সর্বোচ্চ পাঁচবার করে আইপিএল জয়ী দুই দলের লড়াইয়ে পারল না মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, টানা ১৩ আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারল দলটি।
Published : 23 Mar 2025, 11:46 PM
চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে অভিষেকে আলো ছড়ালেন নুর আহমাদ। দুর্দান্ত বোলিংয়ে লক্ষ্যটা নাগালে রাখলেন আফগানিস্তানের বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার। ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও রাচিন রাভিন্দ্রা। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে হারিয়ে আইপিএলের অষ্টাদশ আসরে পথচলা শুরু করল চেন্নাই।
সর্বোচ্চ পাঁচবার করে আইপিএল জয়ী দুই দলের লড়াইয়ে চেন্নাইয়ের জয় ৪ উইকেটে। চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে রোববার ১৫৬ রানের লক্ষ্য পাঁচ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় রুতুরাজের দল।
এই দুই দলের সবশেষ সাতবারের দেখায় ছয়টিতেই জিতল চেন্নাই। টানা ১৩ আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারল মুম্বাই।
স্পিন সহায়ক উইকেটে চেন্নাইয়ের নায়ক নুর। নিলামে ১০ কোটি রুপিতে দলে নেওয়া স্পিনার ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। হজম করেননি কোনো বাউন্ডারি। ম্যাচ-সেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতেই।
গত দুই আসরে গুজরাট টাইটান্সের হয়ে খেলা নুরের আইপিএলে সেরা বোলিং এটি। ২০২৩ আসরে ৩৭ রানে ৩ উইকেট ছিল তার আগের সেরা।
চেন্নাইয়ের পেসার খালিল আহমেদ ৩ উইকেট শিকার করেন ২৯ রান দিয়ে।
মুম্বাইয়ের হয়ে ব্যাট হাতে ত্রিশ ছুঁতে পারেন মাত্র একজন। সেই তিলাক ভার্মা ২৫ বলে করেন ৩১ রান।
চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ ৩ ছক্কা ও ৬ চারে ২৬ বলে করেন ৫৩ রান। ৪৫ বলে ৪ ছক্কা ও ২ চারে অপরাজিত ৬৫ রানের ইনিংসে দলের জয় নিয়ে ফেরেন রাভিন্দ্রা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই রোহিত শার্মাকে হারায় মুম্বাই। চার বলে রানের খাতা খুলতে পারেননি ভারত অধিনায়ক। আইপিএলে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানের রেকর্ডে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও দিনেশ কার্তিকের পাশে বসেন তিনি; তিন জনেরই ১৮ বার করে।
রোহিতকে ফেরানোর পর নিজের পরের ওভারে আরেক ওপেনার রায়ান রিকেলটনকেও বিদায় করেন খালিল। এক দশক পর চেন্নাইয়ে ফেরা স্পিনার রাভিচান্দ্রান অশ্বিন ফেরান উইল জ্যাকসকে। পাঁচ ওভারের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় মুম্বাই।
চতুর্থ উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়েন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ ও তিলাক ভার্মা। এরপর আর কোনো জুটি ত্রিশও ছুঁতে পারেনি।
সুরিয়াকুমারকে ফিরিয়ে ওই জুটি ভাঙেন নুর। ৪৩ বছর বয়সী কিপার মাহেন্দ্র সিং ধোনির অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় স্টাম্পড হন এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান (২৬ বলে ২৯)।
নুর পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন রবিন মিঞ্জ ও তিলাককে। নিজের পরের ওভারের প্রথম বলে নামান ধিরকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান তিনি। সেটা না হলেও স্রেফ ২ রান দিয়ে কোটার চতুর্থ ওভারটি শেষ করেন ২০ বছর বয়সী স্পিনার।
রান তাড়ায় শুরুতে রাহুল ত্রিপাঠিকে হারালেও রাভিন্দ্রা ও রুতুরাজের ৩৭ বলে ৬৭ রানের জুটিতে এগিয়ে যায় চেন্নাই। রুতুরাজ আইপিএলে নিজের দ্রুততম ফিফটি করেন ২২ বলে।
এরপর দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারায় চেন্নাই। এই ম্যাচ দিয়ে সিনিয়র পর্যায়ের ক্রিকেটে অভিষেকে চমক দেখান ভিগনেশ পুথুর। রোহিতের ‘ইমপ্যাক্ট বদলি’ হিসেবে সুযোগ পেয়ে নিজের প্রথম তিন ওভারে তিন উইকেট নেন ২৪ বছর বয়সী বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার। তিনি একে একে ফেরান রুতুরাজ, শিভাম দুবে ও দিপাক হুডাকে।
স্যাম কারানও দ্রুত বিদায় নিলে চেন্নাইয়ের স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ১১৬। তবে কোনো বিপদ হতে দেননি রাচিন রাভিন্দ্রা ও রাভিন্দ্রা জাদেজা।
জয় থেকে ৪ রান দূরে থাকতে জাদেজা রান আউটে ফেরার পর দর্শকদের তুমুল চিৎকারের মধ্য দিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন ধোনি। ২ বলে শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ছক্কায় ম্যাচের ইতি টেনে দেন গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টুর্নামেন্ট সেরা রাভিন্দ্রা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৫৫/৯ (রোহিত ০, রিকেলটন ১৩, জ্যাকস ১১, সুরিয়াকুমার ২৯, তিলাক ৩১, রবিন ৩, নামান ১৭, স্যান্টনার ১১, চাহার ২৮*, বোল্ট ১, রাজু ১*; খালিল ৪-০-২৯-৩, কারান ১-০-১৩-০, এলিস ৪-০-৩৮-১, অশ্বিন ৪-০-৩১-১, জাদেজা ৩-০-২১-০, নুর ৪-০-১৮-৪)
চেন্নাই সুপার কিংস: ১৯.১ ওভারে ১৫৮/৬ (রাভিন্দ্রা ৬৫*, ত্রিপাঠি ২, রুতুরাজ ৫৩, দুবে ৯, হুডা ৩, কারান ৪, জাদেজা ১৭, ধোনি ০*; বোল্ট ৩-০-২৭-০, চাহার ২-০-১৮-১, রাজু ১-০-১৩-০, স্যান্টনার ২.১-০-২৪-০, জ্যাকস ৪-০-৩২-১, পুথুর ৪-০-৩২-৩, নামান ৩-০-১২-০)
ফল: চেন্নাই ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নুর আহমাদ