খুব কাছে গিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মাহফুজুর রহমান রাব্বি, চোট কাটিয়ে ফিরেই ঝড় তোলা তাওহিদ হৃদয়কে ছাপিয়ে চট্টগ্রামকে জেতালেন নাঈম হাসান।
Published : 17 Dec 2024, 06:55 PM
শেষ ওভারে রাজশাহীর প্রয়োজন ১৩ রান। ৬টি ছক্কা মারা তাওহিদ হৃদয় তখন স্ট্রাইকে। তিন ওভারে ৪৫ রান নেওয়া রাজশাহীকে থামাবে কে! বোলিংয়ে নাঈম হাসান, আগের এক ওভারে যিনি গুনেছেন ১৭ রান। কিন্তু ক্রিকেটের অনিশ্চয়তার সেই চিরন্তন ছবি ফুটে উঠল আবার। হৃদয়কে ছাপিয়ে শেষের নায়ক হয়ে গেলেন নাঈম!
নাটকীয়তা যদিও যথেষ্ট হলো শেষ ওভারেও। প্রথম বলেই ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দিলেন হৃদয়। নতুন ব্যাটসম্যান প্রিতম কুমার ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলই উড়িয়ে দিলেন ছক্কায়। চাপে থাকা নাঈম পরের বলটি করলেন ওয়াইড। তবে দ্রুতই সামলে নিলেন নিজেকে। তৃতীয় বলে আউট করে দিলেন তিনি প্রিতমকে, পরের বলে রান আউট নিহাদউজ্জামান। দারুণ বোলিংয়ে শেষ দুই বলে তিনি দিলেন মোটে এক রান।
চোট কাটিয়ে ফেরার ম্যাচটিতে ঝড় তুললেও শেষ পর্যন্ত তাই পরাজিত দলে তাওহিদ হৃদয়। একই ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফেরা মুশফিকুর রহিমও খেলেন চল্লিশছোঁয়া ইনিংস। কিন্তু নাঈমের শেষের জাদুতে বিফলে যায় দুজনের চেষ্টা। ৪ রানের জয়ে মাঠ ছাড়ে চট্টগ্রাম।
অন্য ম্যাচেও ফল নির্ধারিত হয় শেষ ওভারে। ৬ বলে ২৪ রানের চাহিদায় মাহফুজুর রহমান রাব্বির অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে নাটকীয় জয়ের আশা জাগায় সিলেট। তবে শেষ পর্যন্ত পারেনি তারা। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ১ রানে জেতে ঢাকা মেট্রো।
হৃদয়-মুশফিকের ঝড় ছাপিয়ে চট্টগ্রামের জয়
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠে মুমিনুল হক, ইরফান শুক্কুরের ফিফটি ও শাহাদাত হোসেনের ঝড়ো ত্রিশছোঁয়া ইনিংসে ৭ উইকেটে ১৯৮ রানের পুঁজি পায় চট্টগ্রাম। পরে রাজশাহীর ইনিংস থামে ১৯৪ রানে।
আগের ম্যাচে বরিশালের বিপক্ষে শেষ ওভারে ২৫ রান ঠেকাতে পারেনি চট্টগ্রাম। এবারও জাগে তেমন কিছুর শঙ্কা। তবে দারুণ বোলিংয়ে দলকে জয়ে ফেরান নাঈম। সঙ্গে ব্যাট হাতে ১০ বলে ২০ রানের ক্যামিও খেলা অফ স্পিনার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
পাঁচ ম্যাচে চট্টগ্রামের এটি তৃতীয় জয়। পয়েন্ট টেবিলেও তারা তৃতীয় অবস্থানে। সমান ম্যাচে মাত্র দুই পয়েন্ট পাওয়া রাজশাহী ছয় নম্বরে।
তামিম ইকবাল না থাকায় চট্টগ্রামের হয়ে ওপেনিংয়ের সুযোগ পেয়ে দারুণভাবে কাজে লাগান মুমিনুল। ৫ চারের সঙ্গে ৩ ছক্কায় ৩৬ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৫২ রানের ইনিংস।
দ্বিতীয় উইকেটে শাহাদাত ও মুমিনুলের সঙ্গে মাত্র ৩৩ বলে আসে ৭৩ রান। ২ চার, ৩ ছক্কায় ১৫ বলে ৩৫ রান করেন শাহাদাত।
দুজনের বিদায়ের পর দায়িত্ব নেন ইরফান। শেষ ওভারে ফেরার আগে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ২৯ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন বাঁহাতি কিপার-ব্যাটসম্যান। নাঈমের সঙ্গে তার ২২ বলের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসে ৪৬ রান।
বড় লক্ষ্যে শুরুতেই অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারায় রাজশাহী। তিন নম্বরে নেমে সাব্বির হোসেনও টিকতে পারেননি।
তবে অন্য প্রান্তে ঝড় তোলেন হাবিবুর রহমান। ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ২০ বলে ৩৯ রান করে ফেরেন তিনি।
ফিফটি দিয়ে আসর শুরু করা ব্যাটসম্যান পরের চার ম্যাচেই স্পর্শ করলেন ৩০। প্রায় ১৬৩ স্ট্রাইক রেটে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৫ রান এখন তার।
এরপর জুটি বাধেন মুশফিক ও হৃদয়। আঙুলের চোট কাটিয়ে মুশফিক ও কুচকির চোট থেকে সেরে উঠে হৃদয় এই ম্যাচ দিয়েই ফেরেন মাঠে।
শুরুতে কিছুটা সময় নেন দুজনই। এক পর্যায়ে ১৭ বলে ১৮ রানে ছিলেন হৃদয় আর ১৫ বলে ১৪ রানে মুশফিক।
দ্বাদশ ওভারে দলের একশ পূর্ণ হওয়ার পর গা ঝাড়া দেন দুজন। শহিদুলের বল ছক্কায় ওড়ান হৃদয়। পরে মুমিনুলের বলে চারের পর মারেন ছক্কা। ফেরার ম্যাচে তার পঞ্চাশ পূর্ণ হয় ৩৬ বলে।
ইফরান হোসেনের বলে স্কুপ করে ছক্কা মারেন মুশফিক। পরের ওভারে আহমেদ শরিফুলের বলে হৃদয় মারেন দুটি ছক্কা। পরে ইফরানের বল রিভার্স স্কুপ করে বাউন্ডারি মারেন মুশফিক। পরের বল চার মারেন মিড উইকেটে।
২ ওভারে যখন প্রয়োজন ২৬ রান, শরিফের প্রথম বলে চার মারেন মুশফিক। পরের বলেই তিনি বিদায় নেন ৪৬ (৩১ বলে) রান করে। এরপর শেষ ওভারের নাটকীয়তায় নাঈম ও চট্টগ্রামের হাসি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম বিভাগ: ২০ ওভারে ১৯৮/৭ (মুমিনুল ৫২, জয় ১১, শাহাদাত ৩৫, ইরফান ৫৪, ইয়াসির ১২, সাজ্জাদুল ০, নাঈম ২০*, শহিদুল ১, শামিম ২*; নিহাদউজ্জামান ২-০-২৭-০, শফিউল ৪-০-২৯-১, শফিকুল ৪-০-৪৬-১, ফরহাদ ৩-০-৩২-০, তাইজুল ১-০-১৯-০, সাব্বির ৪-০-২১-৩, শান্ত ২-০-২৩-১)।
রাজশাহী বিভাগ: ২০ ওভারে ১৯৪/৭ (শান্ত ৪, হাবিবুর ৩৯, সাব্বির ১৩, হৃদয় ৬৯, মুশফিক ৪৬, ফরহাদ ৩*, প্রিতম ৬, নিহাদউজ্জামান ০, শফিউল ১*; ইফরান ৪-০-৪০-১, শহিদুল ৪-০-৩৭-০, শরিফ ৪-০-৩৮-৩, শামিম ৪-০-৩১-০, নাঈম ২-০-২৫-২, মুমিনুল ২-০-২২-০)
ফল: চট্টগ্রাম ৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাঈম হাসান
রাব্বির ঝড় সামলে মেট্রোর পাঁচে পাঁচ
প্রায় প্রাণহীন ম্যাচে একরকম একাই উত্তেজনা ফেরান মাহফুজুর রহমান রাব্বি। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ে ফেরান সিলেটকে। শেষ ওভারে তবু প্রয়োজন পড়ে ২৪ রানের।
শহিদুল ইসলামের প্রথম বল লং অফ দিয়ে উড়িয়ে দেন তিনি। পরের বলে রান না পেলেও তৃতীয় বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে মারেন আরেকটি ছক্কা। চতুর্থ বলে ২ রান নিলে সমীকরণ দাঁড়ায় ২ বলে ১০ রান।
এবার স্টাম্পের অনেক বাইরের বল এক্সট্রা কভার দিয়ে আবার ছক্কায় ওড়ান রাব্বি। কিন্তু শেষ বলে বাউন্ডারি মারতে পারেননি। লো ফুল টস বলে ২ রানের বেশি নিতে পারেননি সিলেট অধিনায়ক। ৩৯ বলে ৮২ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেও তাই হতাশা সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
রাব্বির চোখরাঙানি থামিয়ে টুর্নামেন্টে টানা পঞ্চম জয় পায় মেট্রো। সিলেটের এটি পাঁচ ম্যাচে চতুর্থ পরাজয়।
শেষ ওভার শহিদুল করলেও মেট্রোর নায়ক আবু হায়দার। ব্যাট হাতে ২৩ বলে ৪৭ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের পর ২টি উইকেট নেন বাঁহাতি পেস অলরাউন্ডার।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে হতাশ করেন মেট্রোর দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও ইমরানউজ্জামান। তিন নম্বরে নামা আনিসুল দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু রানের গতিতে দম দিতে পারেননি।
ত্রয়োদশ ওভারে ফেরার আগে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ বলে ৩৯ রান করেন আনিসুল। ১৮ রান করতে ২০ বল খেলেন সাদমান ইসলাম।
সাত নম্বরে নেমে ঝড় তোলেন আবু হায়দার। তার ২ চার ও ৫ ছক্কার তাণ্ডবে দেড়শ ছাড়ায় মেট্রো। শামসুর রহমানের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসে ২৮ বলে ৫৮ রান।
সিলেটের পক্ষে ৩ উইকেট নেন টুর্নামেন্টে প্রথম বোলিংয়ের সুযোগ পাওয়া লেগ স্পিনার নাঈম হোসেন সাকিব।
রান তাড়ায় আলিস আল ইসলাম ও রকিবুল হাসানের স্পিনে শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায় সিলেট। পঞ্চাশের আগে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন চার ব্যাটসম্যান। তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন রাব্বি।
তোফায়েলের পর অমিত হাসান, আল ফাহাদও দ্রুত ফিরে গেলে ফের বিপদে পড়ে সিলেট। ৩৮ বলে তখনও প্রয়োজন ছিল ৭৯ রান, উইকেট বাকি স্রেফ ৩টি।
তবে রাব্বির প্রচেষ্টায় জমে ওঠে খেলা। ৩০ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে আরও এগিয়ে যান বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার। কিন্তু সিলেটের জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি তার ৩ চার ও ৭ ছক্কার ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ঢাকা মেট্রো: ২০ ওভারে ১৫৬/৭ (ইমরানউজ্জামান ২, নাঈম ১৭, আনিসুল ৩৯, সাদমান ১৮, শামসুর ২৮, তাহজিবুল ২, আবু হায়দার ৪৭*, রকিবুল ০, শহিদুল ০*; ফাহাদ ২-০-১৮-১, জিসান ২-০-১৩-০, খালেদ ৩-০-৪০-০, নাবিল ৪-০-১৫-০, রাব্বি ৩-০-১৮-১, নাঈম ৪-০-২৯-৩, তোফায়েল ২-০-২২-০)
সিলেট: ২০ ওভারে ১৫৫/৭ (তৌফিক ২৮, জিসান ৫, পিনাক ৭, ওয়াসিফ ১, তোফায়েল ২১, রাব্বি ৮২*, অমিত ৩, ফাহাদ ০, নাঈম ৫*; (রকিবুল ৪-০-২৩-১, আলিস ৪-০-১৭-০, আরাফাত ৩-০-২৪-১, শহিদুল ৪-০-৪৭-১, শামসুর ১-০-৬-১, আবু হায়দার ৪-০-৩৬-২)
ফল: ঢাকা মেট্রো ১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আবু হায়দার