কেন উইলিয়ামসনের ৩৩তম টেস্ট সেঞ্চুরির পর হ্যামিল্টন টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের রান পাহাড়ে চাপা পড়ার অবস্থায় ইংল্যান্ড।
Published : 16 Dec 2024, 02:33 PM
সেডন পার্কের সঙ্গে কেন উইলিয়ামসনের বন্ধুত্ব অনেক দিনের। সেই বন্ধন আরও পোক্ত হলো এবার। প্রিয় আঙিনায় তিনি উপহার দিলেন আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস। টিম সাউদির কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক অবশ্য ধরা দিল না। তবে আরেকটি দাপুটে দিনে জয়ের দিকে আরেকধাপ এগিয়ে গেল নিউ জিল্যান্ড।
হ্যামিল্টন টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৬৫৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। এই লক্ষ্য ছোঁয়া তো অসম্ভব, লড়াইয়ের সূচনাও ভালো করতে পারেনি ইংলিশরা। সোমবার তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের রান ২ উইকেটে ১৮।
প্রথম ইনিংসে কিউইদের ২০৪ রানের লিড দ্বিতীয় ইনিংসে আরও হৃষ্টপুষ্ট করার মূল নায়ক উইলিয়ামসন। ৫০ রানে দিন শুরু করা ব্যাটসম্যান ১৫৬ রানে। ২০ চার ও ১ ছক্কায় সাজান তিনি ২০৪ বলের ইনিংসটি।
নিউ জিল্যান্ডের সফলতম ব্যাটসম্যানের ৩৩তম টেস্ট সেঞ্চুরি এটি। হ্যামিল্টনের এই সেডন পার্কে ১২ ম্যাচে তার সেঞ্চুরি হয়ে গেল সাতটি। ফিফটি আছে আরও পাঁচটি। এখানে তার ব্যাটিং গড় এখন ৯৪.৯৪!
দিনের শেষ দিকে দৃষ্টি ছিল অবশ্য সাউদির দিকে। বিদায়ী টেস্টে ব্যাটিংয়ে নামার সময় প্রথম ইনিংসের মতো এবারও তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেন ইংলিশ ক্রিকেটাররা। এই ইনিংসে দুটি ছক্কা মারলে টেস্ট ক্রিকেটে একশ ছক্কা পূর্ণ হতো তার। কিন্তু প্রথম ইনিংসে তিনটি ছক্কা মারতে পারলেও এবার ছক্কার চেষ্টাতেই তিনি আউট হয়ে যান দুই রানে। তার ক্যারিয়ার শেষ হচ্ছে ৯৮ ছক্কায়, যৌথভাবে যা টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ।
একটু পর নিজের মূল কাজে অবশ্য সফল তিনি। দলকে এনে দেন প্রথম ব্রেক থ্রু।
সকালে বৃষ্টি আর ভেজা মাঠ মিলিয়ে প্রথম সেশনে খেলা হয়নি। পরে ঝলমলে রোদের নিচে হাসতে থাকে উইলিয়ামসনের ব্যাট। ৫০ রানে দিন শুরু করা স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান শতরানে পৌঁছে যান ১৩৭ বলে।
টেস্ট সেঞ্চুরি সংখ্যায় এখন তিনি অ্যালেস্টার কুক ও স্টিভেন স্মিথের সঙ্গী। তাদের ওপরে আছেন ১০ জন।
রাচিন রাভিন্দ্রার সঙ্গে তার জুটি হয় ১০৭ রানের। ৪৪ রানে ফেরেন রাভিন্দ্রা।
উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল এরপর ওয়ানডের গতিতে খেলে ৯২ রানের জুটি গড়েন ১১৪ বলে।
একশ থেক দেড়শতে যেতে উইলিয়ামসনের লাগে ৫৯ বল। একটু পর তার ইনিংস শেষ হয় শোয়েব বাশিরের স্পিনে সুইপ খেলার চেষ্টায়।
কিউই ব্যাটসম্যানদের দ্রুত রান তোলার পালা চলতে থাকে এরপরও। ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬০ রান করার পথে ২ হাজার টেস্ট রান পেরিয়ে যান মিচেল। গ্লেন ফিলিপস জ্বলে উঠতে না পারলেও ৯ নম্বরে নেমে ৫ ছক্কায় ৩৮ বলে ৪৯ রানের ইনিংস উপহার দেন মিচেল স্যান্টনার।
সাড়ে চারশ পেরিয়ে থামে নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস। লিড পেরিয়ে যায় সাড়ে ছয়শ।
টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম উইকেট পাওয়ার দিনে তিনটি উইকেট নেন জ্যাকব বেথেল।
ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নেমে ধাক্কা খায় দ্রুতই। টিম সাউদির সুইঙ্গিং ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে আনেন বেন ডাকেট। ম্যাট হেনরির বলে ৫ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে আম্পায়ারের ওপর গজরাতে গজরাতে মাঠ ছাড়েন জ্যাক ক্রলি। দুঃস্বপ্নের সফরে ৬ ইনিংসে তার মোট সংগ্রহ ৫২ রান।
কিউইদের বিপক্ষে ক্রলির বিভীষিকাও চলমান। ১১ টেস্টে তার গড় ১০.৪২। ২১ ইনিংসের ১৪বারই আউট হলেন দুঅঙ্ক ছোঁয়ার আগে।
দিনের শেষ ওভারে আর বিপদ হয়নি। তবে একটি বড় দুর্ভাবনা তাদের আছে। হ্যামস্ট্রিংয়ের পুরোনো চোট আবার জেগে ওঠায় দিনের মাঝামাঝি সময়ই মাঠ ছেড়ে যান অধিনায়ক বেন স্টোকস। পরীক্ষা করানোর পর বোঝা যাবে, তার চোট কতটা গুরুতর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৪৭
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৪৩
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ১০১.৪ ওভারে ৪৫৩ (আগের দিন ১৩৬/৩) (উইলিয়ামসন ১৫৬, রাভিন্দ্রা ৪৪, মিচেল ৬০, ব্লান্ডেল ৪৪*, ফিলিপস ৩, স্যান্টনার ৪৯, সাউদি ২, হেনরি ১; পটস ১৬-৪-৬৪-১, অ্যাটকিনসন ৯-৪-১৬-১, কার্স ১১-২-৩৪-০, স্টোকস ১২.১-২-৫২-২, বাশির ৩৬-১-১৭০-২, বেথেল ১৪.২-০-৭২-৩, ব্রুক ২-০-১৩-০, রুট ১-০-১৭-১)।
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৬৫৮) ৬ ওভারে ১৮/২ (ক্রলি ৫, ডাকেট ৪, বেথেল ৯*, রুট ০*; হেনরি ৩-০-১৪-১, সাউদি ২-১-৪-১, ও’রোক ১-১-০-০)।