এই ফাস্ট বোলারকে তাড়াহুড়া করে মাঠে ফেরানো উচিত হবে না বলে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টকে সতর্ক করে দিলেন দেশটির সাবেক অলরাউন্ডার ও সাবেক প্রধান কোচ রাভি শাস্ত্রি।
Published : 04 Feb 2025, 11:39 PM
ভারতের বোলিং আক্রমণের মূল অস্ত্র জাসপ্রিত বুমরাহর পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠতে আরও কতদিন লাগবে? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কি তিনি খেলতে পারবেন? এসব প্রশ্ন এখন ভারতীয় ক্রিকেটে। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এই ফাস্ট বোলারকে তাড়াহুড়া করে মাঠে ফেরানো উচিত হবে না বলে টিম ম্যানেজমেন্টকে সতর্ক করে দিলেন রাভি শাস্ত্রি। পাশাপাশি ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার ও সাবেক প্রধান কোচ এটাও বললেন, বুমরাহকে পাওয়া না গেলে দলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের সম্ভাবনা কমে যাবে উল্লেখযোগ্যভাবে।
বল হাতে গত বছরটা দুর্দান্ত কেটেছে বুমরাহর। সেটিরই স্বীকৃতি হিসেবে কদিন আগে আইসিসির ২০২৪ সালের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার ‘স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফি’ জিতেছেন ৩১ বছর বয়সী তারকা। বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারও হয়েছেন তিনি।
টেস্টের পাশাপাশি গত বছর টি-টোয়েন্টিতেও জাদুকরি বোলিংয়ে আলো ছড়ান বুমরাহ। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফর্ম করে শুধু টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কারই জেতেননি তিনি, ভারতের শিরোপা জয়েও রাখেন বড় ভূমিকা।
বছরের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া সফরে শেষ টেস্টে সিডনিতে পিঠের ব্যথার কারণে মাঠ ছেড়ে যান বুমরাহ। তারপর থেকে আর ভারতের হয়ে খেলেননি তিনি। ফিটনেস নিয়ে সংশয় থাকলেও তাকে রাখা হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সোমবার বেঙ্গালুরুতে ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে পৌঁছান বুমরাহ। সেখানে তার চোটের জায়গার স্ক্যান করা হবে, জানার চেষ্টা করা হবে এই মুহূর্তে কেমন তার পিঠের অবস্থা।
আগামী বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটিতে তাকে পাওয়া যাবে না। তৃতীয় ম্যাচ দিয়ে তার ফিটনেস পরখ করার কথা। যদিও মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, পুরো সিরিজেই খেলতে পারবেন না বুমরাহ।
২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলানোর জন্য বুমরাহকে তাড়াহুড়া করে দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল তখন। মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল লম্বা সময়। তেমন ভুল আবার করা যাবে না, আইসিসি রিভিউয়ে বললেন শাস্ত্রি।
“আমি মনে করি বিষয়টি (বুমরাহকে তাড়াহুড়ো করে ফেরানো) খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সামনে ভারতের জন্য অনেক ক্রিকেট ম্যাচ আছে। তার ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে, আমি মনে করি সে এতটাই মূল্যবান যে, হঠাৎ করেই তাকে এক ম্যাচ খেলার জন্য ডাকা হবে এবং তাকে ভালো করার জন্য বলা হবে। প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকবে। লোকে ভাববে, সে সরাসরি মাঠে নেমেই জ্বলে উঠবে। কিন্তু চোট থেকে ফিরে আসার পর কাজটা কখনোই এত সহজ নয়।”
আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বুমরাহ খেলতে না পারলে সেটা ভারতের জন্য বড় শূন্যতা তৈরি করবে বলে মনে করেন শাস্ত্রি।
“বুমরাহ ফিট না হলে ভারতের (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের) সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ, আক্ষরিক অর্থেই ৩০-৩৫ শতাংশ কমে যাবে।”
শাস্ত্রির সঙ্গে একমত রিকি পন্টিং। সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের মতে, এখন সবার নজর থাকবে মোহাম্মদ শামির ওপর। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে ১৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন ৩৪ বছর বয়সী এই পেসার। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের পর অ্যাঙ্কেলের চোট ও অস্ত্রোপচার মিলিয়ে লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল তাকে।
“টেস্ট সিরিজের জন্য ভারত যখন অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিল, তখন আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ছিল বুমরাহর ব্যাকআপ হিসেবে শামিকে না রাখা এবং তাকে (বুমরাহ) বেশিরভাগ ভার বহন করতে হয়েছিল। তার আঘাত পাওয়ার সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। শামি না থাকায় তাকে ওই সিরিজে আরও কিছুটা বেশি বোলিং করতে হয়েছিল। শামি যদি ফিট থাকে, তাহলে এটা ইতিবাচক দিক।”
অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের বোলিং আক্রমণকে প্রায় একাই টেনেছেন বুমরাহ। অসাধারণ পারফরম্যান্সে উইকেট নিয়েছেন রেকর্ড ৩২টি, বোলিং গড় ছিল ১৩.০৬। তবে ১৫১.২ ওভার বোলিংয়ের ধকল গেছে তার ওপর দিয়ে। তাতেই বিদ্রোহ করেছে শরীর।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে শামিকে খেলানো হয়নি। তৃতীয় ও ও পঞ্চম ম্যাচে খেলেন তিনি। প্রথমবার উইকেটশূন্য থাকলেও পরেরটিতে ২৫ রানে নেন ৩ উইকেট।
ওয়ানডে সিরিজে শামির ফিটনেস গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে মনে করেন শাস্ত্রি।
“এটা দেখা আকর্ষণীয় হবে যে, ভারত তাকে তিন ম্যাচেই খেলায় নাকি প্রথম ও তৃতীয় ম্যাচে খেলা এবং এরপর তাকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিয়ে যায়। কিন্তু তাকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে, কারণ ১০ ওভার বোলিং করা ৪ ওভারের থেকে পুরোপুরি ভিন্ন ব্যাপার। দেখতে হবে, ওই ১০ ওভার বল করার পরও সে মাঠে কেমন অনুভব করে।”
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযান শুরু করবে ভারত। পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় এই টুর্নামেন্টে ভারত তাদের সবগুলো ম্যাচ খেলবে দুবাইয়ে।