আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর জাতীয় দলের সতীর্থদের আবেগময় বার্তা পেয়েছেন তামিম ইকবাল।
Published : 11 Jan 2025, 01:31 PM
২০০৭ সালে তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক অভিষেক থেকে যুগলবন্দির শুরু। পরের ১৬ বছরের বেশি সময়ে বাংলাদেশের হয়ে প্রায় সাড়ে তিনশ ম্যাচ তার সঙ্গে খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। বন্ধুত্ব অবশ্য ছিল তাদের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই। পরে জাতীয় দলে একসঙ্গে এই দীর্ঘ পথচলায় দুজনের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে আরও। প্রিয় বন্ধুর বিদায়ে হৃদয় ভেঙে গেলেও ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন মুশফিক।
২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে থেকে থমকে ছিল তামিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চাওয়ায় ফেরার সামান্য সম্ভাবনা জাগলেও সেই দরজা আর খুলতে দেননি তামিম। সামাজিক মাধ্যমে শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন বিদায়ের সিদ্ধান্ত।
বিদায় বেলায় দীর্ঘ দিনের সতীর্থ ও সাবেক ক্রিকেটারদের কাছ থেকে আবেগময় বার্তা পেয়েছেন তামিম। সামাজিক মাধ্যমে তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন মুশফিক।
“তোর অবসরে আমি শুধু এটুকুই জানাতে চাই, তোর প্রতিটি অর্জনে আমি কতটা গর্বিত, দোস্ত। তুই বাংলাদেশ ক্রিকেটের অসাধারণ একজন দূত এবং বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান।”
প্রায় দেড় যুগের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের জার্সিতে ৩৮৭ ম্যাচ খেলেছেন তামিম। এর মধ্যে ৩৪৫টিতেই তিনি সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন মুশফিককে।
এসব ম্যাচে মোট ৭২ বার উইকেটে জুটি বেধেছেন মুশফিক ও তামিম। ৫টি শতক ও ১৩টি পঞ্চাশছোঁয়া জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেছেন আড়াই হাজারের বেশি রান।
তবে মুশফিকের কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় ২০১৮ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬ বলে ৩২ রানের দশম উইকেট জুটি। সেদিন ম্যাচের শুরুতেই আঙুলের চোটে মাঠ ছাড়েন তামিম৷ পরে হাতে সেলাই করিয়ে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নেমে যান তিনি।
এক হাতে ব্যাট করে সেই ম্যাচে একটি বল খেলেছিলেন তামিম। দলের জন্য সেটিই ছিল মহামূল্য। তিনি ক্রিজে নেমেছিলেন বলেই মুশফিকের সঙ্গে ১৬ বলে ৩২ রানের জুটি হয়েছিল শেষ উইকেটে, ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। মুশফিক নিজেও ব্যথা নিয়ে ১৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন।
তামিমের বীরত্বপূর্ণ ওই জুটিটিই মুশফিকের সবচেয়ে প্রিয়।
“দুবাইয়ে আমাদের জুটির কথা আমি সবসময় মনে রাখব। বিশেষ করে যখন তুই ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাটিং করলি৷ এটি দেশের জন্য তোর নিবেদন ও খেলাটির প্রতি তোর ভালোবাসায় প্রমাণ দেয়।”
“অবসরের সিদ্ধান্তে শুভকামনা দোস্ত৷ মাঠে তোকে মিস করব। তবে ক্রিকেটের মাধ্যমে দারুণ একজন বন্ধু পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ।”
সাফল্যমণ্ডিত ক্রিকেট ক্যারিয়ারের জন্য তামিমকে অভিনন্দন জানান জাতীয় দলের আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ।
“দীর্ঘ ও অসাধারণ ক্যারিয়ারে দারুণ সব অর্জনের জন্য অনেক অভিনন্দন, তামিম। তুমি অনেক কিছু অর্জন করেছ এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক অবদান রেখেছো।”
সামাজিক মাধ্যমের ওই বার্তায় তামিমের সঙ্গে নিজের শেষ জুটি বাধার ছবি জুড়ে দেন মাহমুদউল্লাহ।
“আমার মনে হয়, সেদিনই আমরা বাংলাদেশের হয়ে শেষবার একসঙ্গে ব্যাটিং করেছিলাম। তোমার সঙ্গে খেলা এবং মাঠ ও মাঠের বাইরে হাজারও স্মৃতি খুবই আনন্দময় ছিল। অবসর ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শুভকামনা।”
“তোমার লেগ্যাসি সবসময় মনে রাখা হবে।”
২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তামিমের অভিষেক ম্যাচে উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী ছিলেন শাহরিয়ার নাফীস। ওই বছরেই বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে তামিমের ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারা ছক্কার ভিডিও পোস্ট করেন সাবেক বাঁহাতি ওপেনার।
এছাড়া ছোট্ট আরেক বার্তায় তামিমকে অভিনন্দন জানান নাফীস, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তোমার অবদান বাংলাদেশ সবসময় মনে রাখবে… তামিম ইকবাল’
ক্যারিয়ারের বড় অংশে উদ্বোধনী সঙ্গী হিসেবে তামিমকে পেয়েছেন সৌম্য সরকার। অগ্রজ ওপেনারের বিদায়ে তার সঙ্গে খেলা সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করেন সৌম্য।
“নতুন শুরু ও সারাজীবন মনে রাখার মতো স্মৃতির জন্যও শুভেচ্ছা। অবসর মানে কোনো সমাপ্তি নয়। নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা মাত্র। সামনের সময়টা উপভোগ করুন। অবসরের জন্য শুভকামনা ভাই। মাঠে আপনাকে মিস করব।”
সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া বার্তায় জাতীয় দলে অবদানের জন্য তামিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সাবেক ওপেনার ও বর্তমান নির্বাচক হান্নান সরকার।
“দুর্দান্ত সব অবদানের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট সবসময় তোমাকে মনে রাখবে। ধন্যবাদ তামিম ইকবাল খান।”
বর্তমান জাতীয় দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের কাছে অনুপ্রেরণার বাতিঘর তামিম। বিদায়বেলায় তাই অগ্রজের প্রতি কৃতজ্ঞতাই জানালেন তিনি।
“একটি যুগের সমাপ্তি। তামিম ভাই, আপনি আমাদের সকলের জন্য এক অনুপ্রেরণার বাতিঘর। আপনার আবেগ, নিবেদন, এবং অটল নেতৃত্ব এমন এক ছাপ রেখে গেছে যা শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।”
“আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ আপনার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষার জন্য। শুধু ক্রিকেট নয়, জীবনের বিষয়েও। এই খেলা, ভক্তরা এবং যাদের সঙ্গে আপনি মিশেছেন সবাই আপনার উপস্থিতি মিস করবে। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ, তামিম ভাই। আপনার লেগেসি চিরকাল বেঁচে থাকবে!”
তামিমের সঙ্গে দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলা তাইজুল ইসলাম মানতেই পারছেন না অবসরের সিদ্ধান্ত। বাঁহাতি স্পিনারের কাছে ক্রিকেটারের তামিমের মতোই বড় তারকা ব্যক্তি তামিম।
“তামিম ভাই, অভিনন্দন গৌরবময় একটা ক্রিকেট ক্যারিয়ার উপহার দেওয়ার জন্য। নিজেকে সব সময় সৌভাগ্যবান মনে করেছি আপনার মত একজন কিংবদন্তির সঙ্গে জাতীয় দলে খেলতে পেরে। আপনাকে আর জাতীয় দলের জার্সিতে সহযোদ্ধা হিসেবে পাব না এটাও মেনে নিতে পারতেছি না”
“ক্রিকেট দিয়ে যে দেশপ্রেম আপনার মধ্যে দেখেছি… এশিয়া কাপ এর সেই এক হাতে ব্যাটিং আমৃত্যু মনে থাকবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আপনি যত বড়ই তারকা হন না কেন, ব্যক্তি তামিম যে আমার কাছে আরও বড় তারকা। আল্লাহ যেন আগামীতে আপনার চলার পথ সহজ,সুন্দর ও গৌরবময় করেন।”
ওয়ানডে অভিষেকের সময় তামিমকে অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন ইবাদত হোসেন চৌধুরি। সেই স্মৃতিতে এখনও অম্লান তার মনে। একদিনের ক্রিকেটের প্রথম অধিনায়কের বিদায়ে শুভকামনা জানিয়েছেন এই পেসার।
“তামিম ভাই, আপনাকে মাঠের ক্রিকেটে অনেক মিস করব। সবসময় স্নেহ আর ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন। আপনার অধিনায়কত্বেই এক দিনের ক্রিকেটে আমার অভিষেক হয়েছিল আর প্রথম কলটা আপনার কাছ থেকেই পেয়েছিলাম। দেশের ক্রিকেটে আপনার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আপনার অবসরজীবন সুখের হোক।”