জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের বিশ্বাস, চিন্তা ও মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে পারলে এখনকার প্রজন্ম ছাড়িয়ে যেতে পারে সাকিব-তামিম-মুশফিকদের।
Published : 08 Nov 2024, 02:14 PM
বিপিএলের সফলতম কোচ, দেশের ক্রিকেটের আলোচিত কোচ, এসব ছাড়াও আরেকটি বড় পরিচয় আছে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের। দেশের ক্রিকেটের একটি প্রজন্মকে পোক্ত করে তোলায় তার ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল। যখন তিনি ছিলেন জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে, তখন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, এমনকি মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো তখনকার তরুণ ক্রিকেটাররা পেয়েছেন তার নিবিড় সাহচর্য। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই নায়কদের ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা এখনকার ক্রিকেটারদের মধ্যে দেখেন জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে ফেরা এই কোচ।
নব্বই দশকের শেষ দিকে খেলোয়াড়ি জীবনেই কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন সালাউদ্দিন। ঘরোয়া ক্রিকেটে চমকপ্রদ সাফল্যে নজর কাড়েন দ্রুতই। ২০০৬ সালে তাকে যুক্ত করা হয় জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে।
চোটপ্রবণ মাশরাফি তখনও তরুণ, অনেক সম্ভাবনা নিয়ে আবির্ভাব হয়েছে মুশফিকের। সম্ভাবনার আলো ছড়িয়ে পরে দলে আসেন সাকিব-তামিমরা। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে জাতীয় দলে চলে আসা তরুণরা নিবিড় পরিচর্যা করে সালাউদ্দিন হয়ে ওঠেন তাদের অনেকেরই ‘মেন্টর।’ পরে মুমিনুল হকসহ আরও অনেক ক্রিকেটার তাকে পেয়েছেন একইভাবে। অনেক ক্রিকেটারই বিভিন্ন সমস্যায় বা প্রয়োজনে কড়া নাড়েন তার দুয়ারে।
অনেক দিন ধরে অনেক আলোচনার পর অবশেষে তাকে আবার ফেরানো হয়েছে জাতীয় দলে। ২০১০ সালে জাতীয় দলের সহকারি কোচের দায়িত্ব ছাড়ার পর বছর খানেক বিসিবির কোচ হিসেবে কাজ করেছেন একাডেমিতে। এরপর এত বছর পর আবার তাকে জাতীয় দলে ফেরানো হয়েছে সিনিয়র সহকারী কোচের পদ দিয়ে।
সালাউদ্দিন যখন ফিরেছেন, পরবর্তী সাকিব-তামিম পাওয়ার আশাও দেশের ক্রিকেটে জেগে উঠেছে নতুন করে। সালাউদ্দিন জানালেন, তিনিও এই লক্ষ্য নিয়েই ফিরেছেন জাতীয় দলে।
“আগে জাতীয় দলে ছিলাম, একটা প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করেছি। সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ, তাদের সঙ্গে কাজ করেছি, মাশরাফির সঙ্গেও। তারা একটি পর্যায় পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেছে দেশের ক্রিকেটকে, অনেক কিছুই দিয়েছে। পরের প্রজন্মকেও যদি সহায়তা করতে পারি আমার এত বছরের কোচিং অভিজ্ঞতা থেকে, কারও যদি কোনো উপকার করতে পারি, দেশের জন্যও লাভ হবে, ওই ক্রিকেটারের জন্যও হয়তো লাভ হতে পারে। মানসিকভাবে হোক, টেকনিক্যালি হোক, ট্যাকটিক্যালি হোক, সেই দিকগুলোয় যদি সহায়তা করতে পারি, তাতেই বেশি সন্তুষ্ট হব।”
মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহদের প্রজন্ম নিশ্চিতভাবেই দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়েছেন অনেকটা। একটা আইসিসি ট্রফির আক্ষেপ যদিও তারা ঘোচাতে পারেননি। তবে দেশের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়েছেন, জয়ের বিশ্বাসটা গড়েছেন, মানুষের মনে ভরসা জুগিয়েছেন। সেখান থেকেই দলকে আরও এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ জানালেন সালাউদ্দিন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিং করানোর সময় যদিও দেশের ক্রিকেটার মান ও মানসিকতা নিয়ে সালাউদ্দিন হতাশা প্রকাশ করেছেন নানা সময়ই। স্থানীয় ক্রিকেটারদের ক্রিকেট বোধ, ‘কমনসেন্স’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আলোচনার ঝড় তুলেছেন তিনি।
এখন অবশ্য আশার ছবি দেখালেন সালাউদ্দিন। তার মতে, এই ক্রিকেটারদের চিন্তা ও মানসিকতা বদলে দিতে পারলে শুধু দেশের ক্রিকেটে নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেও তারা সাড়া জাগাবেন।
“সাকিব, তামিম, মুশফিক, ওরা একটা প্রজন্ম, একটা পর্যায় পর্যন্ত আমাদের নিয়ে গেছে। এই পর্যায়টা যদি আমরা ভাঙতে না পারি, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, দেশের ক্রিকেট খুব একটা এগোয়নি। পরের প্রজন্ম যেন তাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেটার হতে পারে, আরও বড় হতে পারে, সেই কাজগুলো যদি আমরা করতে পারি… এবং এটা যে খুব অসম্ভব কাজ, তা নয়। কারণ এখন তারা অনেক ভালো ক্রিকেট খেলে। মানসিকভাবে বলুন, শারীরিকভাবে, আর্থিক দিক থেকে, সব দিক থেকেই তারা অনেক সাবলীল।”
“ওই সময় (সাকিব-তামিমদের শুরুতে) হয়তো ওরকম ছিল না। এখন আরও ভালো করার সুযোগ বেশি। জাতীয় দলে সুযোগ-সুবিধা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। এখানে উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে, যদি ক্রিকেটাররা বিশ্বাস করে এবং তার যদি সেভাবে চিন্তাভাবনা করে, এই চিন্তার জায়গা ও মানসিকতা যদি পরিবর্তন করা যায়, তাহলে আমাদের এই ছেলেগুলোও হয়তো পরবর্তীতে বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক বড় সম্পদ হয়ে উঠবে।”
আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলতি সিরিজে দলে যোগ দিতে পারেননি সালাউদ্দিন। তার দায়িত্ব শুরু হবে সামনের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে। তবে কাজ তিনি শুরু করে দিয়েছেন। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে থাকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে তাকে।