ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে উজ্জ্বল শরিফুল ইসলাম, সম্ভাবনা জাগিয়েও তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান ও সৌম্য সরকার।
Published : 10 Apr 2025, 07:42 PM
শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ২৮ রান। উইকেট বাকি ১টি। পরপর দুই বলে বাউন্ডারি মেরে দিলেন সুমন খান। এক বল পর লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারলেন তিনি। ক্যাচ নিতে পারলেন না সাইফ হাসান। পরমুহূর্তেই নামল বৃষ্টি। ড্রেসিং রুমের দিকে ছুটলেন ফিল্ডাররা। ক্রিজের দুই ব্যাটসম্যানের মাঝে তখন একরাশ হতাশা। ধীর পায়ে তারাও ফিরলেন ডাগ আউটে।
বৃষ্টি ক্রমশ বাড়তে থাকায় খেলা আর শুরু করা যায়নি। রোমাঞ্চকর সমাপ্তির আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত তাই, ডাকওয়ার্থ লুইস স্টার্ন পদ্ধতিতে হেরে যায় ব্রদার্স ইউনিয়ন।
প্রকৃতির বাগড়ায় শেষ হওয়া ম্যাচটিতে দুর্দান্ত বোলিং করেন শরিফুল। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ৬ উইকেট নেন তরুণ বাঁহাতি পেসার। এর আগে সৌম্য সরকারের ব্যাট থেকে আসে চমৎকার ৮০ রানের ইনিংস।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বৃহস্পতিবারের আরেক ম্যাচে অল্পের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান। তবে দারুণ জয়ে রেলিগেশন লিগের চোখরাঙানি এড়িয়েছে ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব।
দিনের অন্য ম্যাচে, গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব।
শরিফুলের ৬ উইকেটে রূপগঞ্জের জয়
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ব্রাদার্সকে ১০ রানে হারায় রূপগঞ্জ। সৌম্য সরকার, মাহমুদুল হাসান জয়ের পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ২৭৭ রান করে তারকায় ঠাসা দলটি।
জবাবে ব্রাদার্স ৪৮.৪ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৬০ রান করার পর বৃষ্টি নামলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ডিএলএস পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচে জয় পান সৌম্য-শরিফুলরা।
১০ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম দল হিসেবে সুপার লিগের টিকেট পেল রূপগঞ্জ। সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে ১০ নম্বরে ব্রাদার্স।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অল্পেই দুই ওপেনারকে হারায় রূপগঞ্জ। তৃতীয় উইকেটে ৯৭ রান যোগ করেন সৌম্য ও জয়। ৫৬ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে আরও এগিয়ে যান সৌম্য, যদিও তার ইনিংসের শেষটা কাঙ্ক্ষিত হয়নি।
কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরার আগে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৭৯ বলে ৮০ রান করেন সৌম্য। জয়ের ব্যাট থেকে আসে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৫ বলে ৫৯ রান। এছাড়া ৪ ছক্কায় ৪৯ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন জাকের আলি।
রান তাড়ায় শুরুতেই শরিফুলের তোপে পড়ে ব্রাদার্স। নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বলে বিশাল চৌধুরি ও মিজানুরকে রহমানকে ফেরান দুদিন আগে টেস্ট দল থেকে জায়গা হারানো ২৩ বছর বয়সী পেসার।
পরের স্পেলে ফিরে উইকেটে থিতু হওয়া আইচ মোল্লাকেও আউট করেন শরিফুল। ৪৬ রান করেন আইচ। লম্বা সময় ক্রিজে থেকে ১০৮ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন মাহফিজুল ইসলাম।
ছয় নম্বরে নেমে মাইশুকুর রহমান ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩২ বলে ৪৬ রান করেন। শেষ দিকে সুমনের ২৫ বলে ৩৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে জয়ের কাছাকাছি যায় ব্রাদার্স। প্রকৃতির বাধায় সেই চেষ্টা যদিও করতে পারেনি তারা।
চমৎকার বোলিংয়ে ৪০ রানে ৬ উইকেট নেন শরিফুল। ৮৮ ম্যাচের লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে এটিই তার প্রথম ৫ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ২৭৭/৯ (তানজিদ ৮, সাইফ ১৫, সৌম্য ৮০, জয় ৫৯, আফিফ ২, জাকের ৪৪, রাতুল ২৫, মেহেদি ১৩, তানজিম ১৫*, তানভির ১, শরিফুল ২*; ইয়াসিন ১০-১-৫৬-৩, সুমন ১০-১-৫৬-১, সোহাগ ৭-০-৪৬-১, মাইশুকুর ১০-১-৪৩-২, জায়েদ ১০-০-৪৭-২, কাপালি ৩-০-২৭-০)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪৮.৪ ওভারে ২৬০/৯ (মাহফিজুল ৭৬, বিশাল ০, মিজানুর ০, আইচ ৪৭, জাহিদুজ্জামান ২৮, মাইশুকুর ৪৬, সোহাগ ১, কাপালি ৭, সুমন ৩৪*, ইয়াসিন ৯, জায়েদ ৪*; শরিফুল ১০-১-৪০-৬, তানজিম ৯.৪-০-৭৩-১, তানভির ১০-০-৪৫-০, রাতুল ৯-০-৩৯-০, মেহেদি ১০-০-৫৯-১)
ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ডিএলএস পদ্ধতিতে ১০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শরিফুল ইসলাম
সোহানের ব্যাটে ধানমন্ডির জয়
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে ৫ উইকেটে হারায় ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব। ২৮১ রানের লক্ষ্য ১৭ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বাধীন দল।
দলের জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন সোহান। চমৎকার ব্যাটিংয়ে ৯৫ বলে ৯৭ রানের ইনিংস খেলেন ধানমন্ডি অধিনায়ক। এছাড়া ঝড়ো ফিফটি করেন ইয়াসির আলি চৌধুরি।
১০ ম্যাচে ধানমন্ডির এটি চতুর্থ জয়। সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে অবনমনের শঙ্কায় রূপগঞ্জ টাইগার্স।
বড় লক্ষ্যে ঝড়ো শুরু করেন দুই ওপেনার আজমির আহমেদ ও হাবিবুর রহমান। ষষ্ঠ ওভারে পঞ্চাশ করে ফেলে ধানমন্ডি। তবে দুজনের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৩০ বলে ৪০ রান করে ফেরেন আজমির। হাবিবুরের ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ৩৩ রান।
তিন নম্বরে নেমে ৭৭ বলে ৪৭ রান করে আউট হন ফজলে মাহমুদ। পরে সানজামুল ইসলাম দ্রুত ফিরে যান। পঞ্চম উইকেটে ৬০ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান সোহান ও ইয়াসির।
সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে নুহায়েল সানদিদের শর্ট বল পুল করার চেষ্টায় শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন সোহান। ৯৫ বলের ইনিংসে ৯ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন তিনি।
অধিনায়ক ফিরলেও ৪০ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন ইয়াসির।
ম্যাচের প্রথমভাগে রূপগঞ্জ টাইগার্সের সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন নাসির হোসেন। ৮ চারের সঙ্গে ৩ ছক্কায় সাজান ৮৪ বলের ইনিংস। আসাদুল্লাহ আল গালিবের ব্যাট থেকে আসে ৬৫ রান।
শেষ দিকে আরিফুল হক ২৮ বলে ৪৮ ও সানদিদ ২৬ বলে ৩৪ রান করলে তিনশর কাছে যায় রূপগঞ্জ টাইগার্স। যদিও তা জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৮০/৭ (মজিদ ১০, অমিত ৪, গালিব ৬৫, নাসির ৭৭, আল আমিন ১৮, ফয়সাল ১০, আরিফুল ৪৮, সানদিদ ৩৪*, হুসনা হাবিব ১১*; মুরাদ ১০-১-৩১-০, এনামুল ৬-০-২২-১, মইন ৫-০-২২-১, কামরুল ৬-০-৫৯-০, সানজামুল ১০-০-৬১-১, ফজলে মাহমুদ ১০-০-৫৯-৩, জিয়াউর ৩-০-২৬-১)
ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব: ৪৭.১ ওভারে ২৮৪/৫ (আজমির ৪০, হাবিবুর ৩৩, ফজলে মাহমুদ ৪৭, সোহান ৯৭, সানজামুল ০, ইয়াসির ৫৫*, মইন ৫*; হুসনা হাবিব ৭-০-৪৭-০, নাসির ৪-০-৩২-১, আওলাদ ১০-০-৪৪-১, মহিউদ্দিন ৪.১-০-৩৭-০, ফয়সাল ৯-০-৩৯-০, সানদিদ ১০-১-৬৫-৩, আল আমিন ৩-০-২০-০)
ফল: ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নুরুল হাসান সোহান
এনামুলদের বড় জয়
পারিশ্রমিক জটিলতায় বেশিরভাগ ক্রিকেটার ম্যাচ বয়কটের ডাক দিলেও শেষ পর্যন্ত খেলতে নামে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব। তবে বদলায়নি তাদের ভাগ্য। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে লড়াই করতেই পারেনি তারা।
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে ১৭০ রানে জিতেছে গাজী গ্রুপ। ৩০৩ রানের লক্ষ্যে মাত্র ১৩২ রানে থামে পারটেক্স।
১০ ম্যাচে সাত জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে উঠেছে এনামুল হকের নেতৃত্বাধীন দল। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ১১ নম্বরে পারটেক্স।
আগের দিন ম্যাচ বয়কটের ডাক দেওয়া জসিম উদ্দিন, জয়রাজ শেখসহ ৫ জনকে বাদ দিয়ে একাদশ সাজায় পারটেক্স।
এই ম্যাচ দিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে অভিষেক হয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ইয়াসিন মুন্তাসিরের। চলতি সপ্তাহেই অস্ট্রেলিয়া থেকে আসেন দেশের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ মোস্তাদিরের ছেলে ইয়াসিন।
অভিষেকে ২ উইকেট নেন ২১ বছর বয়সী লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার। তবে ব্যাটিংয়ে সুবিধা করতে পারেননি তিনি।
গাজী গ্রুপের হয়ে ৯০ বলে সর্বোচ্চ ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন এনামুল। সবশেষ পাঁচ ম্যাচে এটি তার চতুর্থ পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস। লিগে এখন পর্যন্ত ২ সেঞ্চুরি ও ৪ ফিফটিতে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের সংগ্রহ ৬১৮ রান। আর কেউ এখনও ছয়শ রান করতেই পারেন।
পাঁচ নম্বরে নেমে ৬৫ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন সাব্বির হোসেন শিকদার। এছাড়া শামিম মিয়ার ব্যাট থেকে আসে ৫৩ বলে ৫৩ রান। শেষ দিকে ২০ বলে ৩৭ রানের ক্যামিও ইনিংসে দলকে তিনশ পার করান তোফায়েল আহমেদ।
বড় লক্ষ্যে আদিল বিন সিদ্দিক ছাড়া পারটেক্সের আর কেউই ক্রিজে টিকতে পারেননি। একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া দেখেন তরুণ কিপার-ব্যাটসম্যান।
শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৮৫ বলে ৫৩ রান করেন আদিল। আর কেউ ২০ রানও করতে পারেননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৫০ ওভারে ৩০২/৭ (মুনিম ৪, সাদিকুর ৪৬, এনামুল ৭৮, আমিনুল ৩, সাব্বির ৬৪*, শামিম ৫৩, তোফায়েল ৩৭, সাকলাইন ১, পারভেজ ৮*; মোহর ৭-০-৩১-১, তানভির ১০-০-৬৯-২, আশরাফুল ৭-০-৫২-০, আলাউদ্দিন ১০-০-৭০-০, ইয়াসিন ১০-১-৪২-২, আহরার ৩-০-১৮-০, রুবেল ৩-০-১৮-২)
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৩১.৫ ওভারে ১৩২/৯ (মইনুল ১৯, আদিল ৫৩*, রুবেল ৫, ইয়াসিন ৭, আহরার ১৭, রাকিব ২, সাব্বির ৪, তানভির ১৭, আলাউদ্দিন ২, আশরাফুল ১, মোহর আহত অনুপস্থিত; পারভেজ ২-০-১৩-০, সাকলাইন ১-০-১২-০, সাদিকুর ১-০-৬-১, হাশিম ৮-১-২২-১, শামিম ৭-০-২৯-২, ওয়াসি ৬.৫-০-২৬-২, আমিনুল ৪-০-১৯-১, তোফায়েল ২-০-৫-২)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ১৭০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শামিম মিয়া