বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বিদায়ী বোলিং কোচ কথা বললেন সাম্প্রতিক আলোচনা, বিতর্ক, বিশ্বকাপে পেসারদের পারফরম্যান্স, সার্বিক অবস্থা এবং বাংলাদেশের প্রতি তার অনুরাগ নিয়ে।
Published : 10 Nov 2023, 06:05 PM
অ্যালান ডোনাল্ড কি এমনিতেই চলে যাচ্ছেন নাকি রাগ করে? নাকি তাকে রাখছে না বিসিবি? গত কয়েকদিন ধরেই এসব নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। এমনকি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওঠার সম্ভাবনা, সেই প্রসঙ্গও চাপা পড়ে গেছে অনেকটা। সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হলো স্বয়ং ডোনাল্ডের কাছ থেকেই। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বিদায়ী বোলিং কোচ ও দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি এই ফাস্ট বোলার কথা বললেন সাম্প্রতিক এসব আলোচনা, বিতর্ক, বিশ্বকাপে পেসারদের পারফরম্যান্স, সার্বিক অবস্থা এবং বাংলাদেশের প্রতি তার অনুরাগ নিয়ে।
আজকে অনুশীলনে আপনাকে দেখা গেল না!
অ্যালান ডোনাল্ড: আজকে তো ঐচ্ছিক অনুশীলন। পেসারদের কেউ নেই, শুধু হাসান (মাহমুদ) গিয়েছে মনে হয়। সুতরাং আমার তো কাজ নেই!
এই মুহূর্তে দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি আলোচনা আপনাকেই নিয়েই…
ডোনাল্ড: দুঃখজনকভাবে আমাকে যেতে হবে। চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছি। পরিবারকে ভীষণ মিস করছি। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে দারুণ সময় কেটেছে। এই ছেলেদের ছেড়ে যেতে আমার খারাপ লাগবে। কিন্তু পরিবারের জন্যও খারাপ লাগছে। আমাকে তাই সিদ্ধান্ত নিতেই হতো…
আলোচনাটা মূলত আপনি হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যাচ্ছেন, কালকে একটা ঘটনা ঘটেছে… এসব নিয়ে!
ডোনাল্ড: কালকে যা হয়েছে, সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি তাতে আহত হয়েছি। তবে সেটা আলাদা ব্যাপার। চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছি।
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস বলেছেন, বিশ্বকাপের শুরুর দিকেই আপনি তাকে জানিয়ে দিয়েছেন যে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে চান না…
ডোনাল্ড: হ্যাঁ বলেছি, কারণ আমি আর পারছিলাম না। টানা ৮৪ দিন ধরে আমি বাড়ির বাইরে। এই বয়সে এসে, জীবনের এই পর্যায়ে আসলে বাড়ি থেকে এতদিন দূরে থাকতে ভালো লাগে না। দিনের পর দিন নাতি-নাতনিকে ভিডিও কলে দেখতে হচ্ছে। আমার তো ইচ্ছে করে ওদেরকে স্পর্শ করতে, ওদের সঙ্গে খেলতে, মজা করতে। পরিবারের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানো প্রায় ভুলেই গেছি।
বাংলাদেশের দায়িত্বটা চালিয়ে গেলে এই বিশ্বকাপের পর বিরতি পাব আর কদিন? একের পর এক সিরিজ, এত ভ্রমণ, ব্যস্ততা… আমি আসলে হাঁপিয়ে উঠেছি। আমি কাজটা করতে চাই আনন্দ নিয়ে, আবেগ দিয়ে। কিন্তু যদি ক্লান্তি-শ্রান্তি পেয়ে বসে, মনের টান অনুভব না করি, রাতে হোটেলে ফিরে যদি মনে হয় যে, ‘ঠিক উপভোগ করছি না’, তাহলে তো আসলে এই কাজ করারই মানে নেই। সেই পর্যায়ে আমি যেতে চাই না।
আমার মনে হয়েছে, ক্রিকেট থেকে দূরে, সব ব্যস্ততা থেকে দূরে কিছুদিন সময় কাটানো দরকার আমার। এখান থেকে বিদায় নিতে আমার খারাপ লাগবে। ছেলেদের জন্য খারাপ লাগবে। কালকে যখন ছেলেদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখনও খারাপ লেগেছে। তবে নিজের জন্যই এখন আমাকে যেতে হবে।
কালকে ছেলেদের সঙ্গে যে কথা বলেছেন, সেসব বাইরে চলে আসায় আপনি আহত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে!
ডোনাল্ড: আমি খুবই বিস্মিত ও আহত হয়েছি। আমার কষ্ট লেগেছে।
যেহেতু টিম মিটিং আর ছিল না, আমি কোচকে (হাথুরুসিংহে) বলেছিলাম, ছেলেদের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই, কিন্তু এটা যেন খুব গোপন থাকে। কিন্তু একটু পরই দেখলাম, গোটা বিশ্ব সব জেনে গেল… হতবাক হয়ে গেছি আমি। ড্রেসিং রুমের একটা খবর এভাবে এত দ্রুত বাইরে চলে যাওয়া তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার!
সবচেয়ে হতাশার ব্যাপার, এমন একজন এটা করেছেন… আমি তার নাম বলব না, আপনিও ধারণা করতে পারবেন… আমি জানি যে আপনি জানেন, আপনি বুঝতে পারছেন আমি কার কথা বলছি… দলের নেতৃত্বস্থানীয় একজন, এরকম সিনিয়র একজন যদি এই কাজ করেন, তখন আসলে হতাশ না হয়ে উপায় নেই। নিজেকে প্রতারিত মনে হয়েছে আমার। শুধু আমার প্রতি নয়, ছেলেদের প্রতি, দলের প্রতিও এটা অন্যায়।
কালকে টিম ম্যানেজমেন্ট বা দলের কারও কাছ থেকে আপনি কটাক্ষের শিকার হয়েছেন বা বাজে কথা শুনতে হয়েছে, এরকম অভিযোগও দেখা গেছে সংবাদমাধ্যমে…
ডোনাল্ড: কালকের কথা তো বললাম… এছাড়া আর এরকম অভিজ্ঞতা হয়নি। আপনি শুনেছেন এরকম কিছু? আমাকে নিয়ে বাজে কিছু বলেছে কেউ? আমাকে না জানালেও চলবে। তবে কালকের আগে বাজে অভিজ্ঞতা খুব একটা হয়নি।
আর সত্যি বলতে, সেটুকু থাকলেও চলত। একটা দলের ভেতর অনেক কিছু হতেই পারে। কিন্তু সেসব এভাবে বাইরে চলে আসা, তাও এত দ্রুত… এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়।
এই ঘটনার পর কি মনে হয়েছে যে, চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত এতে আরও যৌক্তিক হলো?
ডোনাল্ড: আমি দুটোকে মেলাতে চাই না। আগেই তো বলে দিয়েছি যে চালিয়ে যাব না। তবে কালকে যা হয়েছে, সেটা ভীষণ দুঃখজনক ও হতাশাজনক।
শেষ বেলায় তাহলে কষ্ট নিয়ে যাচ্ছেন?
ডোনাল্ড: আমার একটা ভালো ব্যাপার হলো, আমি দ্রুত ভুলে যেতে পারি, এসব যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে পারি এবং সামনে তাকাতে পারি। কালকে আমার কাছে বিভীষিকার মতো লাগছিল, আজকেই কিছুটা কাটিয়ে উঠেছি। হাসছি, কথা বলছি। খুব ব্যতিক্রমী না হলে কারও সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ থাকে না। বাংলাদেশের সবার সঙ্গেও আমার সম্পর্ক উষ্ণই থাকবে।
এই মুহূর্তে আসলে আমার বাড়ি যেতে তর সইছে না। মনে হচ্ছে, অন্ততকাল ধরে বাড়ি যাই না। অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেরা যাতে এই ম্যাচে নিজেদের উজার করে দিয়ে বোলিং করতে পারে, বিশ্বকাপের শেষটা ভালো করতে পারে, সেজন্য ওদের সঙ্গে যা যা করা দরকার, আমি করব। ওদের মতো আমিও শেষটা ভালো চাই। এরপর আমি ফিরব, হাসিমুখেই।
আর সত্যি বলতে, শেষটাই তো সবটুকু নয়। এখান থেকে অনেক অনেক সুখস্মৃতি নিয়ে ফিরছি আমি। সুন্দর এই দেশে দুর্দান্ত এক ঝাঁক ছেলের সঙ্গে দারুণ আনন্দময় সময় কেটেছে আমার। যদিও বাংলাদেশে খুব বেশি দিন থাকিনি। তবে দলের সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতি আমাকে ভবিষ্যতেও হাসিখুশি থাকতে সহায়তা করবে।
আপনি যখন বোলিং কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন প্রধান কোচ ছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো। পরে কোচ বদলেছে, সহকারী কোচ নতুন যোগ হয়েছে। এরপর দলের পরিবেশ কি বদলে গেছে? এরকম কোনো ব্যাপার কি আছে যে, বদলে যাওয়া আবহের কারণে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়েছে!
ডোনাল্ড: পরিবারই সবচেয়ে বড় কারণ। এখানে সত্যিই কোনো মিথ্যে নেই।
তবে একটা দলে প্রধান কোচ বদল হলে অনেক কিছুতে পরিবর্তন তো আসেই। রাসেল (ডমিঙ্গো) আর চান্দিকার (হাথুরুসিংহে) ধরন আলাদা। দুনিয়ার সব কোচই আলাদা। রাসেল অনেক ‘প্লাসিড’ ছিল, খুব ‘ইজি গোয়িং’… যে কোনো কিছু নিয়ে আলাপ করা যেত, কথা বলত এবং শুনত, শুধু আমার নয়, সবার কথাই শুনত। শোনা মানেই তাতে রাজি হওয়া নয়, যুক্তি-তর্ক তো হয়ই। কিন্তু সে অনেক ‘ওপেন’ ছিল, অনেক সহনশীলও… আমি যতটুকু দেখেছি, সে ছেলেদের সঙ্গে কাছ থেকে মিশত, বন্ধুর মতো হতে চাইত এবং সেভাবেই সেরাটা আদায় করতে চাইত।
চান্দিকা অবশ্যই আলাদা। খুব গভীরে আমি যেতে চাই না। এখনও সে দলের কোচ। তবে ভালো-খারাপের ব্যাপার এখানে নয়। দুনিয়ার কোনো কোচই দলের খারাপ চায় না। স্রেফ ধরন ভিন্ন থাকে… পরে নিক (পোথাস, সহকারী কোচ) যোগ দিল… রাঙ্গানা (হেরাথ, স্পিন কোচ) আগে থেকেই ছিল… হ্যাঁ, কোচ-সহকারী কোচ নতুন আসা মানে নতুন ভাবনা, নতুন অ্যাপ্রোচ, নতুন ‘থট প্রসেস’… এসবের সঙ্গে ছেলেদের যেমন মানিয়ে নিতে হয়, সহকারী কোচদেরও মানিয়ে নিতে হয়। আমাদের পেশারই অংশ এটা। এখানে অভিযোগ করার কিছু নেই।
সবচেয়ে বেশি কি মিস করবেন?
ডোনাল্ড: বন্ধুত্ব। ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্কটাকে আমি সবসময় বলেছি বন্ধুত্বই। বন্ধুর মতো মিশতে চেয়েছি, ওরা যাতে আমাকে বন্ধু করে নিতে পারে, সেই চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয়, খুব ভালো বন্ধন আমাদের গড়ে উঠেছে। বিশ্বকাপে খারাপ করেছে বলে ভুল বুঝবেন না, দারুণ এক দল ক্রিকেটার ওরা, খুবই ভালো ছেলে সবাই।
ওদের সঙ্গে ছোট ছোট মজা, মাঠের ভেতরে-বাইরে আনন্দময় সময়গুলো, এগুলো মিস করব। ওদের সঙ্গে কাজ করা মিস করব। ওরা সবাই শিখতে এত আগ্রহী, এত আন্তরিক, একদম শুরু থেকেই এটা আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছি। এজন্যই খুব দ্রুত ওদের সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছিলাম। বোলিং নিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলা… এসব মিস করব।
আপনার দায়িত্ব তো থাকছে না, সম্পর্ক কি থাকবে?
ডোনাল্ড: অবশ্যই! বলেছি তো ওরা আমার বন্ধু এবং বন্ধুত্ব তো রয়েই যায়। পেসারদের সঙ্গে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটা থাকবে। আমি কালকে বলেছিলাম যে, “তাহলে এখন বিদায় নেওয়ার সময়।” হাসান মাহমুদ তখন বলল যে, ‘কোচ, প্লিজ যাবেন না। এই গ্রুপটা থাকুক…।” আমার খুবই ভালো লেগেছে। বলেছি যে, তাহলে এই গ্রুপ থাকবে। ওরা তো খুবই খুশি। আমি ওদেরকে বলেছি, যে কোনো সময় যে কোনো পরামর্শ, প্রয়োজনে আমাকে পাশে পাবে। প্রয়োজন ছাড়াই নিত্যদিনের মজা-টজাও আগের মতোই করব আমরা।
আপনার আগে ওটিস গিবসন খুব ভালো কাজ করে গেছেন বোলিং কোচ হিসেবে। আপনি যখন দায়িত্ব নিলেন, তখন কেমন ছিল পেসারদের অবস্থা? যখন চলে যাচ্ছেন, আপনার প্রত্যাশা ছুঁতে পেরেছে ওরা?
ডোনাল্ড: ওটিসকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। তার কাজের প্রতিফলন ছেলেদের ভেতর ছিল। তবে সত্যি বলতে, তার পরও ওরা অনেক ‘কাঁচা’ ছিল। এখনও ‘কাঁচা’ আছে। পেস বোলিং অনেক বিশদ ব্যাপার।
আমার মনে আছে, সেঞ্চুরিয়নে যখন ওদের সঙ্গে দেখা হলো, কথা হলো, দ্রুতই বুঝতে পারলাম যে অনেক কাজ করতে হবে। হাতে ধরে অনেক কিছু শেখাতে হবে। এই ব্যাপারটাই আমার কাছে রোমাঞ্চকর ছিল। মৌলিক ব্যাপারগুলোর চর্চা করা, প্রক্রিয়া মেনে এগিয়ে চলা, একই রুটিন দিনের পর দিন করে চলা, একটু একটু করে উন্নতি… সবকিছুই আমি উপভোগ করেছি। এই ছেলেরা অনেক প্রতিভাবান। ওদের প্রয়োজন সমর্থন, দলের ভেতরে-বাইরে, সব জায়গা থেকে… যেন প্রক্রিয়ায় থাকতে পারে। দেখুন, এখানে তো পেস বোলিংয়ের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি নেই। অনেক কিছুই তাদের রপ্ত করতে হচ্ছে। শিখতে ও বুঝতে হচ্ছে। এটা অনেক সময়ের ব্যাপার। ওদের উন্নতি কোথায় বা কতটুকু হয়েছে, তা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝছেন!
বিশ্বকাপে তো অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু পেসাররা তা পূরণ করতে পারলেন না…
ডোনাল্ড: সাদা চোখে এরকমই মনে হচ্ছে। এজন্যই আপনাকে আরও গভীরে যেতে হবে।
দেখুন, বিশ্বকাপের বেশ আগেই আমি কোচকে বলেছিলাম যে, বোলিং গ্রুপকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন বিশাল স্কোর ডিফেন্ড করতে পারে। বিশ্বকাপে রানের খেলা হবে। আপনি দেখুন, দুনিয়ার সেরা পেসাররা এক ম্যাচে ৮০, ৯০ রান দিচ্ছে না? কেবল ভারতীয় পেসাররা ছাড়া সব দলের পেসাররা বেদম মার খাচ্ছে। উইকেটই এমন। এটাই আমি অনেক আগে বলেছিলাম যে, ব্যাটসম্যানরা বড় রান করবে, আমাদের বোলাররা সেটা ডিফেন্ড করার জন্য প্রস্তুত থাকবে…
উইকেট, কন্ডিশন এসবের সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের স্কিলের অবিশ্বাস্য উন্নতি, সবই আপনাদেরকে বুঝতে হবে।
২০১১ বিশ্বকাপে উপমহাদেশেই নিউ জিল্যান্ড দলের বোলিং কোচ ছিলাম আমি। তখনকার অভিজ্ঞতা এবার ভাগাভাগি করেছিলাম সবার সঙ্গে। পাশাপাশি এটাও বলেছিলাম, গত এক যুগে, বিশেষ করে গত কয়েক বছরে ব্যাটসম্যানদের স্কিল অন্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বোলারদের চ্যালেঞ্জ এখন অনেক কঠিন। সেটা বুঝেই আমাদের বোলিং পরিকল্পনা করা উচিত… বেশির ভাগ দিনই খরুচে বোলিং হতে পারে, কিন্তু ইম্প্যাক্ট কতটা, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট এনে দেওয়া বা প্রতিপক্ষকে ধাক্কা দেওয়া, এই ব্যাপারগুলো গুরুত্বপূর্ণ…।
তানজিম সাকিবের কথাই ধরুন। আপনারা দেখছেন, আগের ম্যাচে সে ৮০ রান দিয়েছে। হ্যাঁ, মানছি সে প্রচুর বাউন্ডারি বল করেছে সেদিন। তবে কারণটা কী? সে আগ্রাসী থাকতে চেয়েছে। আমি ওকে দারুণ পছন্দ করি এই কারণেই। সহজাত আগ্রাসী বোলার সে, দারুণ লড়াকু। নিসানকাকে যেভাবে আউট করল…ব্যাটসম্যানদের শক্তির জায়গাতেই তাকে আটকে ফেলল… এটা অনেক বড় গুণ…।
আমি এসবই দেখতে চেয়েছিলাম বিশ্বকাপে দলের বোলিং পরিকল্পনায়। সবসময় সেটা হয়ে ওঠেনি।
কালকে সবার সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, তাসকিনকে জিজ্ঞেস করেছি যে, ‘বিশ্বকাপ থেকে তুমি কী শিখলে?’ তাসকিন বলেছে, তার ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এই বিশ্বকাপ... সে চেষ্টা করে গেছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না… কেন হচ্ছে না, এসব সে বুঝতে পারছে। এটা দারুণ ব্যাপার। আমি ওদেরকে এভাবেই গড়তে চেয়েছি যে নিজেরা বুঝতে পারুক কোথায় উন্নতি করতে হবে। হাসান বলেছে যে, এরকম উইকেটে এমন মারমুখি ব্যাটসম্যানদের সামনে মাঝেমধ্যেই ওর মাথা কাজ করেনি। বুঝতে পারছিল না যে কী বল করবে বা কোথায় বল ফেলবে…।
আস্তে আস্তে তার মাথা খুলছে…। এই উপলব্ধিগুলো দরকার আছে।
সময় হলে আরও বুঝতে পারবে। তবে স্কিলের উন্নতির জন্য ভালো ব্যাটিং উইকেটে ওদেরকে অনেক অনেক খেলতে হবে। এটির বিকল্প নেই। কঠিন পরীক্ষা থেকেই ওরা শিখবে।
‘ইম্প্যাক্ট’-এর কথা বললেন, ইবাদত হোসেনকে নিশ্চয়ই মিস করেছেন বিশ্বকাপে?
ডোনাল্ড: কোনো একজনকে নিয়ে আলাদা করে বলতে আমি ঠিক স্বস্তি বোধ করি না। তবে ইবাদতের কথা বলতেই হবে। আমাদের ‘এনফোরসার’… মাঝের ওভারে আমাদের নির্ভরতা… উই মিসড হিম বিগ টাইম…।
কালকে ইবাদতের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। বলেছি যে আমি থাকছি না। তাকে মনে হলো ভীষণ কাতর। অনেকভাবে আমাকে অনুরোধ করেছে থাকতে পারি কি না। আমি বলেছি যে এই ভালোবাসাগুলোই সঙ্গী হয়ে থাকবে আমার।
বাংলাদেশের দায়িত্বে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলা যায় ইবাদত। যেভাবে চাচ্ছিলাম, সেভাবেই উন্নতি করছিল সে। কী একটা ‘ফ্রিক’ ইনজুরিতে পড়ে গেল… এটা ওর প্রাপ্য ছিল না… আমি ওর সঙ্গে আবার কথা বলব। নিয়মিতই যোগাযোগ রাখব।
শুধু ইবাদত-হাসানরা নন, বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুসারী যারা আছেন, সামাজিক মাধ্যমে আপনাকে নিয়ে তাদের অনেক হাহাকার দেখা যাচ্ছে….!
ডোনাল্ড: সত্যি বলতে, আমি খুবই অবাক হয়েছি। আমি তো খুব সরব কেউ নই। কিন্তু কালকে থেকে এত এত মানুষের ম্যাসেজ পেয়েছি, সামাজিক মাধ্যম ভেসে যাচ্ছে.. আমি খুবই আপ্লুত ও কৃতজ্ঞ। এই দেশের মানুষ ক্রিকেটকে এত ভালোবাসে, একজন বোলিং কোচকে তারা যে ভালোবাসা দিয়েছেন, এটা অবিশ্বাস্য। আমি সত্যিই ভাগ্যবান ও কৃতজ্ঞ। এবং সবার কাছে দুঃখপ্রকাশও করছি, এখানে আর থাকতে পারছি না। ভবিষ্যতে কখনও সুযোগ পেলে আবার হয়তো একসঙ্গে হব আমরা।
এরপর কী? নতুন কোনো কাজের জায়গা খুঁজবেন?
ডোনাল্ড: আপাতত শুধুই কেপ টাউন! বাড়িতে যাব, সবকিছু থেকে দূরে পরিবার নিয়ে সময় কাটাব। নিজের প্রাণশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য, আরও তরতাজা হওয়ার জন্য, ক্রিকেট ও কোচিংয়ের প্রতি ক্ষুধাটা ফিরে পাওয়ার জন্য বিশ্রাম এবং মানসিক শান্তি জরুরি এখন আবার। যদি সব ঠিকঠাক থাকে, আবার চাঙা হয়ে উঠি এবং নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার তাড়না ফিরে পাই, তখন আবার দেখা যাবে।
শ্রীলঙ্কা দলের দায়িত্ব নিতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে!
ডোনাল্ড: দেখুন, একটা প্রস্তাব আমার কাছে এসেছে। একদমই তা সাম্প্রতিক, স্রেফ ২-৩ দিন হলো। বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। বলার মতো কিছু হয়নি। কীভাবে এসব খবর ছড়ায়, জানি না। তবে আমি আগে বিশ্রাম নিতে চাই। তারপর ভাবা যাবে।