রাঁচি টেস্টে শুরুর ধাক্কা সামলে প্রথম দিনে তিনশ ছাড়িয়ে গেছে ইংল্যান্ড।
Published : 23 Feb 2024, 05:00 PM
৯৯ থেকে আকাশ দিপের অফ স্টাম্পের বাইরের বল চমৎকার কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারিতে পাঠালেন জো রুট। ড্রেসিং রুমের বারান্দায় বসে বেন স্টোকস মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত সামনে নিয়ে হুঙ্কার ছাড়লেন। উঠে দাঁড়িয়ে হাত ছুড়লেন বাতাসে। তার এত উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ যিনি, সেই রুটের উদযাপন হলো অবশ্য সাদামাটা, হেলমেটের ব্যাজে চুমু আঁকার পর উইকেটের সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরলেন। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের এই সেঞ্চুরি যতটা না আনন্দের, তার চেয়ে বেশি যে স্বস্তির!
চলতি ভারত সফরে প্রথম তিন টেস্টে ব্যাট হাতে ভালো করতে না পারায় প্রচণ্ড চাপে ছিলেন রুট। বিশেষ করে রাজকোটে তৃতীয় টেস্টে রিভার্স স্কুপ করে উইকেট বিলিয়ে আসায় দেশের সাবেক ক্রিকেটারদের সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন তিনি। অবশেষে পেলেন বড় রানের দেখা। রাঁচিতে চতুর্থ টেস্টের প্রথম দিন চাপের মুখে সহজাত ব্যাটিংয়ে দারুণ সেঞ্চুরি উপহার দিলেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক।
দিনের শুরতে আলো ছড়ান ভারতের অভিষিক্ত পেসার আকাশ দিপ। দুর্দান্ত প্রথম স্পেলে প্রথম ঘন্টায় ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন তিনি। একটা পর্যায়ে ১১২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় সিরিজে পিছিয়ে থাকা ইংল্যান্ড।
সেখান থেকে সফরকারীরা দিন শেষ করেছে ৭ উইকেটে ৩০২ রানে। ২২৬ বলে ৯ চারে ১০৬ রানে অপরাজিত আছেন রুট।
ভারতের বিপক্ষে সাদা পোশাকে ৫২ ইনিংসে তার দশম সেঞ্চুরি এটি। দলটির বিপক্ষে কোনো ব্যাটসম্যানের যা সর্বোচ্চ। রুট পেছনে ফেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথকে (৯)।
এ দিন ধৈর্য আর স্কিলের দারুণ প্রদর্শনী মেলে ধরেন রুট। পেস বোলারদের পাশাপাশি স্পিনারদের সামলান দারুণভাবে। ঝুঁকি নিয়ে শট খেলেননি। রিভার্স-সুইপ করেন মাত্র একটি।
ক্যারিয়ারের ৩১তম টেস্ট সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন তিনি ২১৯ বলে। এর চেয়ে বেশি বলে তার সেঞ্চুরি আছে আর কেবল দুটি- ২০১৩ সালে লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৪৭ বলে ও ২০১৯ সালে হ্যামিল্টনে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৫৯ বলে।
ম্যাচের একদিন আগে ইংলিশ অধিনায়ক স্টোকস বলেছিলেন, রাঁচির উইকেট স্পিন স্বর্গ হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। প্রথম দিনে স্পিনারদের বলে তেমন টার্ন অবশ্য দেখা যায়নি। কিছু বল নিচু হয়েছে। দিনের শুরুতে পেসারদের জন্য সহায়তা ছিল কিছুটা। তবে সময় যত গড়িয়েছে, ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো ছিল উইকেট।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে ইংল্যান্ড। জাসপ্রিত বুমরাহর বিশ্রামে সুযোগ পাওয়া আকাশ ম্যাচের চতুর্থ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট পেতে পারতেন। তার ডেলিভারি এলোমেলো করে দেয় জ্যাক ক্রলির স্টাম্প। কিন্তু আকাশ 'ওভারস্টেপ' করায় 'নো' বলের কল্যাণে বেঁচে যান ব্যাটসম্যান।
সুযোগ কাজে লাগিয়ে সপ্তম ওভারে মোহাম্মদ সিরাজের টানা চার বলে তিনটি চারের পর একটি ছক্কা মারেন ক্রলি। প্রথম ৯ ওভারে বিনা উইকেটে আসে ৪৭ রান। এরপরই জোড়া ধাক্কা খায় ইংলিশরা।
আকাশ একই ওভারে তিন বলের মধ্যে ফিরিয়ে দেন বেন ডাকেট ও অলিভার পোপকে। তার দারুণ ডেলিভারিতে খোঁচা দিয়ে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন বাঁহাতি ডাকেট। পোপ হন এলবিডব্লিউ। ভারত এই সাফল্য পায় রিভিউ নিয়ে।
২৭ বছর বয়সী আকাশ নিজের পরের ওভারে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য ভেতরে ঢোকানো চমৎকার ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন ক্রলিকে। ৪২ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় ৪২ রান করেন এই ওপেনার ।
বিনা উইকেটে ৪৭ থেকে ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৫৭!
জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে সেই ধাক্কা সামাল দেন রুট। রবিচন্দ্রন অশ্বিন আক্রমণে আসার পর তার প্রথম ওভারে ছক্কা মারেন বেয়ারস্টো। অশ্বিনের পরের ওভারে মারেন চার। পরের বলেই সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন বেয়ারস্টো (৩৮ বলে ৩৫), ভাঙে ৫৭ বলে ৫২ রানের জুটি। এই উইকেটটিও রিভিউ নিয়ে পায় ভারত।
বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে দারুণ এক কীর্তি গড়েন অশ্বিন। ভারতের প্রথম ও বিশ্বের সপ্তম ক্রিকেটার হিসেবে কোনো একটি দলের বিপক্ষে এক হাজার রান ও ১০০ উইকেটের ডাবল স্পর্শ করেন তিনি।
স্টোকসকে বিদায় নেন দ্রুতই। লাঞ্চ বিরতির আগে বাঁহাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার নিচু হওয়া ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় সেশনে জুটি বেঁধে দলের স্কোর দুইশ পার করেন রুট ও বেন ফোকস। দুজনই ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে পড়ে থাকেন উইকেটে। সিরিজে প্রথমবার উইকেট না হারিয়ে কোনো সেশন কাটিয়ে দেয় ইংল্যান্ড।
একটা পর্যায়ে ফোকসের রান ছিল ১১৭ বলে ৩১। পরের চার বলে অশ্বিনকে একটি ছক্কা ও দুটি চার মারেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। পরের ওভারেই তাকে ফিরিয়ে ২৬১ বল স্থায়ী ১১৩ রানের জুটি ভাঙেন সিরাজ। শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দেন ব্যাটসম্যান।
সিরাজ পরে দারুণ ডেলিভারিতে টম হার্টলিকে বোল্ড করে ধরেন দ্বিতীয় শিকার। তখন ২৪৫ রানে ৭ উইকেট নেই ইংল্যান্ডের।
রুটের রান ছিল তখন ৮২। অলি রবিনসনের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিন অঙ্কের ঘরে পা রাখেন তিনি। ৫৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিনের খেলা শেষ করেন এই দুজন।
চোট কাটিয়ে গত জুলাইয়ের পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে খেলতে নামা পেসার রবিনসন ৬০ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩১ রানে অপরাজিত আছেন।
সিরিজে প্রথম তিন টেস্টের ৬ ইনিংসে রুটের রান ছিল মোটে ৭৭। এবার এক ইনিংসেই সেটি ছাড়িয়ে স্বরূপে ফিরলেন ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৩০২/৭ (ক্রলি ৪২, ডাকেট ১১, পোপ ০, রুট ১০৬* বেয়ারস্টো ৩৮, স্টোকস ৩, ফোকস ৪৭, হার্টলি ১৩, রবিনসন ৩১*; সিরাজ ১৩-৩-৬০-২, আকাশ ১৭-০-৭০-৩, জাদেজা ২৭-৭-৫৫-১, অশ্বিন ২২-১-৮৩-১, কুলদিপ ১০-৩-২১-০, জয়সওয়াল ১-০-৬-০)