বিপিএল
শেষ ওভারে মুশফিক হাসান ১৫ রান দিলেও মেহেদী হাসান মিরাজ পরাজয়ের মূল দায় দিচ্ছেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার জেসন হোল্ডারকে।
Published : 06 Feb 2025, 09:31 AM
শেষ বলে বাজে এক ডেলিভারিতে চার হজম করেছেন মুশফিক হাসান। শেষ ওভারে লোয়ার অর্ডারদের ব্যাটে রান দিয়েছেন ১৫। তবে তাকে দায় দিচ্ছেন না মেহেদী হাসান মিরাজ। ফাইনালের দুয়ার থেকে ছিটকে পড়ার পেছনে তিনি কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন জেসন হোল্ডারকে। খুলনা টাইগার্স অধিনায়কের মতে, অভিজ্ঞ এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারের বাজে দুটি ডেলিভারিই দলকে পরাজয়ের দিকে নিয়ে গেছে।
বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বুধবার মুশফিকের শেষ ওভারে ১৫ রান নিয়ে চিটাগং কিংসকে ফাইনালে তোলেন আরাফাত সানি, শরিফুল ইসলাম ও আলিস ইসলাম।
ওভারের প্রথম বলে দারুণ এক ফ্লিক শটে চার মারেন সানি। পরের বল থেকে তিনি নেন দুটি রান। তৃতীয় বলে আসে সিঙ্গল। ওই রান নিতে গিয়ে পড়ে গিয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে যান আলিস। তার বদলে শরিফুল এসে প্রথম বলেই মারেন বাউন্ডারি। ফুল লেংথ ডেলিভারি ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় বাউন্ডারিতে। পরের বলে স্লোয়ার ডেলিভারিতে আউট হয়ে যান শরিফুল। আবার ম্যাচে ফেরে খুলনা। ক্রিজে ফেরেন আলিস।
শেষ ডেলিভারিতে শর্ট কাভারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে বল সীমানায় পাঠিয়ে খুলনাকে জিতিয়ে দেন আলিস।
এক বলে চার রানের সমীকরণে মুশফিক যে ডেলিভারিটি করেন, স্টাম্পের বাইরে হাফভলি ধরনের ওই ডেলিভারিতে বাউন্ডারি মারতে পারবেন হয়তো যে কোনো ব্যাটসম্যানই।
ম্যাচের পর মিরাজ জানালেন, মুশফিকের চাওয়া অনুযায়ীই শেষ ডেলিভারির পরিকল্পনা সাজানো হয়েছিল।
“আমি ওকে (মুশফিক) বারবার বলছিলাম যে, ‘তুমি কি চাচ্ছো?’ কারণ, এখানে বোলারের চাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি বল করব না, বোলার বল করবে। এজন্য বারবার ওকে বলছিলাম যে, ‘তুমি কি চাচ্ছো?’ তখন ও বলল, ‘ভাই, আমি ইয়র্কার করব।’ আমি বললাম, ‘ইয়র্কার যদি করো, তাহলে কোথায় করলে ভালো হবে?’ ও বলল, ‘স্টাম্পেই করব।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, স্টাম্পে ইয়র্কার করো।’ ভাবলাম স্টাম্পে ইয়র্কার করলে হয়তো (ব্যাটসম্যান মারতে পারবে না)।”
তবে ওই ওভার বা ওই ডেলিভারির পরও ম্যাচ হারার জন্য মুশফিকের প্রতি অভিযোগ নেই তার। চোটের কারণে প্রায় ৯ মাস মাঠের বাইরে থাকার পর এই টুর্নামেন্ট দিয়েই সপ্তাহ খানেক আগে ফিরেছেন ২২ বছর বয়সী পেসার। শেষটা হতাশাজনক হলেও চার ম্যাচে তার শিকার আট উইকেট। তার বাস্তবতা অনুভব করছেন মিরাজ। খুলনা অধিনায়ক বরং আঙুল তুললেন হোল্ডারের দিকে।
“আমি ওর (মুশফিক) দোষ দিচ্ছি না। এরকম একটা চাপের পরিস্থিতিতে খেলেছে। অনেক দিন ইনজুরিতে ছিল। তার পর এসেছে এবং ভালো বোলিংই করেছে। শুধু শেষ ওভারটা চাপের মধ্যে…অনেক দিন পর ফিরে ম্যাচ খেলাটা কঠিন। ওই ওভারটায় আমি দোষ দিচ্ছি না।”
“আমার কাছে মনে হয় যে, হোল্ডারের ওই দুটি বল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ ওর অনেক অভিজ্ঞতা আছে, অনেক টুর্নামেন্ট খেলেছে। আমি ওর কাছ থেকে এমন কিছু আশা করি না। ওখানেই আমাদের খেলা অর্ধেক শেষ হয়ে গিয়েছে।”
‘ওই দুটি বল’ বলতে ইনিংসের ১৮তম ওভারের দুটি বল, যেটির একটিতে ছক্কা মারেন আলিস, আরেকটিতে চার। মিরাজের মতে, ম্যাচ হারার আয়োজন ওই দুই ডেলিভারিতেই হয়ে গেছে। এজন্যই ২৭৩ টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞ এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারকে শেষ ওভারে বোলিং না দিয়ে নবীন মুশফিককে বেছে নেন খুলনা অধিনায়ক।
“হোল্ডার আগের ওভারে যে বোলিংটা করেছে, ১৪ বলে ওদের রান লাগত ৩২ (১৫ বলে ৩২), ওখানে সে একটা ছক্কা ও একটা চার খেয়ে গিয়েছে। ওখানেই আমাদের ম্যাচ অনেকটা ছুটে গিয়েছে। এরকম একজন অভিজ্ঞ বোলারকে এমন মুহূর্তে এসে যদি বোলাররা (লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান) ছক্কা-চার মেরে দেয়, তাহলে তো আমাদের দলের জন্য কাজটা কঠিন।”
“এরপর হাসান বেশি ভালো বোলিং করেছে বলে শেষ ওভারে ১৫ রানে গিয়েছে। ওখানে যদি মুশফিককে করাতাম (১৯তম ওভারে), যদি ১২-১৩ রান দিয়ে দিত, তাহলে শেষ ওভারে একই রকম রান লাগত। এজন্য আমি ভরসা পাচ্ছিলাম না (হোল্ডারের ওপর)। কারণ, ওই দুটি বল সে যেভাবে করেছে, যেখানে করেছে…। মুশফিক তো আগের দুটি ওভার খুব ভালো করেছে। ওদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানের উইকেটও নিয়েছে। ওইভাবে চিন্তা করে শেষ ওভারটি দিয়েছিলাম (মুশফিককে)।”