শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে চনমনে করে তুলতে এবারের আইপিএল থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনার।
Published : 11 Apr 2024, 02:54 PM
দুনিয়ার তাবৎ ক্রিকেটার মুখিয়ে থাকেন আইপিএলে খেলতে। কিন্তু অ্যাডাম জ্যাম্পা দল পেয়েও নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এবারের আসর থেকে। সিদ্ধান্তটি যদিও সহজ ছিল না তার জন্য। ভারতের এই আকর্ষণীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে না খেলতে অনেক কিছু ভাবতে হয়েছে তাকে, সম্ভাব্য কিছু ভবিষ্যৎ ঝুঁকিও নাড়া দিয়েছে মনে। তবে শেষ পর্যন্ত নিজের শরীর আর মনের দাবি মেটানোর কথাই ভেবেছেন অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনার।
গত আসরে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলেন জ্যাম্পা। এবারও নিলামের আগে তাকে ধরে রাখে রাজস্থান রয়্যালস। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন জানা যায়, দেড় কোটি রুপির চুক্তিতে থাকা ৩২ বছর বয়সী লেগ স্পিনার খেলবেন না এবারের আসরে।
জ্যাম্পার ম্যানেজার তখন কারণ হিসেবে বলেছিলেন কিছুটা শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তির কথা। এবার উইলো টক পডকাস্ট-এ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলেন এই লেগ স্পিনার নিজেই
“বেশ কিছু কারণেই এবারের আইপিএল আমার জন্য ছিল না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এটি বিশ্বকাপের বছর এবং ২০২৩ সালের ধকলে আমি পুরোপুরি নিঃশেষিত। গত বছর পুরো আইপিএলে ছিলাম। বিশ্বকাপেও ভারতে থাকতে হয়েছে মাস তিনেক।”
“এবারও আইপিএলে খেলার চেষ্টা করার সর্বোচ্চ ইচ্ছা আমার ছিল। কিন্তু প্রয়োজনের সময়টা যখন এলো, অনুভব করলাম যে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে নিজেকে সেরা চেহারায় উপস্থাপন করতে পারব না। সামনে তাকিয়ে, বিশ্বকাপও আছে, নিশ্চিতভাবেই যা আমার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
গত আইপিএলে রাজস্থানের হয়ে ছয়টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন জ্যাম্পা। দলটি আছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও ইউজভেন্দ্রা চেহেলের মতো দুজন ভারতীয় স্পিনার। বিদেশি স্পিনার হিসেবে তাই জ্যাম্পার একাদশে জায়গা পাওয়া কিংবা নিয়মিত সুযোগ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এসব ভাবনাও খেলা করেছে জ্যাম্পার মনে।
“সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে সবকিছুর ওপরে প্রাধান্য দিতে হয়েছে আমাকে। এছাড়াও আরও বেশ কিছু সমীকরণ বিবেচনায় নিতে হয়েছে। কাঁচা পরিবার আমার। একাদশে জায়গার জন্য লড়তে হবে, এই পরিস্থিতিতে ভারতে ৯ সপ্তাহ কাটানো সহজ নয়।”
“ব্যাপারটা এমন নয় যে নিজেকে বোঝাতে পারব, ‘বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য ১৪টি ম্যাচ পাচ্ছি।’ জানি না, দুটি ম্যাচ পাব নাকি চারটি কিংবা ছয়টি। এজন্য মনে হয়েছে, বিশ্রাম নেওয়া, পরিবারকে সবার ওপরে রাখা, শরীরকে প্রাধান্য দেওয়া, এসবই আমার জন্য ভালো।”
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কয়েক বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়ার মূল স্পিনার জ্যাম্পা। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ে তার বড় ভূমিকা ছিল। আগামী জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তার দিকে তাকিয়ে থাকবে দল। সবশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ শেষে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মিচেল মার্শ তো সরাসরিই বলেছেন, “অনেকটা এগিয়ে থেকেই আমাদের দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বোলার জ্যাম্পা এবং সম্ভবত এই দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার সে।” দলের সেই চাওয়ার কথা ভেবেও বিশ্রাম নিয়ে বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে চনমনে রাখতে চেয়েছেন এই লেগ স্পিনার।
আইপিএল না খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবশ্য অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। সেসব উঁকি দিয়েছে জ্যাম্পার মনেও। তবে শেষ পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্তে শান্তিই পাচ্ছেন তিনি।
“সিদ্ধান্তটি অবশ্যই সহজ ছিল না। কারণ মনের কোনো সবসময়ই ভাবনা চলতে থাকে যে, আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ালে লোকে কী বলবে বা কীভাবে নেবে, পরেরবার আইপিএল খেলতে গেলে কী হবে… লোকে কি আমাকে এবারের সিদ্ধান্ত দিয়েই বিচার করবে? অনেক কিছুই মনে হয়েছে। তবে সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করার পর অনুভব করেছি, সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি।”