দুই বোলারের ৫ উইকেট নেওয়ার বিশ্বরেকর্ডসহ আরও অনেক রেকর্ড গড়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ।
Published : 10 Apr 2025, 05:24 PM
র্যাঙ্কিংয়ে দুই দলের ব্যবধান খুব একটা নেই। বাংলাদেশ ৭ নম্বরে, থাইল্যান্ড ৯ নম্বরে। তবে মাঠের ক্রিকেটে শক্তি-সামর্থ্যের ব্যবধানটা পরিষ্কারভাবেই বুঝিয়ে দিল বাংলাদেশ। প্রত্যাশিত জয় তো ধরা দিলই, সঙ্গে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার অভিযান শুরু করল নিগার সুলতানার দল।
থাইল্যান্ডকে ১৭৮ রানে বিধ্বস্ত করে ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পথচলা শুরু করল বাংলাদেশ।
লাহোরে বৃহস্পতিবার ব্যাটিংয়ে একগাদা রেকর্ড গড়ে ২৭১ রান তোলে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে তো বিশ্বরেকর্ডই হয়ে যায়। দুই স্পিনার ফাহিমা খাতুন ও জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনার দারুণ বোলিংয়ে মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় থাইল্যান্ড।
ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। গত নভেম্বরের আয়ারল্যান্ডকে ১৫৪ রানে হারিয়েছিল তারা।
৫টি করে উইকেট নেন ফাহিমা ও সুমনা। নারী ওয়ানডের ইতিহাসে এক ইনিংসে দুই বোলারের ৫ উইকেট নেওয়ার প্রথম কীর্তি এটি।
প্রায় সাত বছর পর ওয়ানডে খেলতে নেমে মাত্র ৭ রানে ৫ উইকেট নেন সুমনা। ফাহিমার খরচ ২১ রান।
এই দুজনের আগে ওয়ানডেতে বাংলদেশের হয়ে ৫ উইকেট নিতে পেরেছিলেন শুধু খাদিজাতুল কুবরা ও নাহিদা আক্তার।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে করা ২৭১ রান ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। আগের সর্বোচ্চ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৫২ রান।
রেকর্ড পুঁজির বড় কারিগর নিগার সুলতানা। ৭৮ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে দেশের হয়ে দ্রুততম শতরানের রেকর্ড গড়ে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন শারমিন আক্তার।
তৃতীয় উইকেটে নিগার ও শারমিন মিলে গড়েন ১৫২ রানের জুটি। এই সংস্করণে যে কোনো উইকেটে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। গত ডিসেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ফারজানা ও শারমিনের ১৪৩ রানের জুটি ছিল আগের রেকর্ড।
নিগার, শারমিনের আগে পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলেন আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার ফারজানা হক। এক ইনিংসে বাংলাদেশের তিন ব্যাটারের ফিফটির ঘটনাও এটিই প্রথম।
ফারজানার সঙ্গে শারমিনের দ্বিতীয় উইকেট জুটির সংগ্রহ ১০৪ রান। একই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের শতরানের দুটি জুটির প্রথম নজিরও এটি।
লাহোর সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মাঠে জোড়া ৫ উইকেটের মতো জোড়া সেঞ্চুরির দেখাও পেতে পারত বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষ ওভারে শতক থেকে ৮ রান দূরে ছিলেন শারমিন। নিগারের বাকি ছিল ৫ রান।
থাইল্যান্ডের ফিল্ডারের ভুলে পাওয়া বাউন্ডারিতে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে যান নিগার। কিন্তু দুই বল স্ট্রাইক পেয়ে দুই রানের বেশি নিতে পারেননি শারমিন। ১২৬ বলে ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
গত নভেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৬ রান করে আউট হয়েছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। নব্বইয়ে একাধিকবার আটকে পড়া বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার এখন তিনি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ইশমা তানজিমের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শুরুর চাপ সামাল দিয়ে শতরানের জুটি গড়েন ফারজানা ও শারমিন। ৭৫ বলে ৫০ ছুঁয়ে বেশি দূর যেতে পারেননি ফারজানা। ওয়ানডেতে এটি তার ১৪তম ফিফটি।
২৮তম ওভারে নিগার যখন ক্রিজে যান, ততক্ষণে ৪৬ রান করে ফেলেছেন শারমিন। এর কিছুক্ষণ পর ৭৪ বলে পূর্ণ হয় তার পঞ্চাশ। এরপর দ্রুত রান তুলতে থাকেন নিগার।
ইনিংসের ৪০ ওভার শেষে ৭৪ রানে ছিলেন শারমিন। নিগারের নামের পাশে তখন ৪৫ রান। পরে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে শারমিনকে ছাড়িয়ে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার নিগার। আগের দুই সেঞ্চুরি করেছিলেন ফারজানা।
৮০ বলের ইনিংসে ১৫ চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা মারেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ বাউন্ডারির রেকর্ড এটি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৬ রান করার পথে ১৪টি চার মেরেছিলেন শারমিন।
রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮ রান করে ফেলে থাইল্যান্ড। নবম ওভারে চানিদা সুথিরুয়াং ফেরার পর ধস নামে তাদের ইনিংসে। দুই প্রান্ত থেকে একযোগে স্পিন ভেলকি দেখান ফাহিমা ও সুমনা।
২০১৮ সালে অভিষেক সিরিজে খেলা দুই ওয়ানডেতে কোনো উইকেট পাননি সুমনা। দীর্ঘ বিরতির পর ফেরার ম্যাচে একপর্যায়ে মাত্র ১ রানে ৫ উইকেট হয়ে যায় তার। পরে আরও ৬ রান খরচ করে ফেলায় সবচেয়ে কৃপণ ৫ উইকেটের রেকর্ডটি হয়নি ২৫ বছর বয়সী স্পিনারের।
প্রথম উইকেটের মতো থাইল্যান্ডের শেষ ব্যাটারকেও ফেরান ফাহিমা। একইসঙ্গে পূর্ণ হয় তার ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট।
দ্বিতীয় ম্যাচে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে রোববার আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭১/৩ (ইশমা ৮, ফারজানা ৫৩, শারমিন ৯৪*, নিগার ১০১; সুথিরুয়াং ৬-০-৪০-০, মায়া ৬-০-২৮-১, পুথাওং ১০-০-৪১-১, বুচাথাম ১০-০-৪৬-০, কামচম্ফু ৯-০-৫৮-১, চাতুরংগ্রাত্তানা ৬-০-৩৬-০, লাওমি ৩-০-১৮-০)
থাইল্যান্ড: ২৮.৫ ওভারে ৯৩ (বুচাথাম ১৭, সুথিরুয়াং ২২, কঞ্চারায়েঙ্কাই ৫, চান্থাম ৭, চাইওয়াই ১৫, মায়া ০, পুথাওং ৬*, সুয়াঞ্চনরাথি ৩, লাওমি ৪, চাতুরংগ্রাত্তানা ১, কামচম্ফু ৬*; মারুফা ৫-১-১৬-০, নাহিদা ৫-০-৩০-০, ফাহিমা ৮.৫-১-২১-৫, রাবেয়া ৫-১-১৮-০, সুমনা ৫-৩-৭-৫)
ফল: বাংলাদেশ ১৭৮ রানে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: নিগার সুলতানা