অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের কিংবদন্তিদের তালিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে জায়গা করে নিলেন সাবেক এই অধিনায়ক।
Published : 23 Jan 2025, 11:14 AM
নান্দনিক ব্যাটিং, দুর্দান্ত সব ইনিংস, হাজার হাজার রান, স্মরণীয় সব সেঞ্চুরি, গুরুত্বপূর্ণ উইকেট আর সাহসী ও আগ্রাসী নেতৃত্ব, সব কিছু মিলিয়ে মাইকেল ক্লার্ক গ্রেটদের কাতারে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনেক আগেই। এবার সেটির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও মিলল। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ‘হল অব ফেম’ সমৃদ্ধ হলো ক্লার্ককে পেয়ে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার পদচারণা প্রায় ১৪৮ বছর ধরে। ‘হল অব ফেমে’ জায়গা পাওয়া ৬৪তম ক্রিকেটার ক্লার্ক। চলতি মৌসুমে তার সঙ্গী হবেন আরও দুজন। তাদের নাম জানানো হবে পরে।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই সম্ভাবনার ছাপ রেখে মাত্র ১৭ বছর বয়স প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ক্লার্কের। ২০০৩ সালে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২১ বছর বয়সে। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ওয়ানডেতে তিনি ছিলেন অপরাজিত (৩৯*, ৭৫*, ৫৫*)।
পরের বছর টেস্ট অভিষেক ভারত সফরে। অভিষেক টেস্টে ১৫১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন বেঙ্গালুরুতে। ওই সিরিজে নাগপুরে তার ব্যাট থেকে আসে ৯১ ও ৭৩ রানের ইনিংস। আবির্ভাবেই বড় অবদান রাখেন ভারতে অস্ট্রেলিয়ার স্মরণীয় সিরিজ জয়ে।
২০০৫ সালে অবশ্য ফর্ম হারিয়ে বাদ পড়ে যান টেস্ট দল থেকে। তবে দ্রুতই ফেরেন প্রবল প্রতাপে। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ব্যাটে-বলে-নেতৃত্বে রাঙিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট।
১১৫ টেস্ট খেলে ৪৯.১০ গড়ে ৮ হাজার ৬৪৩ রান করেছেন তিনি, সেঞ্চুরি ২৮টি। তার চেয়ে বেশি রান ও সেঞ্চুরি আছে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ইতিহাসে স্রেফ পাঁচজনের।
ষষ্ঠ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন তিনি ২০১২ সালে। ভারতের বিপক্ষে সিডনিতে খেলেন ৩২৯ রানের ইনিংস। ওই সিরিজে আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরিসহ ওই বছর তিনি মোট চারবার দুইশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন। এক পঞ্জিকাবর্ষে চারটি দ্বিশতকের একমাত্র কীর্তি সেটি এখনও।
এছাড়াও ২০১১ সালে কেপ টাউনে দলের ২৮৪ রানের মধ্যে একাই ১৫১ রানের ইনিংস, একই ভেন্যুতে ২০১৪ সারে ১৬১ রানের ইনিংস, ওই বছরই ফিল হিউজের মৃত্যুর পর ভারতের বিপক্ষে আবেগময় সেঞ্চুরি, এমন অনেক স্মরণীয় ইনিংস এসেছে তার ব্যাট থেকে।
আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে সেরা ব্যাটসম্যানও ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে দেশের মাঠে অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়ের পর রিকি পন্টিংকে সরিয়ে নেতৃত্ব দেওয়া হয় ক্লার্ককে। তার নেতৃত্বে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠে দল। ২০১৩-১৪ অ্যাশেজে তার নেতৃত্বেই ইংলিশদের হোয়াইটওয়াশ করে অস্ট্রেলিয়া।
ওয়ানডেতেও তিনি ছিলেন সমান সফল। ২৪৫ ওয়ানডে খেলে ৪৪.৫৮ গড়ে প্রায় ৮ হাজার রান করেন তিনি ৮ সেঞ্চুরি ও ৫৮ ফিফটিতে। অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান স্কোরার তিনি। ২০১৫ সালে তার নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জয় করে অস্ট্রেলিয়া।
ডানহাতি ব্যাটসম্যান হলেও বোলিং করতেন তিনি বাঁহাতে। তার বাঁহাতি স্পিন ছিল বেশ কার্যকর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯৪টি উইকেট নিয়েছেন। অভিষেক সিরিজে মুম্বাইয়ে মাত্র ৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে চমকে দিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতের বিপক্ষে সিডনি টেস্টে একদম শেষ সময়ে দুই ওভারে তিন উইকেট নিয়ে নাটকীয় জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি অস্ট্রেলিয়াকে।
ওয়ানডেতেও তিনি বল হাতে ম্যাচে পাঁচ উইকেট, চার উইকেট নিয়েছে। মাঠের যে কোনো জায়গায় ফিল্ডার হিসেবে তিনি ছিলেন তার সময়ের বিশ্বসেরাদের একজন। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ক্যাচ নিয়েছেন ২৫৩টি।
২০১৫ অ্যাশেজে হারার পর ৩৪ বছর বয়সে আচমকাই তিনি বিদায় জানান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে।
‘হল অব ফেমে’ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের আরও অনেক কিংবদন্তির পাশে নিজেকে দেখে দারুণ রোমাঞ্চিত ৪৩ বছর বয়সী এই তারকা।
“এত অসাধারণ সব ক্রিকেটার, যাদের অনেকেই আমার আদর্শ, ছেলেবেলা থেকে যাদের মতো হতে চেয়েছি এবং অনুসরণ করেছি, তাদের পাশে জায়গা পাওয়া আমার জন্য দারুণ সম্মানের।”
“অবসর জীবন একজন মানুষের মধ্যে অনেক কিছু বয়ে আনে। এখন ক্রিকেট দেখার নানা পর্যায়ে খেলাটা কিছুটা মিস করি। সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেললে লোকে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের কথাই বলে। তবে আমার তো ক্রিকেটের শুরুটা হয়েছিল সেই ছয় বছর বয়সে। এটাই তাই আমার জীবন। এখনও ক্রিকেট আমার জীবনের অংশ।”