সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হ্যাটট্রিক হারের স্বাদ দিয়ে চার ম্যাচে তৃতীয় জয়ের দেখা পেল ফরচুন বরিশাল।
Published : 07 Jan 2025, 09:38 PM
বিপিএলে সিলেট পর্বের প্রথম দিনেও দর্শক আগ্রহ ছিল তুমুল। তবে দ্বিতীয় দিনে দর্শকের ভিড় আরও বেশি। সিলেট স্ট্রাইকার্সের ম্যাচ যখন শুরু হচ্ছে, গ্যালারিতে তখন যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। চার-ছক্কা তো বটেই, এক-দুই রানেও গর্জন উঠছিল মাঠে। কিন্তু সেই দর্শকদের উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ্য খুব একটা এনে দিতে পারল না স্থানীয় দল। ব্যাটে-বলে আরেকটি অনুজ্জ্বল প্রদর্শনীতে তারা হেরে গেল টানা তৃতীয় ম্যাচ।
কাগজে-কলমে শক্তি-সামর্থ্যে অনেক এগিয়ে থাকা ফরচুন বরিশাল মাঠের ক্রিকেটেও বুঝিয়ে দিল সেই পার্থক্য। দাপুটে পারফরম্যান্সে ৭ উইকেটে জিতে গেল গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা। চার ম্যাচে যেটি তাদের তৃতীয় জয়।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেট অলআউট হয় ১২৫ রানে। বরিশাল জিতে যায় মাত্র ১০.৩ ওভারেই।
বরিশালের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা দুই বোলার জাহান্দাদ খান ও রিশাদ হোসেন শিকার করেন তিনটি করে উইকেট। পরে রান তাড়ায় দুই ওপেনারকে দ্রুত হারালেও ঝড়ে বেগে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন কাইল মেয়ার্স ও তাওহিদ হৃদয়। ৫১ বলে ১১৬ রানের বিধ্বংসী জুটি গড়েন দুজন।
শুরুতে সমানে সমান
আগের দিন ফিফটি করা রনি তালুকদার এবার বিদায় নেন শূন্যতে। ম্যাচের তৃতীয় বলেই কাইল মেয়ার্সের শিকারে পরিণত হন তিনি। প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা রাকিম কর্নওয়াল নিজেকে জানান দেন দ্রুতই। দ্বিতীয় ওভারেই তিন দফায় তিনি বাউন্ডারিতে পাঠান শাহিন শাহ আফ্রিদিকে।
আফ্রিদি অবশ্য পরের ওভারেই শোধ তোলেন। বল আকাশে তুলে বিদায় নেন কর্নওয়াল (১১ বলে ১৮)।তবে জর্জ মানজি ক্রিজে গিয়েই চার বলের মধ্যে ছক্কা মারেন দুটি, চার একটি। আফ্রিদির ওই ওভার থেকে রান আসে ২১।
অষ্টম বলে রানের খাতা খোলা জাকির হাসান দ্রত দুটি বাউন্ডারি আদায় করে নেন তানভির ইসলামের বলে। পাওয়ার প্লে শেষ করেন তিনি ফাহিম আশরাফকে টানা দুটি বাউন্ডারিতে।
পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারালেও ৬০ রান তোলে সিলেট।
নাটকীয় ধস
৮ ওভার শেষ সিলেটের রান ছিল ৭৬। এরপরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে তাদের ইনিংস।
জাহান্দাদ খান আক্রমণে এসেই বদলে দেন ম্যাচের গতিপথ। মানজিকে (১৩ বলে ২৮) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তিনি প্রথম বলেই। পাকিস্তানি এই বাঁহাতি পেসার এক বল পরই বিদায় করেন অ্যারন জোন্সকে।
আরেক থিতু ব্যাটসম্যান জাকির হাসান পরের ওভারে আউট হন রিশাদের বলে। ২৬ বল খেলে রান করতে পারেন তিনি ২৫।
জাহান্দাদ যখন জাকের আলিকে বোল্ড করে দিলেন ১ রানে, সিলেটের লড়িয়ে রানের আশা শেষ অনেকটা সেখানেই।
১৩ রানের মধ্যে সিলেট হারায় ৬ উইকেট।
পরে অধিনায়ক আরিফুল হকের ৩ ছক্কায় ২৯ বলে ৩৬ রানের ইনিংস সিলেটকে নিতে যায় ১২৫ পর্যন্ত।
সিলেটের তিন ব্যাটসম্যান আউট হন শূন্য রানে, তিন ব্যাটসম্যান এক রানে।
পেস-স্পিনের যুগলবন্দি
আগের দিন বিপিএল অভিষেকে খরুচে বোলিং করে উইকেটশূন্য ছিলেন জাহান্দাদ খান। দ্বিতীয় ম্যাচেই তিন উইকেট নিয়ে তিনি ম্যাচের সেরা।
গত বছর টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড উইকেট শিকারি রিশাদ বিপিএলের প্রথম দুই ম্যাচে ছিলেন একাদশের বাইরে। তৃতীয় ম্যাচে ফিরে উইকেট পাননি। দল তাকে ধরে রাখে একাদশে। তিনিও প্রতিদান দিলেন ১৫ রানে তিন উইকেট নিয়ে।
নতুন বলে কাইল মেয়ার্সের দুই ওভারও ছিল কার্যকর।
কিপার-চমক
ঢাকা পর্বের শেষ ম্যাচে চোট পাওয়া মুশফিকুর রহিম সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচে কিপিং করতে পারেননি। ওই ম্যাচের একাদশে রাখা হয় কিপার প্রিতম কুমারকে। তাকে জায়গা দিতে সেদিন একাদশের বাইরে থাকতে হয় নাজমুল হোসেন শান্তকে। এই ম্যাচে প্রিতমকে বাইরে রেখে শান্তকে ফেরানো হয় কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে। স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথমবার কোনো ম্যাচ কিপার হিসেবে শুরু করলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক।
শুরুর ধাক্কা
বরিশালের রান তাড়ার শুরুটা ছিল নাটকীয়। আগের দিন অপরাজিত ৮৬ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা তামিম ইকবাল এবার আউট হয়ে যান ইনিংসের প্রথম বলেই। রাকিম কর্নওয়ালের বল বরিশাল অধিনায়কের গ্লাভসে আলতো চুমু দিয়ে আশ্রয় নেয় কিপারের গ্লাভসে। টি-টোয়েন্টিতে তার ষষ্ঠ 'গোল্ডন ডাক' এটি।
ব্যাটিংয়ে ভালো কিছুর আশায় কিপার বানানো হয়েছে যাকে, সেই শান্ত বিদায় নেন ৪ রানে।
প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেট হারায় বরিশাল।
বিধ্বংসী মেয়ার্স-হৃদয়
দ্রুত দুটি উইকেটের পতনে সিলেটের গ্যালারি তখন টগবগ করে ফুটছে যেন। তবে দ্রুতই সেই দর্শকদের চুপ করিয়ে দেন কাইল মেয়ার্স ও তাওহিদ হৃদয়। তৃতীয় ওভারেই কর্নওয়ালকে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন মেয়ার্স। হৃদয়ও হাত খোলেন দ্রুতই। রান আসতে থাকে স্রোতের মতো।
আল আমিন হোসেনের ওভারে ১৮, রিস টপলির ওভারে ১৪, তানজিম হাসানের ওভারে ২১, নবম ওভারেই বরিশাল পৌঁছে যায় শতরানে। পরে রুয়েল মিয়ার এক ওভারে ১৮ রান তুলে তারা এগিয়ে যায় জয়ের দিকে।
জয় থেকে চার রান দূরে হৃদয় আউট হয়ে যান ২৭ বলে ৪৮ রান করে। ৩১ বলে ৫৯ রান করে অপরাজিত থাকেন মেয়ার্স।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ১৮.২ ওভারে ১২৫ (রনি ০, কর্নওয়াল ১৮, জাকির ২৫, মানজি ১৮, জোন্স ০, জাকের ১, আরিফুল ৩৬, তানজিম ১, রুয়েল ১, টপলি ৫*, আল আমিন ০; মেয়ার্স ২-১-৬-১, আফ্রিদি ৪-০-৪০-১, তানভির ১-০-৮-০, ফাহিম ৩.২-০-২৩-২, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১০-০, জাহান্দাদ ৩-০-১৮-৩, রিশাদ ৪-১-১৫-৩)।
ফরচুন বরিশাল : ১০.৩ ওভারে ১২৬/৩ (তামিম ০, শান্ত ৪, মেয়ার্স ৫৯*, হৃদয় ৪৮, জাহান্দাদ ৪*, মুশফিক ৩৪*; কর্নওয়াল ২-০-১৬-১, তানজিম ৩.৩-০-৩৭-২, টপলি ২-০-২৫-০, আল আমিন ২-০-২৫-০, রুয়েল ১-০-১৮-০)।
ফল: ফরচুন বরিশাল ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: জাহান্দাদ খান।