বিপিএল
পারিশ্রমিক না পেয়ে দুর্বার রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটারদের কেউ মাঠে যাননি রোববার, ম্যাচের দিন সকালে হোটেল বদলাতে হয় দলকে, বিব্রতকর অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন অধিনায়ক তাসকিন আহমেদ।
Published : 27 Jan 2025, 08:30 AM
এবারের বিপিএলে এমনিতেই বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল দুর্বার রাজশাহী দল। রোববার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বিতর্ক-কেলেঙ্কারির আরও তলানিতে পৌঁছে যায় দলটি। ম্যাচের দিন সকালে তড়িঘড়ি করে হোটেল বদলাতে হয় দলের সবাইকে। পরে পারিশ্রমিক জটিলতায় মাঠেই আসেননি দলটির বিদেশি ক্রিকেটারদের কেউ। অথচ নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দলের একাদশে অন্তত দুজন বিদেশি রাখতেই হয়। পরে টেকনিক্যাল কমিটির বিশেষ অনুমতি নিয়ে শুধু দেশের ক্রিকেটারদের নিয়েই দল সাজায় তারা। সেই দেশি একাদশ দারুণ উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে হারিয়ে দেয় পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে থাকা দল রংপুর রাইডার্সকে। তবে ম্যাচের আগে যা কিছু হলো, সেসবের রেশ রয়েই যায়। ম্যাচের পর সেই বিব্রতকর অভিজ্ঞতা শোনালেন অধিনায়ক তাসকিন আহমেদ।
দারুণ জয়, তাহলে কি দেশি একাদশ নিয়েই খেলবেন এখন থেকে?
তাসকিন আহমেদ: (হাসি) নাহ, আসলে দেখুন, সত্যি বলতে আজকে দিনের শুরু থেকেই অনেক নাটক দেখেছি আমরা, সব ক্রিকেটাররাই। পরে শেষের দিকে আমি যতটুকু শুনেছি যে, টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে টাকা নিয়ে বিদেশি ক্রিকেটারদের রুমে নক করেছে। কেউ দরজা খোলেনি। শেষ সময়ে আমরা স্থানীয় ক্রিকেটাররাই ছিলাম।
এখন যেটা করেছি যে, ম্যানেজার-কোচ সবাই মিলে… শুরুতে সবাই আপসেট ছিল, আমরাও ছিলাম… যখন ১২০ রান হলো (১১৯) এবং আমরা ব্যাটিং করে দেখলাম যে, আজকের উইকেট এত সহজ নয়, হয়তো ১৫-২০ রানের ঘাটতি ছিল, তবে দলীয় প্রচেষ্টা, সবার অবদান আর মন থেকে চেষ্টা করে পুরস্কার পাওয়া গেছে।
ম্যাচের আগে সকালে আপনাদের হোটেল বদলাতে হয়েছে। এরকম কিছু তো নজিরবিহীন। আপনি অনেক নাটকের কথা বলছিলেন। আর কি কি হয়েছে?
তাসকিন: আমার জীবনেও নতুন একটা অভিজ্ঞতা হলো যে, ম্যাচের দিন হোটেল বদলাতে হলো। আমি যতদূর শুনেছি যে, আমাদের নাকি বুকিং দেওয়া ছিল শেরাটনে… ওয়েস্টিনে ছিল, বুকিং দেওয়ার কারণে নাকি সব রুম বুকড ছিল। পরে আমরা হোটেল বদল করলাম।
হোটেল বদল করার পর (মাঠে) যাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে শুনি, বিদেশি ক্রিকেটার কেউ যাবে না। তখন আমাদের বোর্ড থেকে আমাদের ফোন দিয়ে বলল যে, ‘অন্তত তোমরা আসো, খেলো।’ বিদেশি ক্রিকেটারদেরও ফোন করেছিল আমাদের বোর্ড থেকে। তাদেরকে বলেছে যে, ‘পেমেন্ট কোনো ইস্যু নয়, পেমেন্ট হয়ে যাবে।’ তবু তারা আসেনি।
শুরুতে আমরা মানসিকভাবে একটু ডাউন ছিলাম, ডিস্টাবর্ড ছিলাম। পরে তো দেখলেনই… জিতে গেলাম।
ম্যাচের দিন হোটেল বদলানোর অভিজ্ঞতা কি আগে কখনও হয়েছে আপনাদের?
তাসকিন: কখনও এরকম হয়নি। অনেক কিছুই নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। আমার মনে হয়, এত চাপ এত সমস্যার মধ্যে খেলাটা ভবিষ্যতে উপকারে আসবে। এত চাপের মধ্যে ভালো খেলতে পারলে খেলাটা অনেক ভালো হয়ে যায়।
খুব শক্তিশালী দল না হলেও আপনারা পাঁচটি ম্যাচ জিতে ফেললেন, প্লে-অফেও খেলতে পারেন, আপনি নিজে এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড গড়লেন। কিন্তু আপনাদের দল নিয়ে এত নেতিবাচক খবরের ভিড়। এসবে আপনার কেমন লাগছে?
তাসকিন: সত্যি বলতে, শুধু আমি নই, যখন দলে এরকম হয়, কেউই ভালো অনুভব করে না। কারণ, দিনশেষে বিপিএল আমাদের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট এবং এখানে আমাদের সবারই একটা প্রত্যাশা থাকে যে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে থেকে খেলব। কারণ, যে পরিমাণ দর্শক হচ্ছে, সব মিলিয়ে আগের তুলনায় জমজমাট বিপিএল হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দলের নানারকম সমস্যা হয়েছে।
তবে সবাই মিলে একটা কথাই বলছিলাম যে, যেহেতু আমাদের সবার নিজেদের প্রমাণ করার জায়গাই একটা, যত সমস্যা হোক, এসব একটা পাশে রেখে মাঠে উপভোগ করতে হবে। কারণ সবার জীবিকা, জাতীয় দলের আশা, নিজকে প্রমাণ করার মঞ্চই এটা। এ জিনিসগুলোই আজকে আমাদের স্থানীয় ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করছে।
অনুভূতি অবশ্যই দারুণ নয়। তবে এর মধ্য দিয়েও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
যারা টাকা না পেয়ে মাঠে আসেননি, তারা বিদেশি হলেও তো আপনার সতীর্থ। আপনার কি সহানুভূতি কাজ করছে তাদের জন্য?
তাসকিন: আসলে দেখুন, আমাদেরকেও আজকে চেক দেওয়া হয়েছে, বাকি ২৫ শতাংশ। কালকে আমরা প্লেস করব..
চেক বাউন্স হবে না তো আবার?
তাসকিন: ওটা হলে আর কী করা! আশা করি বাউন্স-টাউন্স হবে না। মিরপুরের এই উইকেটের মতো চেক বাউন্স করলে সমস্যা আছে… (হাসি)। আশা করি, এমন করবে না।
খারাপ তো লেগেছেই যে, বিদেশি ক্রিকেটার ছাড়া খেলছি। পরে শেষে আমরা বোর্ডকে অনুরোধ করেছি যে, আমাদেরকে স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে খেলার সুযোগ দেওয়া হোক। কারণ এখানে আমাদেরও তো ক্যারিয়ারের বিষয়। পরে বোর্ড রাজি হয়েছে। তবে ব্যাপারটি আমাদের জন্য সুখকর ছিল না শুরুতে। পরে ম্যাচটি জেতায় স্বস্তি পাচ্ছি।
সোমবারই আপনাদের আরেকটি ম্যাচ, ২৪ ঘণ্টাও বাকি নেই। বিদেশি ক্রিকেটারদের পাবেন?
তাসকিন: এখনও হোটেলে যাইনি। আশা করি… ম্যানেজমেন্ট যদি তাদেরকে পে করতে পারে এবং তারা যদি আসে…চাইব অবশ্যই তারা আসুক, এলে তো দলের জন্য ভালো। অন্তত দু-তিনজন বিদেশি হলেও দলটা আরেকটু শক্তিশালী হয়। তবে এখনও সেটা বলতে পারছি না, যেহেতু হোটেলে যাইনি। ম্যানেজমেন্ট পে করলে তারা আসবে হয়তো।
বিসিবি থেকে আপনাদের যে নিশ্চয়তা দিয়েছে, এটা আপনাদের জন্য স্বস্তির কি না?
তাসকিন: আমরা যখন খুব দুর্ভাবনায় ছিলাম, তখন ফারুক সাহেব (বিসিবি সভাপতি) ফোন করে আমাদেরকে নিশ্চিত করেছেন যে, ‘টাকা পেতে দেরি হলেও সমস্যা নেই। ক্রিকেট বোর্ড পে করবে। তোমরা সবাই মন দিয়ে খেলো।’ তারপর আমরা একটু স্বস্তি পেয়েছি।
আপনি কি অধিনায়ক হিসেবে বিদেশি ক্রিকেটারদেরকে অনুরোধ করেছিলেন?
তাসকিন: ম্যানেজার নাকি পয়সা নিয়েও নক করেছে। ওরা দরজা খোলেইনি। ওরা হয়তো ভেবেছে যে, এমনিই অনুরোধ করতে এসেছে।
আমি গিয়েছিলাম ওদের কাছে। ওরা বলেছে, ‘দেখো, টাকা না পেলে আমরা যাব না।’ আমি বলেছি, ‘ঠিক আছে, তোমাদের সিদ্ধান্ত।’ আমি আর কী বলব, আমিও তো একজন ক্রিকেটার!