গ্রিনের স্মরণীয় ইনিংসের পর অস্ট্রেলিয়ান বোলিংয়ে পিষ্ট কিউই ব্যাটিং

শেষ উইকেটে শতরানের রেকর্ড জুটিসহ ব্যাটিংয়ের মাস্টারক্লাস মেলে ধরে অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন ক্যামেরন গ্রিন।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2024, 06:46 AM
Updated : 1 March 2024, 06:46 AM

সবুজ উইকেট আর চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে প্রথম দিনেই ক্যামেরন গ্রিন উপহার দিয়েছিলেন বীরোচিত এক সেঞ্চুরি। কিন্তু থামেননি সেখানেই। পরদিন সেটিকে রূপ দিলেন তিনি মহাকাব্যিক এক ইনিংসে। ব্যাটিংয়ের মাস্টারক্লাস মেলে শেষ জুটিতে জশ হেইজেলউডকে নিয়ে গড়লেন শতরানের রেকর্ড জুটি। এরপর অস্ট্রেলিয়ান বোলিংয়ে ভেঙে পড়ল নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস।

ওয়েলিংটন টেস্টের দ্বিতীয় দিনটি দেখেছে তিন ইনিংসের মুখ। উইকেটের পতন হয়েছে মোট ১৩টি। তবে দিন শেষে নিয়ন্ত্রণ এখন অনেকটাই অস্ট্রেলিয়ার। দুই ইনিংস মিলিয়ে তারা এগিয়ে আছে ২১৭ রানে। উইকেট আছে ৮টি।

গ্রিনের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস থামে ৩৮৩ রানে। অথচ একসময় তাদের ২০০ ছোঁয়া নিয়েই ছিল শঙ্কা। তাদের এই ঘুরে দাঁড়ানোর নায়ক গ্রিন।

প্রথম দিন শেষ ওভারে তিন বাউন্ডারিতে শতরান স্পর্শ করা ব্যাটসম্যান পরদিন দারুণ ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১৭৪ রানে। শেষ জুটিতে জশ হেইজেলউডকে নিয়ে যোগ করেন ১১৬ রান।

জবাবে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ হয় কেবল ১৭৯ রানেই। অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি কিউইদের টপ অর্ডার। অবশ্য পরের দিকে আক্রমণে এসে লোয়ার অর্ডারে ছোবল দিয়ে চার উইকেট নিয়ে সবুজ উইকেটেও সফলতম বোলার অফ স্পিনার ন্যাথান লায়ন।

২০৪ রানের লিড নিয়ে ফলো-অন না করিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া। দ্রুত দুটি উইকেটও হারায় তারা। তবে ম্যাচের লাগাম তাদের হাতেই।

প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ব্যাটসম্যান হেইজেলউড যখন ক্রিজে গিয়েছিলেন, গ্রিন তখন খেলছিলেন ৯১ রানে। দিনের শেষ ওভার ছিল সেটি। উইল ও’রোকের ওই ওভারেই তিন বাউন্ডারিতে শতরানের পৌঁছে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন তিনি।

দ্বিতীয় দিনে ৯ উইকেটে ২৭৯ রান নিয়ে শুরু করা অস্ট্রেলিয়ার দৃষ্টি ছিল মূলত তিনশ রানে। কিন্তু হেইজেলউড ও গ্রিন দলকে এগিয়ে নেন অনেক দূর। কোনো তাড়াহুড়ো ছিল না তাদের ব্যাটে। গ্রিন তো বটেই, এমনকি হেইজেলউডের ব্যাটেও ছিল নির্ভরতার ছাপ।

দিনের প্রথম আধ ঘণ্টায় স্রেফ ৭ রান করতে পেরেছিলেন গ্রিন। এরপর শট খেলতে শুরু করেন তিনি। দ্রুত বাড়তে থাকে রান। তাকে সহায়তা করে যান হেইজেলউড।

জুটির পঞ্চাশ আসে ৬২ বলে। কিউই বোলারদের আরও হতাশ করে জুটি শতরানে পৌঁছে যায় ১৩৩ বলে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিকে গ্রিন প্রথম দেড়শতে রূপ দেন ২২৫ বলে।

শেষ জুটি থামাতে লাঞ্চের আগে বাড়তি আধ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় নিউ জিল্যান্ডকে। জুটি ভাঙে সেই সময়টাতেই। হেইজেলউডকে আউট করে এই জুটি থামান ম্যাট হেনরি।

২৭ ইনিংস পর টেস্টে ২০ রান ছুঁয়ে শেষ পর্যন্ত ২২ রানে বিদায় নেন হেইজেলউড।

১১৬ রানের এই জুটি ইংল্যান্ড ছাড়া অন্য সব দলের বিপক্ষে শেষ জুটিতে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দশম উইকেটে তাদের আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০০৪ সালে জেসন গিলেস্পি ও গ্লেন ম্যাকগ্রার ১১৪।

১১৬ রানের জুটিতে গ্রিনের অবদান ৮৩। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ২৩ চার ও ৫ ছক্কায় ২৭৫ বলে ১৭৪ রান করে।

শেষ উইকেট নিয়ে ম্যাট হেনরি পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। ২৪ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয়বার এই স্বাদ পেলেন তিনি। ২০২২ সালে ক্রাইস্টচার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি ৭ উইকেট নিয়েছিলেন ৩৯ রানে।

অস্ট্রেলিয়ার শেষ জুটির ধাক্কায় নড়বড়ে নিউ জিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নেমে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ৫ উইকেট হারিয়ে বসে তারা ২৯ রানেই!

পঞ্চম ওভারে মিচেল স্টার্কের বল ছাড়তে গিয়ে শেষ মুহূর্তে ব্যাট পেতে দিয়ে স্টাম্পে টেনে আনেন টম ল্যাথাম। ওই ওভারে বড় আরেকটি ধাক্কা হজম করে কিউইরা। রান নেওয়ার সময় উইকেটের মাঝামাঝি উইল ইয়াংয়ের সঙ্গে ঠোকাঠুকি লেগে রান আউট হয়ে যান কেন উইলিয়ামসন।

আগের সাত টেস্টে সাত সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান এবার ফেরেন শূন্য রানে। তার টেস্ট ক্যারিয়ারের যা একাদশ শূন্য। ৯৯ টেস্টে মাত্র তৃতীয়বার রান আউট হলেন তিনি। সবশেষ এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার সেই ২০১২ সালে।

ফর্মে থাকা আরেক ব্যাটসম্যান রাচিন রাভিন্দ্রাকে বিদায় করেন হেইজেলউড।

চোট কাটিয়ে ফেরা ড্যারিল মিচেলকে সহজাত আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে দেয়নি অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। প্রায় এক ঘণ্টা উইকেটে কাটিয়ে ৩৭ বলে ১১ করে প্যাট কামিন্সের শিকার হন তিনি।

নিউ জিল্যান্ডে স্টার্ক ও কামিন্সের প্রথম উইকেট এগুলোই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ৮৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে স্টার্ক ও ৬১ টেস্টের ক্যারিয়ারে কামিন্স প্রথমবার নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট খেলছেন এবার।

সহায়ক উইকেটে এরপর উইকেট শিকারে যাগ দেন মিচেল মার্শ। ৮৪ মিনিট ক্রিজ আঁকড়ে ৫০ বলে ৯ রান করা ইয়াংকে ফিরিয়ে দেন তিনি।

৩০ ছোঁয়ার আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে নিউ জিল্যান্ড তখন দিশাহারা।

ষষ্ঠ জুটিতে টম ব্লান্ডেল ও গ্লেন ফিলিপস কিছুটা উদ্ধার করেন দলকে। স্বভাবজাত পাল্টা আক্রমণে ৪৩ বলে ফিফটি করে ফেলেন ফিলিপস।

এই জুটি ভাঙতে স্পিন আক্রমণে আনেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। কাজ হয় তাতেই। ৩৩ রান করা ব্লান্ডেলকে ফিরিয়ে ৮৪ রানের জুটি ভাঙেন লায়ন।

এরপর ম্যাট হেনরিকে নিয়ে ৪৮ রানের আরেকটি আগ্রাসী জুটি গড়ে তোলেন ফিলিপস। ১৩ চারে ৭০ বলে ৭১ রান করা ফিলিপসকে শেষ পর্যন্ত থামান হেইজেলউড।

৯ নম্বরে নামা ম্যাট হেনরি এরপরও পাল্টা আক্রমণে রান বাড়ান কিছু। শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হন ৪ ছক্কা ও ৩ চারে ৪২ রান করে। শেষ পাঁচ উইকেটের চারটিই নেন লায়ন।

অস্ট্রেলিয়া আবার ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই হারায় স্টিভেন স্মিথকে। টিম সাউদির বল স্টাম্পে টেনে আনেন তিনি। পরে সাউদির শিকার হয়েই ফেরেন মার্নাস লাবুশেন। বাকি সময়টা পার করে দেন উসমান খাওয়াজা ও নাইটওয়াচম্যান লায়ন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ১১৫.১ ওভারে ৩৮৩ (আগের দিন ২৭৯/৯) (গ্রিন ১৭৪*, হেইজেলউড ২২; সাউদি ২৭-৪-৯২-০, হেনরি ৩০.১-১১-৭০-৫, ও’রোক ২৭-১০-৮৭-২, কুগেলাইন ২০-১-৭৫-২, মিচেল ৪-০-১৭-০, রাভিন্দ্রা ৭-১-২৪-১)

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪৩.১ ওভারে ১৭৯ (ল্যাথাম ৫, ইয়াং ৯, উইলিয়ামসন ০, রাভিন্দ্রা ০, মিচেল ১১, ব্লান্ডেল ৩৩, ফিলিপস ৭১, কুগেলাইন ০, হেনরি ৪২, সাউদি ১, ও’রোক ০*; স্টার্ক ৯-৪-৩৪-১, হেইজেলউড ১২-০-৫৫-২, কামিন্স ১০-২-৩৩-১, মার্শ ৪-০-১০-১, লায়ন ৮.১-১-৪৩-৪)

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ৮ ওভারে ১৩/২ (স্মিথ ০, খাওয়াজা ৫*, লাবুশেন ২, লায়ন ৬*; সাউদি ৪-২-৫-২, হেনরি ৪-১-৮-০)