সিলেট টেস্টে হতশ্রী ব্যাটিং পারফরম্যান্সের পর দিনের শেষ দিকে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা।
Published : 20 Apr 2025, 07:10 PM
ম্যাচ শুরুর আগের দিন নতুন পথে ছোটার বার্তা দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু ২২ গজে নামল যেন সেই পুরোনো বাংলাদেশ। আরও একবার হতশ্রী ব্যাটিংয়ে টেস্টের শুরুতেই চাপে তারা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার প্রথম সেশনের পর দেখা মেলে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির। তবে ওই বর্ষণের চেয়ে বেশি গতি ছিল বাংলাদেশের উইকেট পতনের। একের পর এক ব্যাটসম্যানের বাজে শটের মহড়ায় ইনিংস শেষ মাত্র ১৯১ রানেই।
অথচ ভালো উইকেট হওয়ায় টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়েছিলেন শান্ত। অধিনায়কের আশা ছিল, বড় স্কোর গড়ে পরে চেপে ধরবেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের। হয়েছে ঠিক উল্টো। বাংলাদেশকে অলআউট করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৭ রান করে ফেলেছে সফরকারীরা।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের এই দৈন্য দশা অনেক দিনের। টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর এ নিয়ে টানা চার ম্যাচে দুইশ পেরুতে পারল না তারা। ঘরের মাঠে সবশেষ ১১ ইনিংসে তাদের দুইশ ছাড়ানো ইনিংস স্রেফ দুইটি।
ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে ধুঁকতে থাকা জিম্বাবুয়ের চেয়ে উপযুক্ত প্রতিপক্ষ আর পেত না বাংলাদেশ। উল্টো বাংলাদেশের কঠিন পরীক্ষা নিয়ে নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর অভিযানে এগিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে।
এমন নয় যে, প্রথম দিনের সকালের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বল হাতে জ্বলে উঠেছিলেন রিচার্ড এনগারাভা, ব্লেসিং মুজারাবানিরা। কিন্তু নিজেদের সাদামাটা ব্যাটিংয়ে একের পর এক আউট হয়েছেন সাদমান ইসলাম, শান্ত, মুশফিকুর রহিমরা।
সবুজের ছোঁয়া থাকা উইকেটে দিনের শুরুর আধঘণ্টা নির্বিঘ্নেই কাটান সাদমান ও মাহমুদুল হাসান জয়। মুজারাবানি বেশ কিছু ভালো ডেলিভারি করলেও তাতে বিপদ ঘটতে দেননি দুই ওপেনার।
নবম ওভারে প্রথম পরিবর্তন হিসেবে আক্রমণে আসেন ভিক্টর নিয়াউচি। চতুর্থ বলে অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি খোঁচা মেরে গালিতে ক্যাচ দেন সাদমান। ৩১ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ওপেনিংয়ে পঞ্চাশ রানের জুটির অপেক্ষা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ ইনিংসে।
নিয়াউচির পরের ওভারে অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে যেন দোটানায় পড়ে যান জয়। খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড হয়ে তিনি ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ। দুই ওপেনারের কেউই ১৫ রান করতে পারেননি।
বাংলাদেশের বিপদ বাড়তে পারত আরও। প্রান্ত বদলে নতুন স্পেলে মুজারানিকে আক্রমণে ফেরান ক্রেইগ আরভাইন। তার লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারি ছুঁয়ে যায় মুমিনুল হকের গ্লাভস। কিন্তু উইকেটের পেছনে সেটি লুফে নিতে পারেননি নিয়াশা মায়াভো। শূন্য রানে বেঁচে যান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
অন্য প্রান্তে শান্তও শুরুতে ছিলেন কিছুটা নড়বড়ে। তবে কয়েক বল পরই নিজেকে সামলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দারুণ কিছু শটে মারেন বাউন্ডারি। মুমিনুলের সঙ্গে মিলে ওই সেশনে আর উইকেট পড়তে দেননি তিনি।
পরে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় নামে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। ত্রিশ মিনিট পিছিয়ে যায় দ্বিতীয় সেশন শুরুর সময়। পুনরায় খেলা শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশের পেছাতে থাকার শুরু।
দলের একশ হওয়ার আগে মুজারাবানির বাড়তি বাউন্সের ডেলিভারিতে কাট করার চেষ্টায় পয়েন্টে ক্যাচ দেন শান্ত। ম্যাচের আগের দিন তিনি বলেছিলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বারবার ৩০-৪০ রানে আউট হয়ে যাচ্ছেন। সেটি থেকে বের হওয়ার চেষ্টাই করবেন। কিন্তু নিজের কথা রাখতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে ৬ চারে তার সংগ্রহ ৪০ রান।
শান্তর বিদায়ে ভাঙে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৬৬ রানের জুটি।
এরপর দ্রুত আরও ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিম। এরপর ধীর পায়ে শুরু হয় তার ড্রেসিং রুমে ফেরার যাত্রা। ডেলিভারিটি কতটা বাজে ও মারার মতো ছিল, তা বুঝতে পেরেই হয়তো মাঠ ছেড়ে আর যেতে চাইছিলেন না অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ড্রেসিং রুম পর্যন্ত পথটুকু যেন অসীম মনে হতে থাকে তার।
শুরু থেকেই নড়বড়ে ব্যাটিং করা মুমিনুলের পঞ্চাশছোঁয়া বাউন্ডারিটিও আসে ব্যাটের কানায় লেগে। মুজারাবানির ওই ওভারে অবশ্য পুল করে ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটিও মারেন মুমিনুল। এরপর আর টিকতে পারেননি তিনি।
মাসাকাদজার ফুল লেংথ ডেলিভারি অহেতুক বড় শটের খোঁজে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ৫৬ রান করা মুমিনুল। পরে চমৎকার এক বাউন্সারে মেহেদী হাসান মিরাজকে ভড়কে দেন মুজারাবানি।
চা বিরতির আগে লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি মারার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় সেশনে ৭০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
শেষ সেশনে হাসান মাহমুদকে নিয়ে কিছুক্ষণ লড়াই চালিয়ে যান জাকের আলি। দুজন মিলে অষ্টম উইকেটে গড়ে তোলেন ৪১ রানের জুটি। দারুণ ডেলিভারিতে হাসানকে বোল্ড করেন মুজারাবানি। ১৯ রান করে ফেরেন হাসান।
সঙ্গীর অভাবে পড়ে যাওয়া জাকের ছক্কা মারতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে। শর্ট কভারে ক্যাচ নেন বেন কারান। ৫৯ বলে ২৮ রান করে ফেরেন জাকের। পরে নাহিদ রানাকে বোল্ড করে ইনিংসের সমাপ্তি টানেন ওয়েসলি মাধভেরে।
স্বাগতিকদের গুঁড়িয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে চমৎকার শুরু করেন ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারান। বেশ কয়েকটি দারুণ ডেলিভারি করলেও ধারাবাহিকভাবে তাদের পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, সৈয়দ খালেদ আহমেদরা।
ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে একাদশ ওভারে পঞ্চাশ করে ফেলে জিম্বাবুয়ে। আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন বেনেট। কারান ১৭ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৬১ ওভারে ১৯১ (জয় ১৪, সাদমান ১২, মুমিনুল ৫৬, শান্ত ৪০, মুশফিক ৪, জাকের ২৮, মিরাজ ১, তাইজুল ৩, হাসান ১৯, খালেদ ৪*, নাহিদ ০; এনগারাভা ১৪-২-৩৭-০, মুজারাবানি ১৯-৪-৫০-৩, নিয়াউচি ১৫-২-৭৪-২, মাধভেরে ৩-২-২-২, মাসাকাদজা ১০-৪-২১-৩)
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ১৪.১ ওভারে ৬৭/০ (বেনেট ৪০*, কারান ১৭*; হাসান ৫-২-১৬-০, নাহিদ ৪.১-০-২১-০, খালেদ ২-০-১১-০, মিরাজ ৩-১-১০-০)