এবারের বিপিএলে প্রত্যাশামতো উইকেট তৈরি করতে না পারলে কিউরেটর গামিনি সিলভার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।
Published : 07 Oct 2024, 10:15 PM
এবারের বিপিএলে ‘টপ ক্লাস’ উইকেট দেখতে চান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। এই মানের উইকেট তৈরি করার জন্য কিউরেটর গামিনি সিলভাকে একরকম চ্যালেঞ্জ জানিয়েই রাখলেন তিনি। প্রত্যাশামতো উইকেট না পেলে কিউরেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন বিসিবি প্রধান।
শ্রীলঙ্কায় ১২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা গামিনি সিলভা খেলোয়াড়ি জীবন শেষে আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার বেছে নেন। বাংলাদেশেও টেস্টে আম্পায়ার হিসেবে দাঁড়িয়েছেন তিনি। পরে ২০০৮ সালে বিসিবিতে যোগ দেন কিউরেটর হিসেবে।
সময়ের সঙ্গে এই দায়িত্বে একরকম স্থায়ী হয়ে যান তিনি। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটের মান প্রসঙ্গে নানা সময়ই প্রবল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে তাকে নিয়ে। অনেক সময় ক্রিকেটাররাও পরোক্ষভাবে আঙুল তুলেছেন তার দিকে। মাঠকর্মীদের সঙ্গে বাজে আচরণের অভিযোগও প্রচুর উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তার পরও দফায় দফায় তার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
সবশেষ গত বছর আবারও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয় তার, যেটি শেষ হবে আগামী বছরের জুলাইয়ে।
নাজমুল হাসান বিসিবির সভাপতির দায়িত্বে থাকার সময় অনেকবার গামিনিকে নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কখনও এড়িয়ে গেছেন, কখনও এই লঙ্কান কিউরেটরের পাশে থেকেছেন। ফারুক আহমেদ সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরও কয়েক দফায় তার কাছে প্রশ্ন হয়েছে গামিনিকে নিয়ে।
সোমবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আবার গামিনির প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় ফারুক আহমেদের কাছে। ভারত সফরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং ব্যর্থতার পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, দেশে খুব ভালো ব্যাটিং উইকেটে তারা বেশি ম্যাচ খেলতে পারেন না। ১৮০ রান করার সামর্থ্য তাই দলের গড়ে ওঠেনি।
এই প্রসঙ্গেই গামিনিকে নিয়ে বোর্ড সভাপতির কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রশ্নের জবাব দিতে বলেন পাশেই থাকা গ্রাউন্ডস কমিটির দীর্ঘদিনের প্রধান মাহবুব আনামকে। মূলত এই বিসিবি পরিচালকের ছায়ায় থেকেই গামিনি এত বছর ধরে টিকে গেছেন বলে অভিযোগ অনেক দিনের।
উইকেট নিয়ে পুরোনো কথাগুলিই আবার উল্লেখ করে মাহবুব আনাম জানালেন, দেশের কিউরেটরদের তুলে আনার উদ্যোগ তারা নিচ্ছেন। মিরপুরের সাবেক কিউরেটর বদিউল আলম খোকনকে ফিরিয়ে আনার কথাও জানালেন তিনি।
“আপনারা যেটা দেখেন, এটা আন্তর্জাতিক খেলাগুলো দেখেন, ঘরোয়া দেখেন না। দল যেভাবে চায়, সেভাবেই আন্তর্জাতিক খেলার মাঠগুলি (উইকেট) তৈরি হয়। সেটা দলই ঠিক করবে, কী করা যায়।
“আমরা আগেও বলেছি, ঘরোয়া কিউরেটর ও ট্রেইনি কিউরেটর আমরা তৈরি করতে চাই। এর মধ্যেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। আমরা চার থেকে ছয়জন বাংলাদেশি কিউরেটর নেব। এর মধ্যে আজকের বোর্ডে একজন বাংলাদেশি কিউরেটরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, খোকনকে। সে ১ অক্টোবর থেকে যোগ দিয়েছে, আজকে অনুমোদন হয়েছে।”
এত অভিযোগের পরও প্রায় দেড় যুগ ধরে গামিনিকে কেন দায়িত্বে রাখা হয়েছে, এই প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে মাহবুব আনাম দেশের কিউরেটরদের অবহেলার জন্য আঙুল তুললেন নাজমুল হাসানের বোর্ডের দিকে।
“কেউ অপরিহার্য নন। আমিও নই, গামিনিও নয়। গামিনি আজীবন এখানে থাকার মতো যোগ্যতা রাখেন না। কিন্তু তার বিকল্পগুলো আমাদেরকে তৈরি করতে হচ্ছে।”
“আপনি একজন বাংলাদেশি কিউরেটরকে ২০ হাজার টাকা দেবেন, বিদেশি কিউরেটরকে ২ হাজার ডলার দেবেন, এটা বোধগম্য নয়। অতীতে বোর্ড তা-ই করেছে এবং আমরা যখনই বাইরে থেকে বাংলাদেশি কিউরেটরদের ফেরত আনতে চেয়েছি, আমরা ওই পয়সা পাইনি। সেটা পাবলিক করতে চাই না, বোর্ডের ব্যাপার, বোর্ডের মধ্যেই থাকুক। আপনারা অনেক কথাই বলতে পারেন, কিন্তু বোর্ড অনুমতি দেয়নি। বর্তমান বোর্ডে সেই অনুমতি পেয়েছি বলেই আমরা নতুন বাংলাদেশি কিউরেটরকে নিতে পারছি।”
মজার ব্যাপার হলো, নাজমুল হাসানের বোর্ডেও প্রবল প্রভাবশালী পরিচালক ছিলেন মাহবুব আনাম এবং কিউরেটর নিয়োগ দেওয়া বা চুক্তি বাড়ানো থেকে শুরু করে মাঠসংক্রান্ত যাবতীয় ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে তার ভূমিকা থাকত ব্যাপক।
মাহবুব আনামের কথার রেশ ধরে ফারুক আহমেদ জানালেন, কিছু মৌলিক জায়গায় নতুন লোক নিয়োগে জোর দিচ্ছেন তারা। এই প্রসঙ্গেই জানিয়ে রাখলেন, বিপিএলে এবার শীর্ষ মানের উইকেটের প্রত্যাশা তার।
“আমাদের ভেন্যু ম্যানেজার, জেলা কোচ, এই ধরনের মূল জায়গাগুলোয়, যেখানে কেউ নজর দেয়নি বা প্রয়োজন মনে করেনি, আমরা এখানে নতুন করে বিজ্ঞাপন দেব যেন ভালো লোক আসে। কাজের জায়গা অনেক, কিন্তু লোক কম।”
“(মাহবুব ভাই) বলেছেন যে জাতীয় দলের চাহিদা মেনে উইকেট বানাতে হয়। কিন্তু বিপিএলেও এরকম উইকেট হলে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা চেষ্টা করব, বিপিএলের উইকেট যেন ‘টপ ক্লাস’ বানাতে পারি। তা না হলে, একজন কিউরেটরকে মূল্যায়ন করবে কিভাবে আপনি? আপনি যদি দেখেন যে কেউ ডেলিভার করতে পারছে না, তখনই বোঝা যাবে যে, সে যথেষ্ট ভালো নয়। এই জিনিসটা এবার আমরা খুব ভালো করে খেয়াল করব।”
গামিনির প্রসঙ্গে সরাসরি প্রশ্নে বিসিবি সভাপতি বললেন, “এই মুহূর্তে খুব ভালো করছে না সে (গামিনি)।” পরে তিনি আবারও বললেন, বিপিএলে খুব ভালো উইকেটের আশা করছেন তারা। প্রত্যাশামতো উইকেট না পেলে কিউরেটরকে কাঠগড়ায় তোলার কথা জানিয়ে রাখলেন বোর্ড প্রধান।
“আমি এবার নিশ্চিত করব, টি-টোয়েন্টির উইকেট ঢাকা স্টেডিয়ামে (মিরপুরে) যাতে খুব ভালো, স্পোর্টিং উইকেট হয়। এই পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়ার পরও যদি উইকেট সেভাবে তৈরি না হয়, তাহলে আমি খুবই হতাশ হব। চেষ্টা করব যেন স্পোর্টিং উইকেট হয়, যেখানে ব্যাটাররা রান করতে পারবে, বোলাররা পরিকল্পনা করতে পারবে।”
“ছোট্ট একটা ব্যাপার বলে রাখছি, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে রোদের তাপ কম। কাজটা সহজ নয়। অনেক নরম থাকে উইকেট। বৃষ্টি না হলে গ্রীষ্মকালের মতো হার্ড উইকেট পাবেন না। সেসব বিবেচনা করে আমরা চেষ্টা করব স্পোর্টিং উইকেট বানাতে।”
এবারের বিপিএল শুরু হওয়ার কথা আগামী ২৭ ডিসেম্বর।বাংলাদেশ, বিপিএল, গামিনি, বিসিবি, ফারুক