টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম স্পেলেই দারুণ বোলিংয়ে আলো ছড়ান ২৭ বছর বয়সী পেসার।
Published : 23 Feb 2024, 10:00 PM
টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওভারেই জ্যাক ক্রলির স্টাম্প এলোমেলো করে উদযাপন শুরু করে দেন আকাশ দিপ। কিন্তু মাঝপথেই থেমে যেতে হয় তাকে। বেজে ওঠে ‘নো’ বলের সাইরেন। আকাশের তখন মাথায় হাত! তবে প্রথম উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়নি তাকে। দারুণ বোলিংয়ে প্রথম স্পেলেই ধরেন তিন শিকার। অভিষেকে এমন সাফল্যের জন্য এই পেসার কৃতিত্ব দিলেন জাসপ্রিত বুমরাহকে, যার জায়গাতেই তিনি সুযোগ পান একাদশে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুক্রবার শুরু রাঁচি টেস্ট দিয়ে অভিষেক হয় আকাশের। বুমরাহকে বিশ্রাম দেওয়ায় তিনি সুযোগ পান এই ম্যাচে। ২৭ বছর বয়সী পেসার নতুন বলে ৭ ওভারের প্রথম স্পেলে ২৪ রানে নেন ৩ উইকেট।
ম্যাচের চতুর্থ ও আকাশের দ্বিতীয় ওভারে‘নো’ বলের কারণে বেঁচে যান ক্রলি। ‘ওভারস্টেপ’ করেছিলেন বোলার। যে কারণে বেশ মন খারাপ হয়েছিল তার, দিনের খেলা শেষে ব্রডকাস্টারে আলাপচারিতায় বললেন আকাশ।
“আমার খুব খারাপ লাগছিল। এটি আমার প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট হতো বলে নয়, কারণ তারপর ওরা সত্যিই ভালো খেলছিল। যখন ওরা সাবলীলভাবে রান করছিল, তখন এই ভেবে খারাপ লাগছিল যে, আমার কারণে দলকে হয়তো ভুগতে হতে পারে।”
তখন ৪ রানে খেলছিলেন ক্রলি। সপ্তম ওভারে মোহাম্মদ সিরাজের টানা চার বলের মধ্যে তিনটি চারের পর একটি ছক্কা মারেন তিনি।
দশম ওভারে আরেক ওপেনার বেন ডাকেটকে কিপারের ক্যাচ বানিয়ে ৪৭ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন আকাশ। এক বল পর এলবিডব্লিউ হন অলিভার পোপ। আকাশের পরের ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন ক্রলি।
বুমরাহর পরামর্শ কীভাবে কাজে লাগিয়েছেন, সেই গল্পও শোনালেন আকাশ। তাকে ঘরোয়া ক্রিকেটের চেয়ে লেংথ একটু পেছনের দিকে রাখতে বলেছিলেন এই সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে ১৭ উইকেট নেওয়া বুমরাহ। আকাশের তিন উইকেটের দুটি আসে ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে, একটি গুড লেংথ ডেলিভারিতে।
“আমাদের কোচ, অধিনায়ক এবং বুমরাহ ভাই বলেছিলেন যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাটসম্যানরা বল তাড়া করতে চায়। তাই আমার পরিকল্পনা ছিল শুধু আমার লাইন ও লেংথ ঠিক রেখে বল করা।”
আকাশের বাবা রামজি সিং ছিলেন একটি সরকারি স্কুলের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক। তিনি কখনই চাননি তার ছেলে ক্রিকেটার হোক। অবসর নেওয়ার পর প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন রামজি সিং। পাঁচ বছর অসুস্থ থাকার পর ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মারা যান তিনি। অসুস্থ হয়ে একই বছরের অক্টোবরে মারা যান আকাশের বড় ভাই ধিরাজ।
আকাশের মা লাডুমা দেভি সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, “ওর (আকাশ) বাবা সবসময় ওকে একজন সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে দেখতে চাইত, কিন্তু ক্রিকেট ছিল ওর ধ্যানজ্ঞান। আমি ওকে গোপনে ক্রিকেট খেলতে পাঠাতাম এবং ওর স্বপ্নপূরণে সাহায্য করতাম।”
"সেই সময়ে যদি কেউ শুনত যে, ও ক্রিকেট খেলছে, তারা বলত, ‘এই ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে, ও দুর্বৃত্ত হয়ে যাবে।’ কিন্তু আমরা ওর প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলাম এবং ওকে হাল ছাড়তে দেইনি। যদিও আমার মালিক (স্বামী) এবং বেটাকে (বড় ছেলে) ছয় মাসের মধ্যে হারাই।”
আকাশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০১৯ সালে। টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার আগ পর্যন্ত ৩০ ম্যাচে ২৩.৫৮ গড়ে নেন ১০৪ উইকেট।
রঞ্জি ট্রফির গত মৌসুমে ১০ ম্যাচে ৪১ উইকেট নিয়ে পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট ছিল আকাশের। তখন থেকেই ভারতের টেস্ট দলের দুয়ারে কড়া নাড়ছিলেন তিনি। সম্প্রতি ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে দুটি চার দিনের ম্যাচে ১১ উইকেট শিকার করে সবার নজর কাড়েন বাংলার এই পেসার। তারপরই খুলে যায় টেস্ট দলের দুয়ার।
অভিষেকে তার শুরুর দিনটা কাটল স্বপ্নের মতো। চমৎকার প্রথম স্পেলের পর সারা দিনে আরও ১০ ওভার বোলিং করলেও আর কোনো উইকেট অবশ্য তিনি পাননি।
শুরুর ধাক্কা সামলে জো রুটের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে প্রথম দিনে ৭ উইকেটে ৩০২ রান করে ইংল্যান্ড।