচের মতো এবারও রানের খাতা খুলতে পারেননি পাকিস্তানের ওপেনার।
তিন ম্যাচ সিরিজের সবকটি ম্যাচে শূন্য রানে ফেরা বিশ্বের প্রথম ওপেনার তিনি। সব মিলিয়ে বিশ্বের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান শাফিক।
চতুর্থ ওভারে বৃষ্টি নামলে কমে যায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য। পুনরায় খেলা শুরুর পর বিপদ বাড়তে পারত পাকিস্তানের। মার্কো ইয়ানসেনের বলে পয়েন্টে বাবরের ক্যাচ ছেড়ে দেন বিয়ন ফোরটান। ১০ রানে বেঁচে গিয়ে দলকে এগিয়ে নেন বাবর।
দ্বিতীয় উইকেটে সাইম ও বাবর মিলে যোগ করেন ১১৫ রান। ১২তম ওভারে কিউনা মাফাকার বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কা মারেন সাইম। এর সঙ্গে আরও ৭ চারে ৫৪ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন বাঁহাতি ওপেনার। তিন অঙ্ক ছুঁতে আর মাত্র ৩৭ বল লাগে সাইমের।
এর আগেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন বাবর। ৬৪ বলে ফিফটি করে বেশি দূর যেতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ৫২ রানে থামে তার ইনিংস। অভিষেকের পর এই প্রথম কোনো পঞ্জিকাবর্ষে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করতে পারলেন না তিনি।
রিজওয়ানকে নিয়ে ৭৫ বলে ৯৩ রানের জুটি গড়েন সাইম। ইয়ানসেনের বলে ফ্লিক করে মারা ছক্কায় নব্বইয়ে পৌঁছান তিনি। পরে এইডেন মার্করামের বলে এক রান নিয়ে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি।
৯৪ বলের ইনিংসে ১৩ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন সাইম। ৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৩ সেঞ্চুরিতে তার সংগ্রহ ৫১৫ রান। পাকিস্তানের হয়ে প্রথম ৯ ইনিংসে তার চেয়ে বেশি রান ও সেঞ্চুরি শুধু ইমাম-উল-হাকের, ৪ সেঞ্চুরিতে ৫৪৪ রান।
রিজওয়ান থামেন ৫২ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলে। ওপরের ব্যাটসম্যানদের দেওয়া ভিতে শেষটা দারুণ করেন আগা সালমান, তৈয়ব তাহির। দুজনের ৪৭ বলের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসে ৭৪ রান। সালমান ৩৩ বলে ৪৮ ও তৈয়ব ২৪ বলে ২৮ রান করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কাগিসো রাবাদা নেন ৩ উইকেট।
রান তাড়ায় পাওয়ার প্লেতে দুই ওপেনারের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। তিন নম্বরে নেমে রাসি ফন ডার ডাসেন চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এইডেন মার্করাম বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
দলের একশ হওয়ার আগেই ১৯ রানে ফেরেন মার্করাম। আর ২০তম ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরা ফন ডার ডাসেন করেন ৫২ বলে ৩৫ রান। ডেভিড মিলারও হতাশ করলে মাত্র ১২৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে প্রোটিয়ারা।
পরে মার্কো ইয়ানসেনকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন ক্লসেন। ৪৭ বলে দুজন গড়েন ৭১ রানের জুটি। যেখানে ইয়ানসেনের অবদান কেবল ১৩ রান।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ২৯ বলে ফিফটি করেন ক্লসেন। তবে আরও একবার আশি পেরিয়েও তিন অঙ্ক ছুঁতে না পারার আক্ষেপে পুড়তে হয় তাকে। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরার আগে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ৪৩ বলে ৮১ রান করেন ক্লসেন।
তিন ম্যাচেই আশিছোঁয়া ইনিংস খেলে সিরিজে ক্লসেনের সংগ্রহ ৮৮ গড়ে ২৬৪ রান। কিন্তু অন্যদের ব্যর্থতায় প্রতিবারই পরাজিত দলে থাকতে হল তাকে।
শেষ দিকে কর্বিন বশ অপরাজিত ৪০ রানের ইনিংস খেলে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমান।
সেঞ্চুরিয়নে আগামী শুক্রবার বক্সিং ডে টেস্ট দিয়ে শুরু হবে দুই ম্যাচের সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৪৭ ওভারে ৩০৮/৯ (সাইম ১০১, শাফিক ০, বাবর ৫২, রিজওয়ান ৫৩, কামরান ০, সালমান ৪৮, তাহির ২৮, আফ্রিদি ০, নাসিম ৫*, হাসনাইন ৪, সুফিয়ান ০*; রাবাদা ১০-০-৫৬-৩, ইয়ানসেন ৯-০-৫৮-২, মাফাকা ৬-১-৫০-১, বশ ৯-০-৬৯-১, ফোরটান ১০-০-৫৬-২, মার্করাম ৩-০-১৭-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: (লক্ষ্য ৪৭ ওভারে ৩০৮) ৪২ ওভারে ২৭১ (ডি জর্জি ২৬, বাভুমা ৮, ফন ডার ডাসেন ৩৫, মার্করাম ১৯, ক্লসেন ৮১, মিলার ৩, ইয়ানসেন ২৬, বশ ৪০*, ফোরটান ৮, রাবাদা ১৪, মাফাকা ০; আফ্রিদি ৭-১-৭০-২, নাসিম ৯-০-৬৩-২, হাসনাইন ৭-১-৪১-১, সাইম ১০-১-৩৪-১, সুফিয়ান ৮-১-৫২-৪, সালমান ১-০-৭-০)
ফল: ডিএলএস পদ্ধতিতে পাকিস্তান ৩৮ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ৩-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাইম আইয়ুব
ম্যান অব দা সিরিজ: সাইম আইয়ুব