দেশের ব্যাটসম্যানদের এই ঘাটতির জায়গা নিয়ে হতাশ কোচ সালাউদ্দিন, দায় দিলেন তিনি দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিকেও।
Published : 03 Feb 2024, 10:11 AM
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ম্যাচের পরিস্থিতি বোঝার সামর্থ্যের ঘাটতি ও পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে না পারা নিয়ে প্রায় সময়ই আক্ষেপের কথা বলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। বিপিএলের গত আসরে স্থানীয়দের কাণ্ডজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দেশের সফল এই কোচ। এবারের আসরেও তার কাঠগড়ায় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা।
ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘ দিনের কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের খুব কাছ থেকে দেখছেন সালাউদ্দিন। তাদের ভেতর-বাহির খুব ভালোভাবেই জানা তার। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার তিনি প্রশ্ন তুললেন ব্যাটসম্যানদের উইকেট বুঝে খেলার পরিপক্বতা নিয়ে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে রেকর্ডগড়া ৭ উইকেটের জয় পায় কুমিল্লা। বোলিংয়ে ১৩ রানে ৪ উইকেট নেন তানভির ইসলাম। আরেক স্পিনার আলিস আল ইসলাম ১৪ রানে ধরেন ২ শিকার। আর ব্যাটিংয়ে ১৩ বলে ৩১ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে দলের জয় ত্বরান্বিত করেন তাওহিদ হৃদয়।
সব মিলিয়ে পুরোপুরি স্থানীয়দের ওপর ভর করে পাওয়া জয়। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাই সালাউদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হয় দেশি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স নিয়ে। উত্তরে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে ঘাটতির জায়গাও দেখিয়ে দেন কুমিল্লা কোচ।
“(দেশিদের) আরও ভালো করা উচিত। উইকেট যেমনই থাকুক, আমাদের অন্তত এই ধরনের উইকেটে খেলার অভ্যাস আছে। আমরা যদি উইকেটের দায় দেই যে উইকেট ভালো না এবং সেখানে কীভাবে খেলতে হবে, সেটা যদি ব্যাটসম্যানরা না পারে, তাহলে আমি মনে করি, সে বড়সড় ভুল করছে।”
“আমার কথা হলো, উইকেট যদি ১২০ রানের হয়, তাহলে ১২০ রানের মতো খেলো। উইকেট যদি ২০০ রানের মতো হয়, তাহলে ২০০ রানের মতোই খেলো। যদিও আমি মনে করি, আমাদের ছেলেদের ওই ম্যাচিউরিটি ৯০ শতাংশেরই আসেনি। ৯০ শতাংশ ব্যাটসম্যানেরই আসেনি। সেটা কবে হবে, জানি না। তবে একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে তারা হয়তো এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে। তারা যদি চেষ্টা করে, তাহলে হয়তো আস্তে আস্তে শিখে যাবে।”
অবশ্য শুধু ক্রিকেটারদের ওপর দায় পুরোটা না চাপিয়ে দেশের সফল এই কোচ তুলে ধরলেন তাদের বেড়ে ওঠার ক্রিকেট সংস্কৃতির দিকটিও।
“অনেক সময় হয় কী, উইকেট খারাপ দেখলে আমাদের ছেলেরা নেতিবাচক মানসিকতায় ঢুকে যায়। এটাকে কীভাবে ইতিবাচকভাবে দেখতে হয়, সেটা আসলে তারা দেখতে পারে না। এটা তার দোষ দিয়ে লাভ নেই। এটাও শিক্ষার ব্যাপার আছে, কীভাবে করতে হয় তা আস্তে আস্তে শিখতে হবে। এই জায়গাটা নিয়ে আমিও একটু হতাশ। এটা কবে হবে, তা নিয়ে আমরাও চিন্তা করি।”
“আমি আছি, সোহেল (রংপুর রাইডার্সের কোচ সোহেল ইসলাম) আছে, আমরা এটা নিয়ে খুব চিন্তা করি যে, কীভাবে তাদের মানসিক দিকটা উন্নত করা যায়। ছোটবেলা থেকে ওভাবে বড় হয়নি দেখে হয়তো এই জায়গায় এসে হঠাৎ করে বদলে যায়।”
বিপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে ভালো করার জন্য শুধু স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের দাবি বেশ পুরোনো। আরও একবার এর প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দিলেন জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচ।
“আরেকটা বড় জিনিস, আমরা একটাই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলি। এখানে ধরেন ১১টি ম্যাচ। যারা ওপরে যাবে না, তারা ম্যাচ খেলবে কয়টা? ১২টা… এর ওপরই কোনো ক্রিকেটারকে শিখতে হবে। এছাড়া তো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট নেই। এই ছেলেটা যদি আরেকটা টুর্নামেন্ট পেত বা স্থানীয় আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হতো, তখন সে শিখে আসতে পারত অনেক কিছু।”
“এখান তাকে হঠাৎ করে (বিপিএলে) বিশ্বের শীর্ষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতে হচ্ছে। অনেক চাপের মধ্যে খেলতে হচ্ছে। সে তো ভুল করবেই, ভুল করাটাই স্বাভাবিক। যদি আরও বেশি প্রতিযোগিতামূক ম্যাচ খেলত, টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আরও খেলত, তাহলে আমার মনে হয় ছেলেরা পরিপক্ব হয়ে যেত।”