নিগার সুলতানার অপরাজিত ফিফটিতে প্রত্যাশিত স্কোর গড়েছিল বাংলাদেশ, কিন্তু ডটিনের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতে গেছে সহজেই
Published : 28 Jan 2025, 11:03 AM
সিরিজ শুরুর আগে নিগার সুলতানা বলেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে হারাতে অন্তত ১৪০ রান করতেই হবে। মাঠে নেমেদারুণ এক ফিফটিতে অধিনায়ক নিজেই দলকে নিয়ে গেলেন সেই ঠিকানায়। কিন্তু সেই পুঁজিতে লড়াইও জমাতে পারল না নিগারের দল। ‘পাওয়ার’ বাটিংয়ে পার্থক্যটা প্রবলভাবেই দেখিয়ে দিলেন ড্রেন্ড্রা ডটিন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্য একটি স্কোর গড়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হেইলি ম্যাথিউসের ফিফটি ও ডটিনের রেকর্ড-গড়া ফিফটিতে ক্যারিবিয়ানরা স্রেফ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে চ্যালেঞ্জ। ৮ উইকেটের জয়ে তারা এগিয়ে গেছে তিন ম্যাচের সিরিজে।
বাংলাদেশ সময় সোমবার সকালে শেষ হওয়া ম্যাচে সেন্ট কিটসে বাংলাদেশ ২০ ওভারে তোলে ১৪৪ রান। ৪০ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন নিগার।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানরা তাড়ায় জিতে যায় ১৯ বল বাকি রেখে। অধিনায়ক ম্যাথিউস অপরাজিত থাকেন ৬০ রানে। তবে বাংলাদেশের বোলিং পিষ্ট করেন ডটিন। ২২ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। কোনো বাউন্ডারি মারেননি তিনি, কিনতু ছক্কা হাঁকিয়েছেন ৭টি!
নিজের রেকর্ড ছাড়িয়ে ফিফটিতে পা রাখেন তিনি ২১ বলে। উইমেন’স টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড এটি। ২২ ও ২৫ বলের ফিফটিতে রেকর্ডের পরের দুটি নামও তারই।
৩৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার বল হাতে উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে রান দেন মাত্র ১৩।
ওয়ার্নার পার্কে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার জাইদা জেমসকে দুটি চার মেরে দিলারা আক্তার শুরু করেন ম্যাচ। পরের ওভারে চেরি-অ্যান ফ্রেজারকে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন আরেক ওপেনার সোবহানা মোস্তারি।
দুজনের কেউই টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। চতুর্থ ওভারে আক্রমণে এসেই দিলারাকে (১১ বলে ১২) ফেরান ম্যাথিউস।
পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তোলে ৬০ রান।
সোবহানা আরও অনেকবারের মতোই সম্ভাবনা জাগিয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। লেগ স্পিনার অ্যাফি ফ্লেচারের প্রথম ওভারে একটি চার মারার পরের বলে ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন তিনি (২১ বলে ২২)।
বাংলাদেশের ওভারপ্রতি রান তখনও ছয়ের নিচে। তৃতীয় উইকেটে ৮২ রানের জুটি গড়ে দলকে কাঙ্ক্ষিত স্কোরের দিকে এগিয়ে নেন শারমিন আক্তার ও নিগার সুলতানা।
এই দুজনের শুরুটাও ছিল কিছুটা মন্থর। তবে একটু থিতু হয়ে শট খেলেন দুজনই। নিগারের ছক্কাসহ ম্যাথিউসের এক ওভারে রান আসে ২২।
নিগার পরে আরেকটি ছক্কা মারেন কারিশ্মা রামহারাককে। ম্যাথিউসের পরের ওভারে মারেন দুটি চার।
চেরি-অ্যান ফ্রেজারের বলে শারমিন আউট হয়ে যান ৩৭ রান (৪২ বলে) করে। শেষ ওভারে এই পেসারের বলেই বাউন্ডারি মেরে নিগার দেখা পান নবম টি-টোয়েন্টি ফিফটির।
শেষ ৫ ওভারে ৪৭ রান তুলে বাংলাদেশ পৌঁছায় ১৪৪ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগের চারটি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের রান ছিল ৪৬, ৭৯, ৯৯ ও ১০৩। এবার তা অনেকটা ছাড়িয়ে যাওয়ায় জয়ের আশাও ছিল প্রবল। কিন্তু উদ্বোধনী জুটিতেই ক্যারিবিয়ানরা বুঝিয়ে দেয়, এই লক্ষ্য তাদের জন্য বড় কিছু নয়।
ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৬৩ রানের জুটি গড়া ম্যাথিউস ও কিয়ানা জোসেফ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে যোগ করেন ৬৩ রান। পঞ্চম ওভারে ফারিহা তৃষ্ণার টানা চার বলে এক ছক্কা ও তিনটি চার মারেন জোসেফ।
বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের মূল দুই ভরসা মারুফা আক্তার ও নাহিদা আক্তার ছিলেন না এই ম্যাচে। কেবল ফাহিমা ছাড়া আর কোনো বোলার কোনোরকম বেগ দিতে পারেননি ক্যারিবিয়ান ব্যাটারদের।
২১ বলে ২৯ করে জোসেফ আউট হন ফাহিমার বলে। পরের ওভারে শিমেইন ক্যাম্পবেলকেও ফেরান এই লেগ স্পিনার। তবে বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরতে পারেনি। ম্যাথিউস ও ডটিনের স্ট্রোকের তোড়ে ভেসে যায় বাংলাদেশের লড়াইয়ের আশা।
ক্রিজে যাওয়ার পরপরই রাবেয়া খানের এক ওভারে তিন ছক্কায় তাণ্ডবের শুরু করেন ডটিন। স্বর্ণা আক্তার, ফাহিমা খাতুনরাও ছক্কা হজম করেন তার ব্যাটে।
পরে তৃষ্ণাকে টানা দুটি ছক্কায় ফিফটি করে ফেলেন তিনি রেকর্ড গড়ে। জয় ধরা দেয় অনায়াসই। ডটিনের ছক্কার স্বাক্ষী হয়ে ৭ চারে ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাথিউস।
দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৪০ বলে আসে ৭২ রান।
সিরিজের পরের ম্যাচ বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোর চারটায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৪/৩ (দিলারা ১২, সোবহানা ২২, শারমিন ৩৭, নিগার ৫৩*, স্বর্ণা ৭*; জাইদা ১-০-১০-০, ফ্রেজার ৩-০-২৩-১, ডটিন ৪-০-১৩-০, ম্যাথিউস ৪-০-৩৬-১, রামহারাক ৪-০-২৭-১, ফ্লেচার ৪-০-৩০-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৬.৫ ওভারে ১৪৫/২ (জোসেফ ২৯, ম্যাথিউস ৬০*, ক্যাম্পবেল ৩, ডটিন ৫১*; তৃষ্ণা ৪-০-৪৪-০, সুলতানা ৩.৫-০-২৫-০, রাবেয়া ৩-০-৩৩-০, ফাহিমা ৩-১-১৫-২, লতা ১-০-৮-০, স্বর্ণা ২-০-১৯-০)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: ডেন্ড্রা ডটিন।