বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থ টেস্টে দ্বিতীয় দিন শেষে ২১৮ রানে এগিয়ে ভারত।
Published : 23 Nov 2024, 04:40 PM
ব্যাট হাতে প্রথম দিনের ব্যর্থতা কী দারুণভাবেই না কাটিয়ে উঠলেন ইয়াশাসভি জয়সওয়াল। চমৎকার ব্যাটিংয়ে নব্বইয়ের ঘরে অপরাজিত থেকে দিনের খেলা শেষ করলেন তিনি। তার সঙ্গে লোকেশ রাহুলের উদ্বোধনী জুটির দৃঢ়তায়, অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে, বড় লিডের পথে ছুটছে ভারত।
পার্থ টেস্টের প্রথম ইনিংসে স্রেফ ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়া সফরকারীরা দ্বিতীয়ভাগে কোনো উইকেট না হারিয়েই করে ফেলেছে ১৭২ রান। স্বাগতিকদের ১০৪ রানে গুটিয়ে লিড নেওয়ার পর, মোট ২১৮ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ভারত।
প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়ার আক্ষেপ এবার মিটিয়ে দিলেন জয়সওয়াল। সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ২ ছক্কা ও ৭ চারে ১৯৩ বলে ৯০ রান নিয়ে খেলছেন।
রাহুল প্রথম ইনিংসেও দেখান দৃঢ়তা; কিন্তু সেবার পারেননি বড় ইনিংস খেলতে। এবার ১৫৩ বলে স্রেফ ৪টি চার মেরে ৬২ রানে অপরাজিত আছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় একই ইনিংসে দুই ভারতীয় ওপেনারের পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের দেখা মিলল ৩৮ বছর পর। সবশেষ ১৯৮৬ সালে এক টেস্ট ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন সুনিল গাভাস্কার (১৭২) ও কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্ত (১১৬)।
উদ্বোধনী জুটিতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০ বছর পর শতরান দেখল ভারত। সবশেষ ২০০৪ সালে সিডনিতে আকাশ চোপড়া ও ভিরেন্দর শেবাগের শুরুর জুটিতে এসেছিল ১২৩ রান।
পেসারদের আগুনে বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসেই ৪৬ রানের লিড পায় ভারত। চার উইকেট নিয়ে শনিবার দিন শুরু করা জাসপ্রিত বুমরাহ পঞ্চম শিকার ধরেন নিজের প্রথম ডেলিভারিতেই। অস্ট্রেলিয়ায় এই স্বাদ পেলেন তিনি দ্বিতীয়বার, টেস্ট ক্যারিয়ারে ১১বার।
অপ্টাস স্টেডিয়ামে ৭ উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে নতুন দিন শুরু করা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ওভারে আঘাত হানেন বুমরাহ। অ্যালেক্স কেয়ারিকে ২১ রানে কটবিহাইন্ড করে এই পেসার পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট।
ন্যাথান লায়নকে টিকতে দেননি হার্শিত রানা। পরে শেষ জুটিতে মিচেল স্টার্ক ও জশ হেইজেলউড একটু লড়াই করে দলকে একশ পার করান।
১২৭ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৬ রান করা স্টার্ককে বিদায় করে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ করেন হার্শিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ইনিংসে তিন উইকেট শিকার করেন ২২ বছর বয়সী এই পেসার।
দুই দলের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং দেখে পিচ যতটা ভয়ঙ্কর মনে হয়েছিল, আদতে তা ছিল না। দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে সেটাই প্রমাণ করে দিলেন জয়সওয়াল ও রাহুল। ধৈর্য নিয়ে খেললে যে রান পাওয়া সম্ভব, তা বুঝিয়ে দিলেন ভারতের দুই ওপেনার।
অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের তোপ সামলে সাবধানী ব্যাটিংয়ে ইনিংস গড়তে থাকেন দুইজন। নিজের জোনে পেলেই কেবল মারেন বাউন্ডারি। প্রথম ১০ ওভারে দুই বাউন্ডারি পায় ভারত, জয়সওয়ালের ব্যাট থেকে।
দেখেশুনে খেলে দ্বিতীয় সেশনে ৮৪ রান তুলে দলকে কোনো উইকেট হারাতে দেননি রাহুল ও জয়সয়াওল। শেষ সেশনে ভারতের রানের গতি কমে যায় আরও। সেশনের প্রথম ১৭ ওভারে কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি দুই ব্যাটসম্যান।
১২৩ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন জয়সয়াওল। রাহুলের ফিফটি আসে ১২৪ বলে। তাদের জুটির শতরান আসে ২২৯ বলে।
মিচেল স্টার্কের পর লায়নকে ছক্কায় ওড়ান জয়সওয়াল। আর তাতে দারুণ এক রেকর্ড গড়েন তিনি। এক পঞ্জিকাবর্ষে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কার কীর্তিটি এখন তার, ৩৪টি। ছাড়িয়ে যান ২০১৪ সালে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মারা ৩৩ ছক্কা।
ওই দুই ছক্কায় আশির ঘরে পৌঁছে যান জয়সওয়াল। একটা সময় মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি বোধহয় পূরণ করে ফেলবেন তিনি এদিনই। কিন্তু তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পেতে তাকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ১৫০
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৫১.২ ওভারে ১০৪ (আগের দিন ৬৭/৭) (কেয়ারি ২১, স্টার্ক ২৬, লায়ন ৫, হেইজেলউড ৭*; বুমরাহ ১৮-৬-৩০-৫, সিরাজ ১৩-৭-২০-২, হার্শিত ১৫.২-৩-৪৮-৩, নিতিশ ৩-০-৪-০, ওয়াশিংটন ২-১-১-০)
ভারত ২য় ইনিংস: ৫৭ ওভারে ১৭২/০ (জয়সয়াওল ৯০*, রাহুল ৬২*; স্টার্ক ১২-২-৪৩-০, হেইজেলউড ১০-৫-৯-০, কামিন্স ১৩-২-৪৪-০, মার্শ ৬-০-২৭-০, লায়ন ১৩-৩-২৮-০, লাবুশেন ২-০-২-০, হেড ১-০-৮-০)