দুই ইনিংসেই ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে তিন দিনেই চট্টগ্রাম টেস্ট বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।
Published : 31 Oct 2024, 09:39 AM
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৫৭৫/৬ ডিক্লে.
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫৯
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৪৩.৪ ওভারে ১৪৩
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাপ্তি, বাংলাদেশের হাহাকার
ইনিংস ও ২৭৩ রানের এই জয় দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়। আগের রেকর্ডটিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০১৭ সালে ব্লুমফন্টেইনে ইনিংস ও ২৫৪ রানে জিতেছিল তারা।
এই সফরের আগে উপমহাদেশে গত ১০ বছরে টেস্ট জয় ও টেস্ট সিরিজ জয় ছিল না তাদের। এবার হয়ে গেল দুটিই।
বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় পরাজয় এটি। ২০০২ সাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংস ও ৩১০ রানের জয় সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হার।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয় ও প্রথমবার সিরিজ জয়ের আশায় শুরু করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ পেল উল্টো স্বাদ।
পাকিস্তানে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের আনন্দও এখন যেন সুদূর অতীত। ভারতে বাজেভাবে হারার পর এবার দেশের মাঠেও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারতে হলো জঘন্য ব্যবধানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৫৭৫/৬ (ইনিংস ঘোষণা)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫৯
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৪৩.৪ ওভারে ১৪৩ (জয় ১১, সাদমান ৬, জাকির ৭, মুমিনুল ০, শান্ত ৩৬, মুশফিক ২, মিরাজ ৬, মাহিদুল ২৯, তাইজুল ১, হাসান ৩৮*, নাহিদ ০; রাবাদা ৭-১-১৭-০, মুল্ডার ২-০-৫-০, প্যাটারসন ৩-০-৬-১, মুথুসামি ১৩-৩-৪৫-৪, মহারাজ ১৬.৪-০-৫৯-৫, মার্করাম ২-০-৭-০)।
ম্যাচের সমাপ্তি
বাংলাদেশের শেষ জুটির সময় দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনারের উইকেট ছিল চারটি করে। পাঁচ উইকেটের লড়াইয়ে সেনুরান মুথুসামিকে পেছনে ফেললেন কেশাভ মহারাজ। নাহিদ রানাকে ফিরিয়ে অভিজ্ঞ স্পিনার পূর্ণ করলেন ৫ উইকেট। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ ১৪৩ রানে।
ইনিংস ও ২৭৩ রানের জয়ে সিরিজ ২-০তে জিতে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
ক্যারিয়ারে এই নিয়ে দশমবার ৫ উইকেট নিলেন মহারাজ।
দশে নেমে ৩৮ রান করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার হাসান মাহমুদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগের ৩১ ইনিংসে কোনো ছয় মারতে না পারা ব্যাটসম্যান এই ইনিংসেই ছক্কা মেরেছেন চারটি।
হাল ছেড়ে দিলেন তাইজুল
প্রথম ইনিংসে অনেকটা সময় লড়াই করা তাইজুল ইসলাম এবার সেই তাগিদ দেখালেন না। অফ স্টাম্পে থাকা ফুল লেংথ বল উড়িয়ে মারার চেষ্টা করলেন তিনি। কিন্তু টাইমিং হলো না ঠিকঠাক। মিড অনে সহজ ক্যাচ নিলেন কাগিসো রাবাদা।
১ রানে বিদায় নিলেন তাইজুল। বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ৯৪।
শান্তর লড়াই শেষ
স্রোতের বিপরীতে একটু লড়াই করছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তাকে বিদায় করে দিলেন সেনুরান মুথুসামি।
ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারি টার্ন করে ভেতরে ঢোকে খানিকটা। একটু বাড়তি বাউন্সও ছিল। শান্ত রক্ষণাত্মক শট খেললেও রক্ষা হয়নি। তার ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় লেগ গালিতে টনি ডি জর্জির হাতে।
বাংলাদেশ অধিনায়ক আউট হলেন ৫৫ বলে ৩৬ রান করে। বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ৭৮।
মাহিদুল ইসলামের সঙ্গে উইকেটে যোগ দিলেন তাইজুল ইসলাম।
এই টেস্টের আগে তিন টেস্ট মিলিয়ে দুই উইকেট ছিল মুথুসামির। এই ইনিংসেই তার উইকেট হয়ে গেল চারটি, ম্যাচে পাঁচটি। ব্যাট হাতে অপরাজিত ফিফটিও করেছিলেন তিনি।
মিরাজের ব্যাখ্যাতীত শট
কেশাভ মহারাজের অফ স্টাম্পের বাইরের বল সুইপ করার চেষ্টায় পারলেন না মেহেদী হাসান মিরাজ। বিস্ময়করভাবে আবার পরের বলে স্লগ সুইপের চেষ্টা করলেন তিনি। বল একটু বাড়তি লাফিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে উঠে গেল ওপরে। ক্যাচ নিলেন ট্রিস্টান স্টাবস।
৬ রান করে উইকেট ছুড়ে দিলেন মিরাজ। ৬ উইকেটে বাংলাদেশের রান ৭০।
নাজমুল হাসান শান্তর সঙ্গে ক্রিজে যোগ দিলেন অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।
এবারও ব্যর্থ মুশফিক
প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া মুশফিকুর রহিম দ্বিতীয় ইনিংসেও পারলেন না কিছু করতে। ৯৪তম টেস্ট খেলতে নামা ব্যাটসম্যান ২ রান করে আউট হলেন প্রিয় সুইপ শটে।
ফুল লেংথ বলটি সুইপ করার চেষ্টা করেন মুশফিক। তার ব্যাট পিচে লাগলেও বলে স্পর্শ করেনি। বল লাগে প্যাডে। জোরাল আবেদনে আউট দেননি আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে সফল হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
চা বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারাল বাংলাদেশ। দলের রান ৫ উইকেটে ৪৭।
মুশফিকের টেস্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে ম্যাচ এটি। দুই ইনিংস ব্যাট করে মাত্র দুই রান আগে করেছিলেন একবারই, সেটি সেই ২০০৬ সালে, যা ছিল তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট।
বিদায় নিলেন জাকিরও
চা বিরতির আগে শেষ বলে জাকির হাসানকেও হারাল বাংলাদেশ। তিন ওভারে দ্বিতীয় উইকেট নিলেন সেনুরান মুথুসামি।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ম্যাচ সচেতনার ঘাটতির আরেকটি বড় প্রমাণ এই আউট। চা বিরতির আগে শেষ বলে আচমকা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন জাকির। বলের লেংথ তিনি পড়তে পারেননি। বল পিচ করে সোজা হয়ে তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে যায় কিপারের কাছে। বেলস তুলে নিতে সময় নেননি কিপার কাইল ভেরেইনা।
১ রানে জীবন পাওয়া জাকির আউট হলেন ২৬ বলে ৭ রান করে।
চা-বিরতিতে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৪৩।
ইনিংস পরাজয় এড়াতে প্রয়োজন আরও ৩৭৩ রান। অবশ্য বাংলাদেশ তৃতীয় দিন পার করতে পারে কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
শূন্যের রেকর্ড ছুঁলেন মুমিনুল
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান এবার নাম লেখালেন অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ডে। স্পর্শ করলেন তিনি সবচেয়ে বেশি শূন্যের রেকর্ড।
এই নিয়ে ষোড়শবার টেস্টে শূন্য রানে আউট হলেন মুমিনুল। ১৬ বার শূন্য রানে আউট হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রেকর্ডটি এককভাবে ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের।
১৩ বার করে শূন্যতে আউট হয়েছেন মুশফিকুর রহিম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম।
সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে বিদায়ের বিশ্বরেকর্ড কোর্টনি ওয়ালশের, ৪৩ বার।
এবার শুরুতেই শেষ মুমিনুল
প্রথম ইনিংসে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছিলেন মুমিনুল হক। এবার তিনি বিদায় নিলেন শূন্য রানেই। জয়ের উইকেটের ধাক্কা সামলানোর আগেই আরও বিপদে বাংলাদেশ।
ক্রিজে গিয়ে নিজের দ্বিতীয় বলটিই তুলে মারেন মুমিনুল। লেগ সাইডে সীমানায় ফিল্ডার ছিলেন কেবল একজনই। ডিপ স্কয়ার লেগে সেই ফিল্ডার সেনুরান মুথুসামির কাছেই যায় সহজ ক্যাচ। এভাবে উইকেট পেয়ে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কেশাভ মহারাজ নিজেই।
এক সেশনেই দুবার আউট হয়ে বিরল অভিজ্ঞতা হলো মুমিনুলের।
বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ২৯। নতুন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত।
টেস্ট ক্যারিয়ারে ষোড়শবার শূন্য রানে আউট হলেন মুমিনুল হক।
এবার জয়ের বিদায়
দলের প্রয়োজনে লড়াই করতে পারলেন না মাহমুদুল হাসান জয়ও। ইনিংস হার এড়ানোর লড়াইয়ে আরও বাড়ল বাংলাদেশের বিপদ।
আগের ইনিংসে মাত্র তিন ওভার বোলিং করে একটি উইকেট নিতে পেরেছিলেন সেনুরান মুথুসামি। এবার উইকেটের দেখা পেলেন নিজের প্রথম ওভারেই।
ঝুলিয়ে অফ স্টাম্পের বাইরে একটু টেনে বল করেছিলেন মুথুসামি। বলটি ছেড়ে দেওয়া যেত অনায়াসেই। কিন্তু শরীর থেকে অনেক দূরে ব্যাট পেতে দিলেন জয়। স্লিপে নিচু হয়ে যাওয়া বল দারুণ দক্ষতায় মুঠোয় জমালেন এইডেন মার্করাম।
৩১ বলে ১১ রান করে বিদায় নিলেন জয়। বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ২৮।
শুরুতেই জীবন পেলেন জাকির
তিনে নামা জাকির হাসান আউট হতে পারতেন ১ রান করেই। কিন্তু স্লিপে তার ক্যাচ ফেলে দিলেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম।
সপ্তম ওভারে রাউন্ড দা উইকেটে করা রাবাদার ডেলিভারি জাকিরের ব্যাটে ছোবল দিয়ে ছুটে যায় প্রথম স্লিপের দিকে। কিন্তু দ্বিতীয় স্লিপ থেকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা করেন মার্করাম। তার নাগালেই ছিল বল, কিন্তু বল তার হাতে লেগে পড়ে যায় মাটিতে। মোটামুটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া।
আবার ব্যর্থ সাদমান
দুই রানে জীবন পেয়েও সেটাকে লাগাতে পারলেন না সাদমান ইসলাম। ষষ্ঠ ওভারে প্রথম উইকেট হারাল বাংলাদেশ।
নতুন বলে ভিয়ান মুল্ডারের দুই ওভারের পর তার প্রান্ত থেকে ডেন প্যাটারসনকে আক্রমণে আনেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। প্রথম বলেই সাফল্য পান এই পেসার।
বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে রাউন্ড দা উইকেটে বোলিং করেন প্যাটারসন। বল অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে পিচ করে ভেতরে ঢোকার পরিবর্তে সোজা হয়ে বেরিয়ে যায়। অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢুকবে ভেবে ব্যাট বাড়িয়ে দেন সাদমান। তার ব্যাটে কানা ছুঁয়ে বল যায় কিপার কাইল ভেরেইনার গ্লাভসে।
আগের তিন ইনিংসে ০, ১, ০ রানের পর এবার সাদমানের সংগ্রহ ৬ রান। বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারাল ১৫ রানে।
একটুর জন্য রক্ষা সাদমানের
প্রথম ইনিংসে লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে আউট হওয়া সাদমান ইসলাম পুনরাবৃত্তি প্রায় করেই ফেলেছিলেন। ভিয়ান মুল্ডারের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে গ্ল্যান্স করার চেষ্টায় ঠিকঠাক করতে পারেননি তিনি। আবারও ব্যাটে কানা স্পর্শ করে বল। উইকেটের পেছনে কাইল ভেরেইনা ডান দিকে সরে ফুল লেংথ ডাইভ দিয়ে ক্যাচ প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন। কিন্তু গ্লাভসে টোকা খেয়ে বল চলে যায় পেছনে।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ২ রানে জীবন পেলেন সাদমান।
লড়াইয়ের শুরু
প্রথম ইনিংসের মতোই বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেছেন মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম।
কাগিসো রাবাদার করা প্রথম ওভারে দুই রান নিয়েছেন সাদমান ইসলাম। এই সিরিজের তিন ইনিংসে যা তার সর্বোচ্চ স্কোর! আগের তিন ইনিংসে এই ওপেনারের স্কোর ছিল ০, ১, ০।
নতুন বলে আরেক প্রান্তে বোলিং শুরু করেছেন ভিয়ান মুল্ডার।
ফলো-অনে বাংলাদেশ
প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার লিড ৪১৬ রানের। তার পরও দক্ষিণ আফ্রিকা ফলো-অন করাবে কি না, এই কৌতূহল ছিল। প্রচণ্ড গরমে পেসারদের বিশ্রাম দেওয়ার ভাবনা থাকতে পারত। তবে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিতে তৃতীয় দিনে খুব বেশি বোলিং করতে হয়নি কাগিসো রাবাদা ও ডেন প্যাটারসনকে। বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ইনিংস জয়েই চোখ রাখছে প্রোটিয়ারা।
ইনিংসের সমাপ্তি
তাইজুল ইসলামের বিদায়েই শেষ হলো বাংলাদেশের ইনিংস। কেশাভ মহারাজের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিলেন তাইজুল। কিন্তু সোজা ক্যাচ যায় বোলারের কাছে।
তাইজুলের লড়িয়ে ইনিংস শেষ ৯৫ বল খেলে ৩০ রানে। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ ১৫৯ রানে।
প্রথম ইনিংস ৪১৬ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। এক পর্যায়ে অবশ্য ৪৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে আরও বাজে অবস্থায় ছিল দল। নবম উইকেটে মুমিনুল ও তাইজুলের শতরানের জুটিতে একটু দীর্ঘ হয়েছে ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৫৭৫/৬ (ইনিংস ঘোষণা)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩৮/৪) ৪৫.২ ওভারে ১৫৯ (মুমিনুল ৮২, শান্ত ৯, মুশফিক ০, মিরাজ ১, মাহিদুল ০, তাইজুল ৩০, নাহিদ ০*; রাবাদা ৯-১-৩৭-৫, প্যাটারসন ১০-১-৩১-২, মহারাজ ১৬.২-৪-৫৭-২, মার্করাম ৫-১-৭-০, মুল্ডার ২-১-৫-০, মুথুসামি ৩-১-১০-১)।
রিভিউয়ে রক্ষা নাহিদ রানার
সেনুরান মুথুসামির বলে নাহিদ রানাকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নেন নাহিদ। রিভিউয়ে দেখা যায়, স্টাম্পের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল বল।
মুমিনুলের লড়াইয়ের সমাপ্তি
জুটি ভাঙতে সেনুরান মুথুসামিকে আক্রমণে আনলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। প্রথম বলেই দলকে কাঙ্ক্ষিত উইকেট এনে দিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
ম্যাচে এর আগে মাত্র এক ওভার বোলিং করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম বলটি তিনি করলেন রাউন্ড দা উইকেটে। বল পিচ করে তীক্ষ্ণ টার্ন করে ঢুকল ভেতরে। সামনের পায়ে খেলার পরিবর্তে পেছনে থাকায় ভুল করে ফেললেন মুমিনুল। বল একটু নিচু হয়ে ছোবল দিল তার প্যাডে। আবেদনে সাড়া দিতে বেশি সময় নেননি আম্পায়ার।
মুমিনুল রিভিউ নিয়েছিলন। কিন্তু বল ব্যাটে লাগেনি, ইম্প্যাক্ট ছিল স্টাম্পেই এবং বল গিয়ে লাগছিল মিডল স্টাম্পে। উইকেটের পাশাপাশি রিভিউ হারাল বাংলাদেশ।
মুমিনুলের দুর্দান্ত ইনিংস শেষ হলো ১১২ বলে ৮২ রান করে।
ইনিংসে চার ৮টি, ছক্কা দুটি। এক ইনিংসে একাধিক ছক্কা মেরেছিলেন ক্যারিয়ারে তিনি আগে একবারই, ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপকেষ চট্টগ্রামেই ১০৫ রানের ইনিংসে।
তাইজুলের সঙ্গে তার জুটি থামল ১০৩ রানে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নবম উইকেটে জিমি অ্যান্ডারসন ও গ্রায়েম সোয়ানের ১০৬ রানের রেকর্ড অক্ষত রয়ে গেল
নবম জুটির সেঞ্চুরি
৪৮ রানে ৮ উইকেট হারানো দল আর কোনো উইকেট না হারিয়েই পৌঁছে গেল দেড়শতে। নবম জুটির সেঞ্চুরিও হয়ে গেল এই পথচলায়।
১৬৪ বলে এলো জুটি শতরান। তাতে মুমিনুলের অবদান ৭২, তাইজুলের ২১।
নবম উইকেটে বাংলাদেশের চতুর্থ শতরানের জুটি এটি। রেকর্ড ১৯১ রানের জুটি ২০২১ সালে হারারেতে মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিন আহমেদের ১৯১।
চট্টগ্রামে নবম জুটিতে শতরান আগে ছিল বাংলাদেশের একটিই। ২০১৩ সালে ১০৫ রানের জুটি গড়েছিলেন রবিউল ইসলাম ও সোহাগ গাজী।
পেস-স্পিনে সেশনের শুরু
লাঞ্চের পর পেস-স্পিনের যুগলবন্দিতে সেশনের শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এক প্রান্তে বোলিং করছেন কেশাভ মহারাজ, আরেক প্রান্তে ডেন প্যাটারসন। দুই ওভারই মেডেন খেলেছেন দুই ব্যাটসম্যান।
একটু স্বস্তি নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে
দিনের শুরুটা যেভাবে হয়েছিল, তাতে মনে হচ্ছিল প্রথম সেশনেই অলআউট হয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামতে হবে বাংলাদেশকে। তবে মুমিনুল হকের দারুণ ব্যাটিং আর তাইজুল ইসলামের প্রতিরোধে সেই শঙ্কা এড়ানো গেছে।
লাঞ্চ বিরতির সময় বাংলাদেশে রান ৮ উইকেটে ১৩৭।
আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে ৯৭ বলে ৭৪ রান করে অপরাজিত মুমিনুল হক। প্রিয় মাঠে আরেকটি সেঞ্চুরি তাকে হাতছানি দিচ্ছে। স্পিনে দারুণ খেলার পাশাপাশি লাঞ্চের আগে রাবাদাকেও দারুণ পুল শটে বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি।
৬৭ বল খেলে ১৮ রান করে তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছেন তাইজুল।
৪ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশ ৪৮ রানে হারায় ৮ উইকেট। মিরপুরের মতো এখানেও ৫ উইকেট শিকার করেন রাবাদা। সেখান থেকে মুমিনুল ও তাইজুলের জুটিতে রান এসেছে এখনও পর্যন্ত ৮৯।
নবম উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি আগে। এর আগে ফিফটি জুটি ছিল একটিই। ২০০৮ সালে ব্লুমফন্টেইনে ৬০ রান যোগ করেছিলেন মুশফিকুর রহিম ও শাহাদাত হোসেন।
এবার শতরানের জুটির পথে মুমিনুল-তাইজুল। তবে ফলো-অন এড়ানো এখনও অনেক দূরের পথ।
মুমিনুলের ফিফটি
ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে যতটা সম্ভব লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মুমিনুল হক। প্রিয় মাঠে আরও একবার ফিফটিতে পা রেখেছেন তিনি।
কেশাভ মহারাজের বলে সুইপ করে দুই রান নিয়ে ৭৬ বলে এসেছে তার ফিফটি।
তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ২০তম ফিফটি এটি। বাংলাদেশের রেকর্ড ১৩টি সেঞ্চুরিও তার আছে।
বাংলাদেশের একশ, জুটির পঞ্চাশ
কেশাভ মহারাজের বলে মুমিনুল হকের ব্যাটের কানায় লেগে পাওয়া তিন রানে বাংলাদেশের স্কোর স্পর্শ করল একশ। একই সঙ্গে জুটির রান পেরিয়ে গেল পঞ্চাশ।
৪৮ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর এটাকে একটা অর্জন বলতে হয় বটে!
নবম উইকেট জুটিতে অর্ধশত রান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগে একবারই পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে ব্লুমফন্টেইনে ৬০ রানের জুটি গড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও শাহাদাত হোসেন।
রিভিউয়ে টিকলেন মুমিনুল
কেশাভ মহারাজের বলে সুইপের চেষ্টায় ঠিকঠাক করতে পারেননি মুমিনুল হক। বল প্যাডে লাগার পর প্রোটিয়াদের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। তবে মুমিনুল রিভিউ নেন দ্রুতই।
রিভিউয়ে দেখা যায়, প্যাডে লাগার আগে আলতো করে ব্যাটে স্পর্শ লেগেছিল বলের।
মুমিনুলের রান তখন ৩৬। দলের রান ৮ উইকেটে ৯৩।
একটু লড়াই
দুই রানের মধ্যে চার উইকেট হারানোর সেই মহাসঙ্কটের পর কিছুটা লড়াইয়ের আভাস মিলছে মুমিনুল হক ও তাইজুল ইসলামের ব্যাটে। দুই পেসার আক্রমণ থেকে সরে যাওয়ার পর একটু স্বস্তিও মিলেছে তাদের। দিনের প্রথম পানি পানের বিরতির আগে আর কোনো উইকেট পড়েনি।
৪৮ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর ৩৩ রানের জুটি গড়েছেন মুমিনুল ও তাইজুল। দলের রান ৮ উইকেটে ৮১।
২৬ রানে খেলছেন মুমিনুল, ১৩ রানে তাইজুল।
অবশেষে পঞ্চাশ পেরিয়ে
দুই রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস ছিল টালমাটাল। ৪৮ রানে ৮ উইকেট হারানো দল অবশেষে পঞ্চাশ ছুঁতে পারল ষোড়শ ওভারে। কেশাভ মহারাজের বলে মুমিনুল হকের ছক্কায় দলের রান পেরিয়ে গেল পঞ্চাশ। পরের বলে আরেকটি চার মারলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
অপ্রতিরোধ্য রাবাদা
টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার সুখবর পেয়েছেন আগের দিন। শেষ বিকেলে শিকার ধরেছেন দুটি। তৃতীয় তিন সকালে দ্রুত তিন উইকেট নিয়ে কাগিসো রাবাদা পূর্ণ করলেন ৫ উইকেট।
৬৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে ১৬বার এই স্বাদ পেয়ে গেলেন তিনি। স্পর্শ করেছেন তিনি এই টেস্টের ধারাভাষ্যে থাকা শন পোলককে। যদিও পোলকের ক্যারিয়ার ১০৮ টেস্টের।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এর চেয়ে ৫ উইকেট আছে ডেল স্টেইন (২৬), অ্যালান ডোনাল্ড (২০) ও মাখায়া এনটিনির (১৮)।
মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে কম ডেলিভারির রেকর্ড গড়ে। এরপর চট্টগামের ব্যাটিং উইকেটেও তার আগুনে বোলিংয়ে ছারখার বাংলাদেশের ব্যাটিং।
মাহিদুল যেখানে তৃতীয়
অভিষেক টেস্টে শূন্য রানে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানের তালিকা বাংলাদেশের বেশ দীর্ঘ। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে নিয়ে ২৯জন পেলেন এই তেতো স্বাদ। তবে কিপার-ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আগে দুজনের ছিল এই অভিজ্ঞতা। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে শূন্যতে ফিরেছিলেন মোহাম্মদ সেলিম, ২০১৭ সালে ক্রাইস্টচার্চে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে নুরুল হাসান সোহান।
দুঃস্বপ্নের অভিষেক মাহিদুলের
অভিষেক টেস্টে কিপিংয়ে দুটি সুযোগ হাতছাড়া করার পর এবার ব্যাটিংয়ে দুই বল খেলেই শূন্য রানে ফিলেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।
রাবাদার অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল পিচ করে ভেতরে ঢোকে একটু। না খেলে ছেড়ে দেন মাহিদুল। বল ছোবল দেয় মাহিদুলের প্যাডে। আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
মাহিদুল রিভিউ নেন। রিভিউয়ে দেখা যায়, 'ইম্প্যাক্ট' ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। তবে শট না খেলায় সেটি বিবেচনার বাইরে নিয়ম অনুযায়ী। দেখার ছিল, কোনোরকমে বল স্টাম্পে লাগে কি না। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, ঠিকই স্টাম্পে লাগছিল বল।
মাহিদুলকে শূন্যতে ফিরিয়ে আরও একবার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন রাবাদা।
৪৮ রানে ৮ উইকেট হারাল বাংলাদেশ।
ক্রিজে মুমিনুলের সঙ্গী এখন তাইজুল।
মিরাজ এলেন, মিরাজ গেলেন
দলের বিপর্যয়ের মধ্যে ভরসা দিতে পারলেন না মেহেদী হাসান মিরাজও। বিদায় নিলেন তিনি এক রান করেই।
কাগিসো রাবাদার বলটি ছিল অফ স্টাম্পের একটু বাইরে। পিচ করে সামান্য বেরিয়ে যায় তা। ড্রাইভ আর ডিফেন্সের মাঝামাঝি কিছু করার চেষ্টা করেন মিরাজ। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল যায় কিপারের গ্লাভসে।
বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ৪৮।
শূন্যতে শেষ মুশফিক
শান্তর বিদায়ের রেশ থাকতেই আরেকটি বড় ধাক্কা বাংলাদেশ দলের জন্য। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম স্রেফ ক্রিজে গেলেন এবং ফিরে এলেন।
ব্যাটিং অর্ডারে বদল আর আগের দিন নাইটওয়াচম্যানের নামা মিলিয়ে সাড়ে সাত বছর পর সাত নম্বরে ব্যাটিং করতে নামেন মুশফিক। প্রাপ্তি তার শূন্য।
যে ডেলিভারিতে যেভাবে তিনি আউট হলেন, তাতে ৯৪ টেস্ট খেলা একজন ব্যাটসম্যানের তাতে বিব্রত হওয়া উচিত। ডেন প্যাটারসনের ডেলিভারিটি ছিল মোটামুটি নীরিহ। ফুল লেংথ বলটিতে ফ্লিক করার চেষ্টা করেন মুশফিক, কিন্তু সামনের পায়ে একটু বেশির ভর দেওয়ায় ভালো পজিশনে তিনি যেতে পারেননি। শটে তাই জোর হয়নি। আলতো করে ক্যাচ যায় স্কয়ার লেগে।
শূন্য রানে ফিরলেন মুশফিক। তার ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ শূন্য এটি। বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ৪৭।
অধিনায়কের বিদায়
বাংলাদেশের লড়াইয়ের আশায় বড় চোট সাতসকালেই। কাগিসো রাবাদার দারুণ ডেলিভারিতে খোঁচা মেরে আউট হলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
দিনের চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বল সেটি। ওভারের প্রথম বলটিতেই অল্পের জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি। আউট হওয়া ডেলিভারিটি ছিল রাউন্ড দা উইকেটে করা লেংথ বল। স্টাম্পের বাইরে পিচ করে সামান্য একটি বেরিয়ে যায় তা। অ্যাঙ্গেলের কারণেই হয়তো বল পড়তে ভুল করেন শান্ত। সামনে খেলবেন নাকি পেছনে, ড্রাইভ করবেন নাকি ছাড়বেন, এসব দ্বিধায় কিছুই করা হলো না তার, কেবল জায়গায় দাঁড়িয়ে ছুঁয়ে দিলেন ব্যাট। সহজ ক্যাচ উইকেটের পেছনে।
১৭ বলে ৯ রান করে ফিরলেন শান্ত। রাবাদার এটি তৃতীয় উইকেট। বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ৪৬।
দুই প্রান্তে পেস দিয়ে শুরু
অনুমিতভাবেই এক প্রান্তে ডেন প্যাটারসন ও আরেক প্রান্তে কাগিসো রাবাদার পেস দিয়ে বোলিং শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দিনের প্রথম ওভার থেকে একটি করে সিঙ্গেল নিয়েছেন মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় ওভারে রাবাদার শর্ট অব লেংথ বলে দারুণ এক পুল শটে দিনের প্রথম বাউন্ডারি মেরেছেন শান্ত।
উইকেট যেমন থাকবে
তৃতীয় দিনের খেলা শুরুর আগে পিচ রিপোর্টে শট পোলক জানালেন, উইকেটে চিড় কিছুটা উন্মুক্ত হচ্ছে। তবে তা এখনও বিপজ্জনক কিছু নয়। উইকেট তার কাছে এখনও যথেষ্ট ভালো মনে হচ্ছে ব্যাটিংয়ের জন্য। ব্যাটসম্যান থিতু হতে পারলে বড় ইনিংস না খেলার কারণ দেখছেন না সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক।
বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচের আশা
বাংলাদেশের ব্যাটিং ধস নিয়ে সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারার কথা যার, তৃতীয় দিন শুরুর আগে সেই ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প জানালেন তার ভাবনা।
“অবশ্যই আমরা চা না বারবার এমন অবস্থায় পড়তে যে দ্রুত তিন-চার উইকেট পড়ে যাবে। তবে ওরা এখনও শিখছে। সমস্যা হলো, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে টেস্ট ম্যাচে এসে অনেক বেশিই বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়। তারা ম্যাচ থেকে শিখছে, কীভাবে ইনিংস গড়তে হয়। অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়ে চলেছে অনেক। তবে ২২ গজে নেমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল হয় যাচ্ছে।”
“ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ট্যাকটিক্যাল সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। চিন্তার প্রক্রিয়া ঠিকঠাক করতে হবে। তবে আগেও আমরা বিপর্যয়েন সময় কঠিন মানসিকতা দেখিয়েছি। পাকিস্তানে ৩০ রানে (২৬ রানে) ৬ উইকেট হারানোর পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছি। কিছু ঝলক তাই আমরা দেখিয়েছি। আবারও তেমন কিছুর আশা করছি।”
মুল্ডারের প্রথম শতরানের স্বস্তি
দ্বিতীয় দিনে এক পর্যায়ে পাঁচ রানের মধ্যে তিন উইকেট তুলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর ভিয়ান মুল্ডারের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ও সেনুরান মুথুসামির সঙ্গে তার দেড়শ রানের জুটিতে আবার পিষ্ট হয় বাংলাদেশের বোলিং।
একজন ভালো মানের পেস বোলিং পাওয়ার আশায় মুল্ডারের ওপর অনেক ভরসা টিম ম্যানেজমেন্টের। সম্প্রতি তার বোলিংয়ে উন্নতির ছাপ ছিল স্পষ্ট। কিন্তু ব্যাটিংয়ে প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছিল না। এই সফরের আগে ১৪ টেস্টে কোনো ফিফটি ছিল না তার। এবার সেখানেও তিনি এগিয়ে গেলেন অনেকটা। মিরপুর করলেন নিজের প্রথম ফিফটি। এরপর চট্টগ্রামে অপরাজিত সেঞ্চুরি।
তৃতীয় দিনের খেলা শুরুর আগে নিজের উন্নতির গল্প শোনালেন ২৬ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।
“গত কয়ক বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে আমার জীবন ও ক্রিকেটে। মানসিকত পরিবর্তন ছিল অনেক বড়। গত ২-৩ বছরে গত ২-৩ বছরে অনেক পরিশ্রম করেছি। নিজের ভাবনা, লক্ষ্য নিয়ে আরও মানোযোগী হয়েছি। টেকনিক্যাল দিক থেকে উন্নতি হয়েছে অনেক। অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং ইংল্যান্ডে খেলে আরও সমৃদ্ধ হয়েছি।”
“এখানে টার্নিং বলে কোয়ালিটি বোলারদের সামনে কাজটা কঠিন। ভালো লাগছে যে আমি পেরেছি। এবার আমাদের বোলারদের পালা। আশা করি পেস ও বৈচিত্র ব্যবহার করে আমরা কার্যকর হব। কেজি (রাবাদা) ও কেশাভ (মহারাজ) জানে কীভাবে কাজটা করতে হয়।”
দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাবনা
বিশাল সংগ্রহ গড়ে ইনিংস ঘোষণা করার পর দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য ছিল হয়তো গোটা দুয়েক উইকেট। তারা পেয়ে গেছে চারটি। ম্যাচের দুই দিনই পূর্ণ দাপট ছিল প্রোটিয়াদের।
আগের দিন মাত্র ৯ ওভার বোলিং করেছে তারা। বল তাই এখনও যথেষ্ট নতুন। দুই পেসার কাগিসো রাবাদা ও ডেন প্যাটারসন মিলে আগের দিন নিয়েছেন তিন উইকেট। নতুন দিনের সকালে তারা আবার কঠিন পরীক্ষা নেবেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। ভিয়ান মুল্ডার মিরপুরে দারুণ বোলিং করেছেন। এখানে সেঞ্চুরির পর তার আরও উজ্জীবিত থাকার কথা বল হাতে।
এরপর দুই স্পিনার কেশাভ মহারাজ ও সেনুরান মুথুসামি মুখিয়ে থাকবেন কার্যকর ভূমিকা রাখতে।
বিপর্যয় কাটানোর লড়াই বাংলাদেশের
দিন যায় দিন আসে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বাস্তবতা একই রয়ে যায়। দিনের পর দিন ব্যর্থ টপ অর্ডার। এরপর মান বাঁচানোর লড়াই মিডল অর্ডার ও লোয়ার-মিডল অর্ডারের। যথারীতি চট্টগ্রামেও একই পরিস্থিতির মুখে দল।
দ্বিতীয় দিনে ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে উইকেট হারিয়েছে প্রথম ওভারে, পঞ্চম ওভারে, ষষ্ঠ ও সপ্তম ওভারে। দিন শেষে দলের রান ৪ উইকেটে ৩৮।
শেষ বিকেলে আলোকস্বল্পতায় পেসাররা বোলিং করতে পারেননি। এরপর দিনের খেলা শেষ হয়ে গেছে ১৪ ওভার আগেই। নইলে অবস্থা সঙ্গীন হতে পারত আরও।
ফলো-অন এড়াতে পারা অনেক দূরের পথ। আপাতত জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন মুমিনুল হক ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
এই মাঠে মুমিনুলের রেকর্ড অসাধারণ। তার ১৩ টেস্ট সেঞ্চুরির ৭টিই এখানে। ব্যাটিং গড় এখন ৬১.৬১। অনেক আশা নিয়ে তার ব্যাটে তাকিয়ে থাকবে দল।