দুই বছর পর বিপিএলের দুয়ার খুলেছে মুমিনুল হকের সামনে, রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলার সুযোগটি কাজে লাগাতে চান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
Published : 08 Feb 2024, 06:53 PM
দেশের প্রথম সারির ক্রিকেটারদের প্রায় সবাই ব্যস্ত বিপিএলে। কিন্তু এই রঙিন জগতে ঠাঁই ছিল না মুমিনুল হকের। নিয়তি মেনে নিয়ে তার সময় কাটছিল শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রস্তুতিতে। লাল বলের ক্রিকেটে নিজেকে আরেকটু শানিয়ে নেওয়ার সময়টাতে আচমকাই পেয়ে গেছেন টি-টোয়েন্টির ডাক। অনেক আগেই ‘টেস্ট বিশেষজ্ঞ’ তকমা পেয়ে যাওয়া বাঁহাতি ব্যাটসম্যান প্রায় দুই বছর পর ছোঁয়া পাচ্ছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটির।
বিপিএলের প্রথম আট আসরের সবকটিই খেলেছেন মুমিনুল। গত বছর প্রথমবার মাঠের বাইরে বসে দেখেছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই আসর। এবারও প্লেয়ার্স ড্রাফটে তার প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কোনো দল।
তবে টুর্নামেন্টের মাঝপথে তাকে দলে নিয়েছে রংপুর রাইডার্স। বুধবার তাকে দলে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। পরদিনই দলের সঙ্গে প্রথম অনুশীলন করেন ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে বুধবার অনুশীলনের শুরুতে সহজাত ব্যাটিং ধরে রেখে মাটিতে নামিয়ে বেশির ভাগ শট খেলতে দেখা যায় মুমিনুলকে। তবে সময় যতটা এগিয়েছে ততই টি-টোয়েন্টি ঘরানার সঙ্গে মানানসই বড় শটও খেলেছেন তিনি।
বিপিএলে মুমিনুলের সবশেষ ম্যাচ ২০২২ সালের আসরে। সেবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে চারটি ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পান তিনি। ওই টুর্নামেন্টের পর টি-টোয়েন্টি সংস্করণেই আর কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তার।
জাতীয় দলে সাদা বলের ক্রিকেটে তিনি ব্রাত্য আরও অনেক আগে থেকে। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের পর রঙিন পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যায়নি তাকে। পরের সময়টায় স্রেফ টেস্ট ক্রিকেটেই ছিল মুমিনুলের পদচারণা।
অবশ্য তারও আগে থেকেই তার গায়ে বসেছে টেস্ট বিশেষজ্ঞ তকমা। তাই তো বিপিএল এলে প্রতিবারই মুমিনুলের দল পাওয়া নিয়ে দেখা দেয় সংশয়। তার জন্য এই অভিজ্ঞতা তাই নতুন নয়। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতেও তাই শিখে গেছেন। তবে সঙ্গীদের বেশির ভাগই যখন ব্যস্ত বিপিএলে, তার মনের কোনেও বেদনার সুর তো কিছুটা বেজেই ওঠে!
রংপুরের অনুশীলন শেষে বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মুমিনুল শোনালেন তার সেই যন্ত্রণার গল্প। শুরুতে যদিও খারাপ লাগাটুকু এড়িয়ে যেতে চাইলেন, তবে পরে ঠিকই তা ফুটে উঠল তার কথাতেই।
“(বিপিএলে না থাকায়) খারাপ লাগেনি। পুরো বিপিএলই দেখেছি। খেলা দেখলাম, অনুশীলনও করলাম। লাল বলে অনুশীলন করলাম। সামনে শ্রীলঙ্কা সিরিজ, ওই হিসেবে প্রস্তুত হচ্ছিলাম। অত খারাপ লাগেনি।”
“তবে সত্যি বললে, একটু খারাপ লেগেছে। খুব বেশি যে খারাপ লেগেছে তা নয়। খারাপ লাগার তো বিভিন্ন ধরন আছে, ওই ধরনটা একটু ভিন্ন ছিল। কারও হয়তো একটু খারাপ লাগে, কারও বেশি খারাপ লাগে। যতটুকু খারাপ না লাগলেই নয়, অমন ছিল আমার। এমন খারাপ লাগেনি যে, হতাশ হয়ে যাব। সবাই যেহেতু খেলছে, আমারও খেলার ইচ্ছা ছিল। এটুকুই।”
বিপিএলে সুযোগ না পাওয়ায় টেস্ট ক্রিকেটেই মনোযোগ ছিল তার। কখনও মিরপুরের একাডেমি মাঠে, কখনও আবার মাস্কো-সাকিব ক্রিকেট একাডেমিতে লাল বলের অনুশীলন চালিয়ে গেছেন মুমিনুল।
তবে তার মনের কোনো বিশ্বাস ছিল, সুযোগ একটা সময় আসতেই পারে।
“সবসময় আমি বিশ্বাস করি, রিজিকটা হলো আল্লাহর হাতে। ওরা (একই মানের বিদেশিরা) খেলছে, আমি দেশের ভালো ক্রিকেটার হয়ে খেলতে পারছি না... এটা নিয়ে আফসোস করার কিছু নেই।”
“আমি সবময় বিশ্বাস করি, আমি আমার কাজটা করব। বাকিটা আল্লাহর হাতে। তো আমি আমার কাজটা করার পরে হয়তো সুযোগ পাব। বাংলাদেশ ক্রিকেট এমন একটা জায়গা, যেখানে আপনি সবসময় সুযোগ পাবেন। গুরুত্বপূর্ণ হলো, সুযোগটা কাজে লাগানো।”
নিয়মিত না খেলতে পারলেও না হলেও টি-টোয়েন্টিতে একশর বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে মুমিনুলের। বিপিএলেই প্রথম আট আসরে খেলেছেন ৭০ ম্যাচ। এই টুর্নামেন্টে সাত ফিফটিসহ ১০৭.৬১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১ হাজার ২৬৯ রান। ২০২০ সালে ঢাকা প্লাটুনের হয়ে ৫৯ বলে ৯১ রানের ইনিংসে সামর্থ্যের ঝিলিকও দেখিয়েছেন তিনি।
এবার সুযোগ পেলে দুই বছর পর তিনি খেলবেন বিশ ওভারের ক্রিকেটে। মাঝের সময়টায় এই সংস্করণ আর না খেললেও মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে না বলেই মনে করেন মুমিনুল।
“আমার মনে হয় না (মানিয়ে নিতে) সমস্যা হবে। অনেক দিন ধরে ক্রিকেট খেলছি, কিছুটা হলেও জানি। খুব বেশি জানি, তা বলব না। কিছুটা হলেও বুঝতে পারি। এখানে (বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স) উইকেটও ভালো ছিল। অন্যান্য জায়গার চেয়ে এখানে সুবিধা ভালো। অনুশীলনও ভালো হচ্ছে।”
রংপুরের টপ অর্ডারে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। পিএসএল খেলতে বাবর আজম ও জাতীয় দলের ডাকে সাড়া দিতে চলে গেছেন ব্র্যান্ডন কিং। সবশেষ ম্যাচে রান পেলেও সব মিলিয়ে আগের ম্যাচগুলোয় ছন্দে ছিলেন না ওপেনার রনি তালুকদার। কয়েক ম্যাচে সুযোগ পেলেও উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেননি ফজলে মাহমুদ।
মুমিনুলের একাদশে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা তাই অনেক বেশি। তবে নিজ থেকে এসব নিয়ে ভাবতে চান না তিনি। বরং দলের জন্য কিছু করার আশা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের।
“আমি আজকেই এলাম, অনুশীলন করলাম। এখন হয়তো ম্যাচের আগের দিন জানব (খেলব কিনা)। আমি জানি না, খেলব কী খেলব না। খেললে তখন বুঝতে পারব, আমার দায়িত্বটা কী। খেলব কী খেলব না, সেটা টিম ম্যানেজমেন্ট জানে।”
“প্রত্যাশা অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। যে দলেই খেলি, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলব। রংপুরও সবসময় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলে। যতটুক পারি দলের জন্য অবদান রাখার চেষ্টা করব।”
মাঠের বাইরে বসে বিপিএলের প্রথম অর্ধেক দেখার অভিজ্ঞতা থেকে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিয়েছেন তিনি।
“বিপিএল এখন পর্যন্ত দেখে মনে হয়েছে, টপ অর্ডারদের... ব্যাটসম্যানদের রান করতে একটু কষ্ট হচ্ছে। আর বোলাররা অনেক আনন্দ-উল্লাসে উইকেট পাচ্ছে। দেখলাম ভালোই বোলিং করছে। কন্ডিশন যেমন থাকে, কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। তাই ব্যাটসম্যানদের জন্য একটু চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে।”