মা হারানোর ৭২ ঘণ্টাও হয়নি, পেশাদারিত্বের ডাকে বুকে পাথর চেপে সিলেট থেকে চট্টগ্রামে ফিরে এসে মাঠে নেমে দারুণ বোলিং উপহার দিলেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
Published : 19 Jan 2025, 07:28 PM
তামিম ইকবালের দ্রুত বিদায়ে তখন এমনিতেই চাপে ফরচুন বরিশাল। সৈয়দ খালেদ আহমেদ আক্রমণে এসে তাদের চেপে ধরলেন আরও। বল হাতে নিয়েই ফেরালেন তাওহিদ হৃদয়কে। একটু পর বিদায় করে দিলেন মাহমুদউল্লাহকেও। ছোট পুঁজি নিয়েও খালেদের সৌজন্যে ম্যাচ জমিয়ে তুলল চিটাগং কিংস।
অথচ এই ম্যাচে তার খেলতে নামাটাই বিস্ময়ের। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন, ৭২ ঘণ্টাও যে হয়নি!
গত বৃহস্পতিবার বিপিএলের ম্যাচ শেষেই হোটেলে ফিরে মায়ের চলে যাওয়ার খবর পেয়েছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে চলে যান তিনি। খেলতে পারেননি পরদিনের ম্যাচটি। তবে স্রেফ ওই এক ম্যাচই বাইরে থাকলেন। বুকে পাথর চেপে রোববার আবার নেমে গেলেন মাঠে।
শেষ পর্যন্ত এ দিন বরিশালের কাছে হেরেছে তার দল। তবে খালেদ হারেননি। এত বড় শোক এত দ্রুত সামাল দিয়ে মাঠে নেমেই আসলে একটা জয় তার পাওয়া হয়ে গেছে। তাছাড়া বল হাতেও তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। এই ধাক্কার আগে যে ছন্দ ছিল তার সঙ্গী, ফেরার ম্যাচেও তাকে দেখা গেল একই রূপে।
এই মাঠেই গত বৃহস্পতিবার খুলনা টাইগার্সকে ৪৫ রানে হারায় চিটাগং। শুরুতে ডম সিবলি ও পরে মোহাম্মদ নাওয়াজের উইকেট নিয়ে দলের জয়ে অবদান রাখেন খালেদ। টিম হোটেলে ফিরে দলের সঙ্গে আনন্দ-উল্লাসও করেন তিনি।
এরপরই পান হৃদয় ভেঙে যাওয়ার সেই খবর। পরে রাতে তিনি টিম হোটেল ছেড়ে চলে যান নিজ শহর সিলেটে। শুক্রবার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে খেলা হয়নি অভিজ্ঞ পেসারের। তবে শনিবারই আবার চট্টগ্রামে দলের সঙ্গে যোগ দেন তিনি।
রোববারের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংসেই ম্যাচ থেকে অনেকটা ছিটকে যায় চিটাগং। তবু লড়াই করেন খালেদ। পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই সাফল্য পান তিনি। ফিরিয়ে দেন হৃদয়কে। পরে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করা মাহমুদউল্লাহকে দশম ওভারে ফেরত পাঠান ড্রেসিং রুমে।
তার এমন বোলিংয়ে কিছুটা আশার সঞ্চার হলেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি চিটাগং। তবে খালেদ যে দলের সবার মন জয় করেছেন, ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সেটিই বলেন চিটাগংয়ের সহকারী কোচ এনামুল হক জুনিয়র।
“খালেদকে নিয়ে আমি সত্যিই অনেক গর্বিত। এমন একটা পরিস্থিতিতেও আমাদের কথার সঙ্গে সঙ্গে দলের স্বার্থে সিলেট থেকে চলে এসেছে ও। সিলেটে যদি থেকে যেত, মনটা হয়তো আরেকটু খারাপ থাকত। খালেদ গতকাল আমাকে ফোন করেছিল যে, 'ভাই, আমি কি করব?' আমি ওকে বলেছিলাম যে, সিলেটে থাকলে বাসায় বসে মনটা খারাপ থাকবে। এখানে এলে হয়তো একটু উৎফুল্ল থাকবে।”
“খালেদ নিজেও এই ম্যাচ খেলতে চেয়েছিল। ও বলেছিল যে, আমি বরিশালের সঙ্গে খেলতে চাই। সত্যি কথা বলতে, আমরা সবাই মুগ্ধ। এরকম একটা ঘটনার পর ও চলে এসেছে, ম্যাচ খেলেছে এবং দারুণ বোলিং করেছে।”
এবারের বিপিএলে এখনও পর্যন্ত ৬ ম্যাচে খালেদের শিকার ১০ উইকেট।