বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি
সিডনি টেস্টের প্রথম ইনিংসে স্রেফ ১৮৫ রানে গুটিয়ে গেছে জাসপ্রিত বুমরাহর দল।
Published : 03 Jan 2025, 03:09 PM
উইকেটে সবুজ ঘাসের ছোঁয়া। সুইং, মুভমেন্টের সঙ্গে মিলল অসমান বাউন্স। কন্ডিশনের সুবিধা দারুণভাবে কাজে লাগালেন অস্ট্রেলিয়ান পেসাররা। নিখুঁত লাইন-লেংথে দুর্দান্ত বোলিং উপহার দিলেন স্কট বোল্যান্ড। সঙ্গে মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সের তোপে দুইশও করতে পারল না ভারত।
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির পঞ্চম ও শেষ টেস্টে শুক্রবার ভারতের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় ৭২.২ ওভারে, ১৮৫ রানে। এনিয়ে সবশেষ ৮ টেস্টে সপ্তমবার ৮০ ওভারের আগে শেষ হয়ে গেল তাদের প্রথম ইনিংস।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে গত ৩০ বছরে চতুর্থবার দুইশর আগে থেমে গেল কোনো দলের প্রথম ইনিংস। এখানে এই অভিজ্ঞতা সবশেষ হয়েছিল ভারতেরই। ২০১২ সালে ১৯১ রানে থেমেছিল তাদের প্রথম ইনিংস।
দিনের শেষ বলে উসমান খাওয়াজাকে হারিয়ে ৯ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দিন শেষে স্বাগতিকরা পিছিয়ে ১৭৬ রানে।
সফরকারীদের অল্পতে গুটিয়ে দেওয়ার পথে ৩১ রানে ৪ উইকেট নেন বোল্যান্ড। গতিময় পেসার স্টার্ক ধরেন তিন শিকার। অধিনায়ক কামিন্সের প্রাপ্তি দুটি। একটি উইকেট নেন অভিজ্ঞ স্পিনার ন্যাথান লায়ন।
ভারতের ইনিংসে পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি আসেনি একটিও। ব্যক্তিগত কোনো ফিফটিও নেই। সর্বোচ্চ ৪০ রান আসে রিশাভ পান্তের ব্যাট থেকে। ৩০ রানও করতে পারেননি আর কেউ।
ফর্মহীনতায় এই ম্যাচ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান ভারত অধিনায়ক রোহিত শার্মা। তার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বের দায়িত্ব পাওয়া জাসপ্রিত বুমরাহ টস জিতে নেন ব্যাটিং। অভিজ্ঞ পেসারের অধিনায়কত্বে পার্থ টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়া সফর শুরু করেছিল ভারত।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ভারত। পঞ্চম ওভারে স্টার্কের ফুল লেংথ বলে লোকেশ রাহুলের ক্যাচ দিয়ে শুরু। দুই ওভার পর বোল্যান্ড বিদায় করে দেন দুর্দান্ত ছন্দে থাকা ইয়াশাসভি জয়সওয়ালকে।
নতুন ব্যাটসম্যান ভিরাট কোহলির ক্যাচ নিয়ে পরের বলেই জন্ম নেয় বিতর্ক। ভারতীয় গ্রেটের ব্যাটের কানা নিয়ে বল যায় দ্বিতীয় স্লিপে। দারুণ রিফ্লেক্সে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে বল মুঠোয় জমানোর চেষ্টা করেও পারেননি স্টিভেন স্মিথ। তবে বল তুলে দেন তিনি ওপরে। কাছেই গালিতে থাকা মার্নাস লাবুশেন অনায়াসে নেন ক্যাচ।
কিন্তু রিপ্লে দেখে বল মাটিতে লাগার রায় দেন টিভি আম্পায়ার। প্রথম সেশন শেষে ওই প্রসঙ্গে স্মিথ বলেন, ‘শতভাগ ক্যাচ ছিল।’ শূন্য রানে জীবন পাওয়া কোহলি ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চলান। তাকে সঙ্গ দেন রোহিতের জায়গায় দলে আসা শুবমান গিল।
অনেকটা সময় উইকেটে কাটিয়ে থিতু হয়ে বিদায় নেন দুই ব্যাটসম্যানই। ন্যাথান লায়নের বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে স্লিপে স্মিথের হাতে ধরা পড়েন গিল (২ চারে ২০)। বিরতির পর সপ্তম ওভারে বিদায় নেন কোহলি। বোল্যান্ডের বলেই স্লিপে ধরা পড়েন তিনি ৬৯ বল খেলে কোনো বাউন্ডারি না মেরে ১৭ রান করে।
চলতি বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে এনিয়ে সাতবার কিপারের হাতে কিংবা স্লিপে ধরা পড়লেন কোহলি। আর চারবার বোল্যান্ডের শিকার হলেন তিনি।
আগের ম্যাচে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পথে হেঁটে উইকেট ছুঁড়ে আসায় প্রবল সমালোচিত হয়েছিলেন পান্ত। এবার তাকে তেমন কোনো ঝুঁকিই নিতে দেখা গেল না। তবে ভারতের ইনিংসের দুই ছক্কার একটি এসেছে তারই ব্যাট থেকে।
রাভিন্দ্রা জাদেজাকে নিয়ে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪৮ রানের জুটি গড়েন পান্ত। বোল্যান্ডের শর্ট বল পুল করে ধরা পড়েন তিনি মিড-অনে। পরের বলেই নিতিশ কুমার রেড্ডিকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান বোল্যান্ড।
দুই দফায় জীবন পেয়েও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ জাদেজা। তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন স্টার্ক। শেষ দিকে ১ ছক্কা ও ৩ চারে ১৭ বলে ২২ রান করেন বুমরাহ। তাকে ফিরিয়েই ভারতের ইনিংস গুটিয়ে দেন কামিন্স।
শেষ বেলায় কেবল তিন ওভার ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম বলে বুমরাহকে চার মেরে ইনিংস শুরু করেন কনস্টাস। আগের টেস্টে এই পেসারের ওপর ঝড় বইয়ে দিয়ে আলোচনায় আসেন অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ওপেনার।
দিনের শেষ বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন খাওয়াজা। তার আগেও ছড়ায় উত্তেজনা। শেষ বলটি করার আগমুহূর্তে কনস্টাসের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান বুমরাহ। উইকেট নিয়ে জবাবটাও দারুণ দেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৭২.২ ওভারে ১৮৫ (জয়সওয়াল ১০, রাহুল ৪, গিল ২০, কোহলি ১৭, পান্ত ৪০, জাদেজা ২৬, নিতিশ ০, ওয়াশিংটন ১৪, প্রাসিধ ৩, বুমরাহ ২২, সিরাজ ৩*; স্টার্ক ১৮-৫-৪৯-৩, কামিন্স ১৫.২-৪-৩৭-২, বোল্যান্ড ২০-৮-৩১-৪, ওয়েবস্টার ১৩-৪-২৯-০, লায়ন ৬-২-১৯-১)
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩ ওভারে ৯/১ (কনস্টাস ৭*, খাওয়াজা ২; বুমরাহ ২-০-৭-১, সিরাজ ১-০-২-০)